মানুষের যেসব অঙ্গের মাধ্যমে গোনাহ সংঘটিত হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মুখ। যে ব্যক্তি মুখ সংযত রাখতে পারবে, অনেক কবিরা গোনাহ থেকে তার বেঁচে থাকা সম্ভব হবে। মুখের কথার প্রভাব খুবই শক্তিশালী। চাই সেটা ভালো হোক বা মন্দ। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিশৃঙ্খল পরিবেশের পেছনে মানুষের মুখের অসংযত কথাই প্রধানত দায়ী। আজকে মুখ দ্বারা হওয়া ৫টি পাপের কথা উল্লেখ করা হলো, যেন মুমিন-মুসলমানরা এমন পাপ থেকে বাঁচতে পারে।
কথা চালাচালি
বিশ্বস্ততা জীবনে খুব জরুরি। কেউ হয়তো আপনাকে বিশ্বাস করে কোনো কথা বলেছে। আপনি যদি সেই কথা অন্যকে বলে দেন, তাহলে এটি আপনার বাজে অভ্যাস। যখন আপনাকে বিশ্বাস করে বলেছে, তা রক্ষার দায়িত্ব আপনার। যদি মনে করেন আপনি বলে দিতে পারেন, তাহলে এ ধরনের কথা শোনা থেকে বিরত থাকুন।
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ওহে! আমি কি তোমাদের জানাব চোগলখুরি কী? চোগলখুরি হচ্ছে- ‘মানুষের মধ্যে কথা চালাচালি।’ -সহিহ্ মুসলিম
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও ঘোষণা করেছেন, ‘চোগলখোর ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ -সহিহ্ বোখারি
বেশি কথা বলা
বাচালতা নিজের ব্যক্তিত্বের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত কথা মানুষকে প্রায়ই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে। তাছাড়া কথা দীর্ঘ করলে, আসল কথা হারিয়ে যেতে পারে।
যদি মনে করেন আপনি বেশি কথা বলছেন, তাহলে বলার সময় সচেতন থাকুন। আপনজনদের বলে রাখুন, কথা বলার সময় খেয়াল করতে; আপনি বেশি বলছেন কি-না। তাহলে থামিয়ে দিতে কিংবা বিরক্তি প্রকাশ করতে। অনর্থক কথা না বলে সার কথাটুকু বলুন। দেখবেন যা বলছেন সবাই তা মনযোগ দিয়ে শুনছে। চেষ্টা করুন যা ঘটেছে বা যা সত্য তাই বলতে।
কোরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষ যে কথাই বলুক না কেন, তার কাছে একজন তৎপর প্রহরী প্রস্তুত থাকেন।’ -সুরা কাফ : ১৮
কোরআন মজিদে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনরা, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের নামাজে। যারা অসার ক্রিয়াকলাপ কিংবা নিরর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে।’ -সুরা আল মুমিনুন : ১-৩
আঘাত দিয়ে কথা বলা
আপনি স্পষ্টবাদী, এর অর্থ এই নয় যে অন্যকে আঘাত দিয়ে কথা বলবেন। কেউ আপনার মতো নাও হতে পারে। মনে রাখবেন, অন্যকে আঘাত দেওয়ার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই। অনেক কঠিন কথাও অনেক সুন্দর করে বলা সম্ভব। এ অভ্যাস রপ্ত করুন। কথা বলার সময় সচেতন থাকুন যেন আপনার কথায় কেউ কষ্ট না পায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘কোনো মুমিন তিরস্কারকারী, অভিশাপকারী, গালিগালাজকারী, খারাপ-মন্দ উচ্চারণকারী হতে পারে না।’
আরবি প্রবাদে আছে, ‘তীরের ক্ষত শুকিয়ে যায়, তবে মুখের কথার আঘাত শুকায় না।’
অন্যকে বলতে না দেওয়া
অনেকেই একতরফা কথা বলতে থাকেন। অথচ আলোচনা কিংবা আড্ডার সময় অন্যের কথাও শুনতে হয়, বলার সুযোগ দিতে হয় এ খেয়াল থাকে না। যেকোনো আলোচনা কিংবা আড্ডায় ভালো শ্রোতার কদর অনেক। আগে অন্যের কথা শুনে তারপর বলুন।
খেয়াল রাখুন, অন্যরা বলার সুযোগ পাচ্ছে কি না। নিজে কম কথা বলে অন্যকে বলতে দিন। কোরআন মজিদে বলা হয়েছে, ‘তুমি পদক্ষেপ করবে সংযতভাবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করবে, কেননা স্বরের মধ্যে গর্দভের স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ -সুরা লুকমান : ১৯
কথা না রাখা
অনেকেই আছেন কথা দেওয়ার সময় হয়তো না বুঝেই কথা দিয়ে ফেলেন। পরবর্তীতে রক্ষা করতে পারেন না। তেমনি সবসময় কোনো অনুষ্ঠানে কিংবা মিটিংয়ে দেরি করে পৌঁছানোরও অভ্যাস। দেরি করে আসার কারণে অনেকেই হয়তো বিরক্ত হন এবং বিড়ম্বনায় পড়েন।
মনে রাখবেন, খেয়ালের বশে কখনো কাউকে কথা দেবেন না। কথা দেওয়ার সময় সচেতন থাকুন, আপনি রক্ষা করতে পারবেন তো? কথা দেওয়ার পর যদি বুঝতে পারেন, আপনি রাখতে পারবে না তবে আগেভাগেই জানিয়ে দিন। যাতে আপনার জন্য কারও অসুবিধা না হয়। সময়ানুবর্তিতা জীবনের জন্য জরুরি বিষয়। কোনো অনুষ্ঠানে কিংবা মিটিংয়ে যোগ দেওয়ার জন্য সবসময় হাতে সময় নিয়ে বের হবেন। যাতে নির্দিষ্ট সময় পৌঁছাতে পারেন।
কোরআনে করিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা কেন এমন কথা বলো যা কাজে পরিণত করো না, এটি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত জঘন্য ও ঘৃণিত কাজ যে তোমরা বলো এমন কথা যা করবে না।’ -সুরা সাফ : ২-৩
হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ধ্বংস তার জন্য! ধ্বংস তার জন্য! ধ্বংস তার জন্য! যে ওয়াদা করল এরপর তা রক্ষা করল না।’ -মুজামুল আওসাত