আমাদের যখন কোনো জিনিসের দরকার হয় তখন অপর মুসলিম ভাইদের জন্য ওই জিনিসটার দোয়া করব। তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের মাথার ওপর একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেবেন। সেই ফেরেশতা আমার জন্য দোয়া করতে থাকবেন, বলবেন- আল্লাহ তোমাকেও অনুরূপ দান করুন।
হজরত আবুদ দারদা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার পেছনে (অজ্ঞাতে) দোয়া করে তখন তার সঙ্গে নিযুক্ত ফেরেশতা বলতে থাকেন, আল্লাহতায়ালা তোমাকেও অনুরূপ দান করুন। আল্লাহ তোমাকেও অনুরূপ দান করুন। -সহিহ মুসলিম : ২৭৩২
বর্ণিত হাদিস থেকে স্পষ্ট, যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য তার অনুপস্থিতিতে দোয়া করবে, ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করবেন। আর ফেরেশতারা হলেন নিষ্পাপ, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা। সুতরাং তাদের দোয়া কবুল হওয়াই স্বাভাবিক।
আরেক হাদিসে বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। উম্মুদ দারদা (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের জন্য তার অগোচরে যে দোয়া করা হয় ওই দোয়া কবুল। অগোচরে দোয়াকারীর মাথার নিকট একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন। যখনই সে আপন ভাইয়ের জন্য দোয়া করে তখনই নিয়োজিত ফেরেশতা বলেন, আল্লাহ কবুল করুন এবং তোমাকেও অনুরূপ দান করুন। -সহিহ মুসলিম : ২৭৩৩
সাধারণ অভ্যাস হিসেবে, আমাদের কাছে নানা সময় নানা ব্যক্তি দোয়া চেয়ে থাকেন। তাত্ক্ষণিক হয়তো তার জন্য দোয়া করা হয়। কিন্তু নীরবে নিভৃতে যখন আমরা আল্লাহর কাছে হাত তুলি, ব্যাপকভাবে আমরা সবার জন্য দোয়া করি সাধারণত; কারও জন্য বিশেষভাবে তার প্রয়োজনের জন্য দোয়া করার প্রবণতা, আমাদের খুব কমই রয়েছে।
আমরা শুধু নিজের জন্যই আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করি। অথচ একজন মুসলমানের অনন্যতা এখানেই যে সে অন্যের জন্য ওই জিনিস পছন্দ করবে যারা সে নিজের জন্য ভালোবাসে।
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা যা পছন্দ করো, তা অন্য ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করবে। আরো বর্ণনায় আছে, প্রতিবেশীর জন্যও পছন্দ করবে। -সহিহ মুসলিম : ৭৪
অপরের জন্য দোয়া করার মধ্যে শুধু সেই ব্যক্তিরই কল্যাণ নয়; বরং যিনি তার জন্য দোয়া করছেন তাকেও আল্লাহতায়ালা সে রকম দান করবেন। বরং তার দোয়াটা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি। কেননা সে যখন অপরের জন্য দোয়া করবে তখন একজন ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করবে। আর ফেরেশতার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেশি থাকে। যা লেখার শুরুতে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
আমাদের পূর্বসূরি অলি-আউলিয়ারা নিজেদের কোনো প্রয়োজন হলে তখন কোনো মুসলিম ভাইয়ের জন্য সেই দোয়া করতেন এই আশায় যে আল্লাহতায়ালা তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। সাহাবায়ে কেরামের মাঝেও এই আমল পাওয়া যায়।
এ জন্য আলেমরা বলেন, নিজের একান্ত কোনো প্রয়োজনের ক্ষেত্রে হলে সে জিনিস অন্যের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে থাকে। তখন আল্লাহতায়ালা তার সেই প্রয়োজন পূরণ করে দেন।