এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ভবিষ্যত বংশধরদের স্বার্থে উত্তম নারী গ্রহণ করো এবং ‘কুফু’ বিবেচনায় বিয়ে করো, আর বিয়ে দিতেও ‘কুফুর’ প্রতি লক্ষ্য রাখো।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ : ১৯৬৮
বর্ণিত হাদিসে ‘কুফু’ শব্দের অর্থ হলো, সমান, সমতুল্য, সমতা ও সমকক্ষ ইত্যাদি।
ইসলামি পরিভাষায় বর-কনের দ্বীন-দুনিয়ার যাবতীয় কিছুতে সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ‘কুফু’ বলে।
প্রশ্ন হলো, বিয়ের ক্ষেত্রে ‘কুফু’ কেন গুরুত্বপূর্ণ? আসুন একটি উদাহরণ দেখি- মনে করুন, ‘ক’ একজন দ্বীনদার মেয়ে এবং ‘খ’ একজন বেদ্বীন ছেলে। একজন দ্বীনদার, অপরজন বেদ্বীন; দু’জনের মধ্যে ‘কুফু’ নেই। তারপরও দু’জনের বিয়ে হলো, মেয়েটি যেহেতু দ্বীনদার তাই সে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার দ্বীনকে টেনে আনে, চায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্বীনের ছাপ থাকুক। অপরদিকে বেদ্বীন ছেলেটি চায় দুনিয়ার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে, তার চাওয়া সবকিছুই হোক দ্বীনের বাঁধনমুক্ত। ফলস্বরূপ সংসারে অশান্তি। শেষ পরিণতি ‘তালাক।’
এবার আরেকটি উদাহরণ দেখা যাক। মনে করুন, আপনার মাসিক আয় দশ হাজার টাকা। আর আপনি এমন কাউকে বিয়ে করলেন যার বাবার মাসিক আয় ছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা। অর্থনৈতিক অবস্থানে ‘কুফু’ নেই। কি মনে হয় সুখে থাকবেন? না।
অতএব, আপনার রোজগার দশ হাজার টাকা হলে আপনার বিয়ে করা উচিত এমন কাউকে যে, এর মধ্যেই মানিয়ে চলতে পারবে। নয়তো বিয়ের পর শুনতে হতে পারে, ‘ভুল করেছি তোমায় বিয়ে করে, দাও এবার আমার হাতটি ছেড়ে।’
তাই সবদিক দিয়ে নিজের চলাফেরা, পোশাক-আশাক, বাড়ি-ঘর ও থাকা-খাওয়ার মান যেমন, ঠিক সেই সমমানের পাত্রী পছন্দ করা উচিৎ। এতে কেউ কারও ওপর গর্ব প্রকাশ করবে না, খোঁটা দেবে না; ভালোবাসার গতিও বাধাগ্রস্ত হবে না।
এক কথায় প্রায় সব বিষয়ে ‘কুফু’ বিবেচনা করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসা উচিত। নচেৎ পরবর্তী সময়ে ‘ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাতে পারে।’
যদি সবকিছুতেই ‘কুফু’ মিলে যায়, তবে তো সোনায় সোহাগা এবং এমন দাম্পত্য হবে চিরসুখের। পক্ষান্তরে কিছু না পেলেও যদি শুধুই দু’জনের মধ্যেই দ্বীনদারী থাকে তবে সুখের জন্য এটাই যথেষ্ট। দ্বীনদারদের তো সবকিছুই আশ্চর্যের, তারা সর্বাবস্থায় সুখ-শান্তি খুঁজে নিতে পারে।
অনেকে বলতে পারেন, কোনো ব্যাপার না। বিয়ে করে মেয়েকে দ্বীনদার বানিয়ে নেব। ভাই, এটা স্রেফ একটি শয়তানের ধোঁকা, উল্টোও তো হতে পারে! দেখা গেল দ্বীনদার বানাতে গিয়ে আপনিই বেদ্বীন হয়ে গেলেন।
হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের কৃতজ্ঞ অন্তর ও জিকিরকারী জিহ্বা হওয়া উচিৎ। আর এমন মুমিন স্ত্রী গ্রহণ করা উচিৎ, যে তার আখেরাতের কাজে সহায়তা করবে।’ -ইবনে মাজাহ : ১৮৫৬
আখেরাতের কাজে সহযোগিতা করার জন্য স্বামী-স্ত্রীর ‘কুফু’ থাকতে হবে। স্ত্রীকে অবশ্যই দ্বীনদারিতে স্বামীর বরাবর বা কাছাকাছি হতেই হবে। নচেৎ সে আখেরাতের কাজে সহায়তার থেকে বাধা বেশি দেবে এবং অনেকক্ষেত্রে শরিয়তবিরোধী কাজ করে আপনাকে জাহান্নামের পথেও টানবে। স্ত্রী যদি বেশি দ্বীনদার হয় তবে স্বামীর ক্ষেত্রেও একই।