মানুষ সামাজিক জীব। বলা হয়, সঙ্গী ছাড়া মানবজীবন অতিবাহিত করা সম্ভব নয়। ভালো সঙ্গী জীবনকে সাফল্যের দিকে পরিচালিত করে এবং কঠিন পরিস্থিতিতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে খারাপ সঙ্গী মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও আচরণ নষ্ট করে। ফলে মানবজীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই ইসলাম বন্ধু নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।’ -সুরা আলে ইমরান : ২৮
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ পাপে জড়ায় সঙ্গী নির্বাচনে অসর্তকতায়। সেই সঙ্গে যথাযথ দিকনির্দেশনার অভাব, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা, ইসলামি জ্ঞানের স্বল্পতা ও পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞতাও রয়েছে।
ইসলাম মনে করে, প্রতিটি শিশু নিষ্পাপ অবস্থায় জন্ম নেয়। মা-বাবা, পরিবার ও পরিবেশের প্রভাবে ভালো-মন্দের পার্থক্য বোঝার ক্ষমতা গড়ে ওঠে। একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে শৈশব থেকে পরিবারের পক্ষ থেকে নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক সন্তান ইসলামি ফিতরাতের (স্বভাব) ওপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মা-বাবা তাকে ইহুদি, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। -সহিহ বোখারি : ১৩৫৮
অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) শিশুদের প্রতি স্নেহ, ভালো ব্যবহার, সদাচরণ ও শিষ্টাচার শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। অতএব, অভিভাবকদের উচিত শৈশব থেকেই শিশুদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করা।
আলেমরা বলেন, দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা সব পাপের মূল। মানুষের মনে দুনিয়ার মোহ আল্লাহকে ভুলিয়ে দেয় এবং তাকে পাপ কাজে লিপ্ত করে। তাই মুমিন ব্যক্তির দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, টাকা-পয়সার পূজারিরা ধ্বংস হোক। পোশাকবিলাসী ধ্বংস হোক। তাকে দিতে পারলে খুশি হয়, দিতে না পারলে রাগান্বিত হয়। -মিশকাত : ৫১৬১
আরেকটি কথা, ইসলামি শিক্ষা মানুষের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও মানবিক গুণাবলি জাগিয়ে তোলে। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের সমাজে আমরা ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েছি। দুনিয়াবি শিক্ষার জন্য আমরা যত অর্থ ও সময় ব্যয় করি, ইসলামি শিক্ষার ক্ষেত্রে তার সামান্যতম করি না। এ কারণে আমাদের ছেলে-মেয়ে ও ভাই-বোন পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। -সহিহ বোখারি : ৬৬৫৩
প্রবৃত্তির অনুসরণে অস্থায়ী এই দুনিয়ায় ক্ষণস্থায়ী লাভবান হওয়া যায়, কিন্তু এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়ংকর। প্রবৃত্তির অনুসরণে হাশরের ময়দানে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি সফলকাম হয়েছে, যে ইসলাম গ্রহণ করল এবং তাকে প্রয়োজনমাফিক রিজিক প্রদান করা হলো এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট রেখেছেন। -মিশকাত : ৫১৬৫