গুজব থেকে সাবধান, গুজব ছড়ানো পাপ

কোরআন, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-11-26 20:56:15

গুজব থেকে সাবধান, গুজব ছড়ানো পাপ

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের শান্তি-সম্প্রীতি ও শৃঙ্খলা নষ্টের নানা চেষ্টা হচ্ছে। এর মধ্যে নানা ধরনের গুজব অন্যতম। গুজব ছড়িয়ে পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টায় কেউ কেউ লিপ্ত। এমন অবস্থায় সর্বস্তরের জনগণের দায়িত্ব হলো, সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণ করা। কোনো প্রকার চক্রান্তের ফাঁদে পা না দেওয়া। কোনো খবর শুনলে, তা যাচাই-বাছাই করা। এটাই কোরআনে কারিমের নির্দেশ।

কোরআনে কারিমের সুরা হুজুরাতের ৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুসলমানেরা! যদি কোনো পাপাচারী লোক কোনো খবর নিয়ে আসে, তাহলে তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে, যেন অজ্ঞতাবশত কোনো জাতির ওপর আক্রমণ করা না হয়। এরূপ কাজ করলে তোমাদের নিজেদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অনুতাপ করতে হবে।’

মানুষের মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে, যা সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করে। সমাজজীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে। সুরা হুজুরাতের ১১ থেকে ১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা এমনসব বিষয় থেকেও বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন উপহাস করা, খোঁটা দেওয়া, মন্দ নামে ডাকা, অনুমান করা, দোষ অনুসন্ধান ও কুৎসা করা।

বর্তমানে বহু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। তাই যেকোনো তথ্য মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠেছে এটি। দুষ্কৃতকারীরাও এই মাধ্যমকে গুজব ছড়ানোর হাতিয়ারে পরিণত করেছে।

যেহেতু বর্তমান যুগের বেশির ভাগ মানুষের এখানে বিচরণ, তাই মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তারা এই প্ল্যাটফরমকে বেছে নিয়েছে।

ব্যক্তিগত আক্রোশ ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব পুঁজি করেই এ ধরনের কাজ বেশি করা হয়। নিজেদের আদর্শের বাইরে হলেই তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়ানো, ফটোশপে কারসাজির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিত্বকে অপমানের চেষ্টা করাই এখন যেন এক শ্রেণির মানুষের ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অথচ এর পরিণাম যে কত ভয়াবহ, তা তাদের কল্পনায়ও আসে না।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যে ব্যক্তি কোনো অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোনো নির্দোষ ব্যক্তির ওপর তা আরোপ করে, তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল।’ -সুরা নিসা : ১১২

মিথ্যা বলা বা গুজব ছড়ানো মুনাফিকের আলামত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুনাফিকের আলামত তিনটি- ১. যখন সে মিথ্যা কথা বলে, ২. ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, ৩. আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, সে খেয়ানত করে।’ -সহিহ বোখারি : ৩৩

কোনো খবর দেখলেই যাচাই-বাছাই করা ছাড়া তা বিশ্বাস করা অনুচিত। পবিত্র কোরআনে ভুল তথ্য অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর- এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ -সুরা বনি ইসরাঈল : ৩৬

তাই কোনো চটকদার খবর চোখে পড়লেই যাচাই-বাছাই ছাড়া তা নিয়ে মাতামাতি করা উচিত নয়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘সব শোনা কথা (যাচাই-বাছাই করা ছাড়া) বলা কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৯২

আবার গুজব ছড়ানোর কারণে এতে বিভ্রান্ত হয়ে যদি সমাজে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, কোনো গুনাহের প্রচলন হয়ে যায়, এর দায়ভারও যিনি গুজব ছড়িয়েছেন তার ওপর এসে বর্তাবে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সত্পথের দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৪৬০৯

অনলাইনে গুজব ছড়ানো ভ্রষ্টতার দিকে ডাকার নামান্তর। মহান আল্লাহ সবাইকে এই ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত রাখুন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর

right arrow