বিশ্ব ইজতেমার ময়দান থেকে ফিরে: বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ফজরের নামাজের পর আম বয়ানের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন বিশ্ব ইজতেমা।
শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা শুরুর কথা থাকলেও বিপুল পরিমাণ তাবলিগি সাথী, উলামায়ে কেরাম ও মাদরাসার ছাত্ররা উপস্থিত হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মাঠে ইজতেমার আমল শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাঠের দায়িত্বশীলরা।
অবশ্য মঙ্গলবার ও বুধবার মাঠে আসা মুসল্লিরা জামাতবদ্ধ হয়ে আগে থেকেই আমল জারি রেখেছিলেন।
বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেছেন মাওলানা আবদুল মতিন। তিনি মাঠে উপস্থিত হওয়া তাবলিগি সাথীদের সময়ের গুরুত্ব ও মূল্যায়ন করতে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বয়ানে অযথা সময় নষ্ট করা থেকে বেঁচে থাকতে বলেন।
মাওলানা আবদুল মতিন বলেন, প্রতিটা মুহূর্তের জন্যে আল্লাহর সামনে আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। মুসলমানের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। তাই অযথা নষ্ট না করে তালিম-তরবিয়ত ও দ্বীনী আলোচনার মাধ্যমে সময়কে কাজে লাগানোর কথা বলেন।
বয়ানে তিনি আরও বলেন, ইজতেমার মাঠে উপস্থিত আমরা কেউ অহেতুক কথাবার্তা বলবো না। সবসময় চার কাজ এবং তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আমলের মধ্যে মশগুল থাকবো। তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতের ওপর ময়দানে দাওয়াত হবে। সর্বপ্রথম দিলের মধ্যে তাওহিদ তথা একত্ববাদের বিশ্বাস বসাতে হবে।
কোনো মানুষের দোষ-গুণ নিয়ে আলোচনা না করারও পরামর্শও দেন তিনি। তিনি বলেন, ভাই! মানুষের অন্তর দিল আল্লাহতায়ালার হাতে। দিলের মালিক আল্লাহ, আর আল্লাহ চাইলে পরিবর্তন করে দিতে পারেন।
বয়ানের শেষ দিকে দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে মাওলানা আবদুল মতিন বলেন, খিত্তার জিম্মাদাররা ছয় নম্বরের ওপর বয়ান করে তাশকিল করবেন। সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত কোরআনের তালিম হবে, এরপর তাশকিল। জিম্মাদাররা তাশকিলের কামরা থেকে কাগজ নিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। বেলা ১২টা থেকে জোহর পর্যন্ত অন্যান্য আমল হবে। এর পর জোহরের নামাজ ও বয়ান।
বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ফজরের নামাজের সময় ইজতেমার মাঠে যেয়ে দেখা যায়, ইতোমধ্যে মুসল্লিদের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে ইজতেমার মাঠ। মঙ্গলবার রাত থেকে সারাদেশের মুসল্লিরা ইজতেমার মাঠে জমায়েত হতে শুরু করেছেন।
ইজতেমার মাঠের প্যান্ডেলের বাইরে এমনকি পার্শ্ববর্তী রাস্তা ও তুরাগ নদীর অপর পাশেও অস্থায়ী শামিয়ানা খাঁটিয়ে মানুষকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
ময়দানের বাইরের এবং ভেতরকার রাস্তাগুলোতে খুব ধীর গতিতে চলতে হচ্ছে। ইজতেমার মাঠের চারপাশের রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলাচল অনেকটা বন্ধ। সামান্য পথ অতিক্রম করতে যথেষ্ট সময় লাগছে।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা বলছেন, আগে যে ভিড় তারা ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের দিন দেখতেন সে ভিড় এবার প্রথম দিনেই শুরু হয়েছে। এই জনস্রোত অব্যাহত থাকলে শুক্রবার ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণকালের বৃহত্তম জুমার নামাজ।
শনিবার যখন আখেরি মোনাজাত হবে ততক্ষণে মানুষের ভিড় ময়দান ছাড়িয়ে পশ্চিমে তুরাগ পার হয়ে রানাভোলা, দক্ষিণে আব্দুল্লাহপুর, পূর্বে স্টেশন রোড এবং উত্তরে কামারপাড়া রাস্তা অতিক্রম করে যাবে।
এ ছাড়া দেশি-বিদেশি তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিরাও মাঠে আসতে শুরু করেছেন। পাকিস্তানের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা জিয়াউল হক ও মাওলানা উবাইদুল্লাহ খুরশিদ ইজতেমার মাঠে পৌঁছেছেন। মাঠে উপস্থিত হয়েছেন সৌদি আরবের শুরা সাথী শেখ গাসসান।
বিকেলের মধ্যে ভারতের শীর্ষ মুরুব্বি বিশেষ করে মাওলানা আহমাদ লাট, মাওলানা ইবরাহিম দেওলা, মাওলানা জুহাইরুল হাসান, ভাই ফারুক ব্যাঙ্গালুর, মাওলানা সানাউল্লাহ আলীগড় ইজতেমার মাঠে পৌঁছে যাবেন।
বিশ্ব ইজতেমায় আল্লামা আহমদ শফিও অংশ নেবেন। সন্ধ্যার মধ্যে মাঠে পৌঁছবেন তাবলিগের আলেম উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা মাহমুদুল হাসান ও আল্লামা আবদুল কুদ্দুস সহ অন্যরা।
বুধবার থেকে মাঠে অবস্থান করছেন, কাকরাইল মারকাজের শুরা সদস্য ও মুরব্বিরা। তারা হলেন- হাফেজ মাওলানা জুবায়ের আহমদ, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা মুহাম্মদ ফারুক, মাওলানা রবিউল হক ও মাওলানা মুহাম্মদ হোসেন।