বিশ্ব ইজতেমার আগে আগে প্রতিবছর ৫ দিনের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়, এটা নিয়ে অনেকের কৌতুহল রয়েছে, জোড় কি, এখানে কি হয়, কত লোক হয়?
তিন চিল্লার পুরোনো সাথী ও উলামা হজরতদের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে ৫ দিনের জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
জোড় ইজতেমার উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর রাস্তায় মেহনতের লোক বেশি বেশি বের করার চেষ্টা ও ব্যাপকভাবে হেদায়েতের চিন্তা-ফিকির উম্মতের মাঝে বাড়ানোর এক সাধারণ আয়োজন। তবে কাজ বাড়ার কারণে জোড়েও এখন ইজতেমার আদলে বেশ বড় পরিসরে কয়েক লাখ সাথী ও আলেমদের অংশগ্রহণ থাকে।
জোড়ে মূলত বিশ্বব্যাপি দাওয়াতের কাজ নিয়ে চলা সাথীদের ইসলাহি ফিকির (চিন্তা), তরবিয়ত (প্রশিক্ষণ), হুসনে আখলাক (সুন্দর চরিত্র), প্রাত্যহিক জীবনের লেনদেন, চলাফেরা, একত্রে চলার প্রশিক্ষণসহ আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং দাওয়াতের কাজের পথ-পদ্ধতি ও ধারাবাহিকতা নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হয়।
ইজতেমায় যেসব আলমি জিম্মাদার (বিদেশি মুরব্বি, শুরা হজরত) আসেন, তারা সাধারণত ৫ দিনের জোড়ে আসেন না। জোড়ে আসেন দাওয়াত ও তাবলিগের আধ্যাত্মিক মুরুব্বি ও সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক বয়োজৈষ্ঠরা। একসময় জোড়ে আসতেন, হজরতজি মাওলানা ইউসুফ (রহ.), মুবাল্লিগে ইসলাম মাওলানা উমর পালনপুরী (রহ.) ও তাবলিগের ইমাম গাজ্জালিখ্যাত মাওলানা সাঈদ খান (রহ.)।
তাদের ইন্তেকালের পর জোড়ে নিয়মিত ইসলাহি বয়ান করেন, শায়খুল হাদিস জাকারিয়া (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা শায়খুল হাদিস আল্লামা ইবরাহিম দেওলাসহ তাবলিগের বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
জোড়ের প্রথম দুই দিন কাজের রিপোর্ট দিতে হয়, রিপোর্টে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নির্ধারিত তথ্য নির্দিষ্ট ছকে পুরণ করে মহল্লা থেকে এনে জমা দিতে হয়। মিম্বরে সংগৃহীত প্রতিটি জেলার কাজের বর্তমান অবস্থা মাইকে জেলার দায়িত্বশীলরা বলে থাকেন। নানাস্তরে বিভিন্ন প্রশ্নের আলোকে সমস্যার সমাধান ও কাজের সহিহ পদ্ধতি এবং তরবিয়ত বড়রা বলে দেন। রিপোর্ট আলোচনা-পর্যালোচনার সময় দেশ-বিদেশের সব মুরব্বিরা বসা থাকেন। তারা পরামর্শের ওপর নিজ নিজ ডায়রিতে প্রযোজনীয় নোট তৈরি করেন।
পাঁচ দিন পর দোয়ার আগে সারাদেশের কাজের পরিসংখ্যান, আগামি বছরের টার্গেট এবং জোড় থেকে পাওয়া বড়দের ফায়সালাসমূহ পড়ে শুনানো হয়। সুপরিকল্পিত কাজের ক্ষেত্রে একটি আত্মিক, ঐক্যবদ্ধ ও সাংগঠনিক ভীত তৈরিতে জোড়ের ভুমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
এ জন্য তাবলিগের মুরব্বিরা বলেন, আলেম ও পুরোনো কাজের সাথীদের ইজতেমার চেয়ে জোড়ে উপস্থিত থাকা বেশি জরুরি এবং প্রায় সবাই এটা গুরত্ব দিয়ে থাকেন।