একাকী জীবনযাপন প্রসঙ্গে ইসলাম যা বলে

বিবিধ, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-12-07 19:28:14

মানবজীবন এক রহস্যময় অধ্যায়। এই রহস্যের অন্যতম হলো- নিঃসঙ্গ জীবন। কেউ পরিস্থিতির কারণে, কেউ আবার স্বেচ্ছায় নিঃসঙ্গ একাকী জীবন কাটান।

বলা হয়, কেউ একা হয়ে যান না এক দিনে বা হঠাৎ করে। বরং নানা দূরত্ব ও দ্বন্দ্বের কারণে তৈরি হয় ফাঁক-ফাটল-ভাঙন।

অনেকেই বলেন, একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা ইবাদত-বন্দেগির প্রতি আগ্রহ বাড়ায়। আবার অনেকেই জীবনের পড়ন্ত বেলায় হৃদয়ের গভীর থেকে বলেন- কী ভয়ংকর এই একাকিত্ব! কী নির্মম এই বন্ধনহীনতা!

মানবতার ধর্ম ইসলাম নিঃসঙ্গতা ও একাকিত্ব পরিহারের শিক্ষা দেয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানব মণ্ডলী! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের একজন পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার জুটি সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের উভয়ের থেকে অসংখ্য নর-নারীর বিস্তার ঘটিয়েছেন।’ -সুরা আন নিসা : ১

হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তুমি মুমিনদের পারস্পরিক করুণা প্রদর্শন এবং পারস্পরিক সহানুভূতি প্রদর্শনের দিক থেকে একই দেহের মতো দেখতে পাবে। যখন দেহের কোনো একটি অঙ্গ কষ্ট অনুভব করে তখন গোটা দেহই জর-নিদ্রাহীনতা দ্বারা এর প্রতি সাড়া দিয়ে থাকে।’ -সহিহ বোখারি

নিঃসঙ্গতা ও একাকিত্ব থেকে আত্মরক্ষায় ইসলামে বাস্তবসম্মত নির্দেশনা রয়েছে। যেমন-

আল্লাহর জিকির ও দোয়া, নামাজে একাগ্রতা, কোরআন মাজিদ তেলাওয়াত, ইতেকাফ ও মহান আল্লাহর প্রতি ভরসা।

সমাজ সংসারে কিছু মানুষ একা থাকলেও তারা একা নন। ধর্ম-কর্মের নানা অনুষঙ্গে একাকিত্ব ঘুচাবার যোগ্যতা রাখেন তারা। তবে একেবারে একাকী ও নিঃসঙ্গ জীবন কষ্টকর, অসহায় ও কিছুটা হলেও ভুল। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘আমি একা থাকার সম্পর্কে যা জানি তা যদি লোকেরা জানত, তাহলে কেউ কখনো রাতে একা ভ্রমণ করত না।’ -সহিহ বোখারি

যদিও কখনো কখনো কিছু সময় একা কাটানো উচিত। অথচ ইসলামের মধ্যপন্থার রীতি আমাদের সব কিছুতে ভারসাম্য রক্ষার শিক্ষা দেয়। হজরত ইবনু উমর (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) একা থাকতে নিষেধ করেছেন। আর একজন মানুষ একা ঘরে ঘুমাতে বা একা ভ্রমণের জন্য।’ -মুসনাদে আহমাদ

তবে একা ঘরে ঘুমানোর হাদিসের বিশুদ্ধতা নিয়ে বিতর্ক-বিশ্লেষণ রয়েছে।

নিঃসঙ্গতা এড়াতে বিয়ের পরামর্শ দিয়ে অনেকেই বলেন, অবসর, অসুস্থতায়ও তো সঙ্গী দরকার! স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ছাড়া নিদানকালে কী হবে ইত্যাদি? আশ্চর্য! স্বজন-পরিজন থাকলেও তো অনেকের ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম!

অন্যদিকে জীবনোপলবদ্ধিতে সংসারজগৎ তৈরির অবসর উঁকিঝুঁকি দেয়নি- এমন ব্যক্তিত্বের তালিকা যেমন দীর্ঘ, তেমনই তাদের জীবনের গল্প বিস্ময়কর। তাদের অনেকেই বউয়ের সঙ্গে নয়, বিধাতার নিবিড় সান্নিধ্য-সাধনা ও বইয়ের সঙ্গে সংসার পেতে অনেকে হয়েছেন ইতিহাসখ্যাত।

তবু নিঃসঙ্গতা এড়াতে নবী কারিম (সা.) সফরসঙ্গীর সংখ্যা সম্পর্কে বলেন ‘...তিনজনের ভ্রমণকে কাফেলা বলে। একজন কিংবা দুজনের ওপর শয়তান প্রভাব করতে পারে, কিন্তু তিনজনের ওপর সম্ভব হয় না।’ -জামে তিরমিজি

এ সম্পর্কিত আরও খবর