আল্লাহর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত

প্রবন্ধ, ইসলাম

মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2024-12-14 20:28:45

মানুষ মহান আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। গোটা দুনিয়ার সব কার্যক্রম মানুষকে কেন্দ্র করে। মানুষের ভালো-মন্দ, পথচলা, খাওয়া-দাওয়া, সংসার করা, ছেলেমেয়ে হওয়া, সমাজ, রাষ্ট্র গঠন সবই পরিকল্পনার আলোকেই হয়ে থাকে। আল্লাহতায়ালার পরিকল্পনার সঙ্গে কারো পরিকল্পনার মিল নেই। তিনি যা ভালো মনে করেন, তাই করেন। কারো কাছে পরামর্শ নিতে হয় না বা কারো উপদেশও দরকার হয় না।

মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই অভিশপ্ত শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করার কাজ করে আসছে। বার বার মানুষরূপী শয়তান ষড়যন্ত্র করে, মহান আল্লাহ ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করার কৌশল অবলম্বন করেন। তার কৌশলই কার্যকর হয়। সূরা আলে ইমরানের ৫৪ নম্বর আয়াতে এ ব্যাপারে উল্লেখ আছে।

মহান আল্লাহ হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে দুনিয়ায় চলার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন ওই যুগের উপযুক্ত করে বাণী দিয়ে, যা দ্বারা নবী-রাসুলগণ ওই সময়ের জনগোষ্ঠীদের আল্লাহর নির্দেশিত পথে চালাতে পারেন।

যেহেতু মানুষ সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই ইবলিস শয়তান মানুষকে ভুল পথে নেওয়ার উদ্দেশ্যেই দুনিয়ায় এসেছে, তাই নবী-রাসুলদের উম্মতদের ভুল পথে নেওয়ার কোশেশ করছে।

কোরআনে কারিম সর্বশেষ আল্লাহর বাণী। নবী মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসুল। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সময়েও মক্কার আবু জাহেলরা নবীকে কষ্ট দিয়েছে। সব মুসলিমদের ধোঁকা দেওয়ার নানা ফন্দি-ফিকির করেছে। কিন্তু আল্লাহতায়ালা তার মেহেরবানিতে তার নির্দেশিত পথে ঈমানদারদের সাহায্য করেছেন, বিজয় দান করেছেন।

অতীতের মতো বর্তমান সময়েও অনেক শাসক জনগণকে নির্যাতনের জাঁতাকলে নিষ্পেষণ করে, জেলে ভরে, গুম করে, খুন করে নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। উল্টো মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বেইজ্জতির সঙ্গে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে, অনেককে দেশ থেকে পালাতেও হয়েছে।

বস্তুত ক্ষমতা, ধন-সম্পদ ও সম্মান ইত্যাদি বিষয়ে মহান আল্লাহর পরিকল্পনাই চূড়ান্ত। তার পরিকল্পনায় যেমন কোনো খুঁত ধরার ব্যবস্থা নেই, আবার তার কোনো পদক্ষেপ বাধা দেওয়ারও কারো ক্ষমতা নেই। তিনি আমাদের একমাত্র অভিভাবক, তিনিই আমাদের একমাত্র সাহায্যকারী।

মহান আল্লাহ ছাড় দেন, কিন্তু ছেড়ে দেন না। যুগে যুগে তিনি প্রমাণ করেছেন, তার প্রিয় জনগণকে যারা কষ্ট দেবে, নির্যাতন করবে, তাদের পরিণতি আল্লাহর চূড়ান্ত পরিকল্পনায় ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও সিরিয়ায় ক্ষমতার পালাবদলে বিশ্ববিবেকের কাছে আবারও প্রমাণিত হলো- স্বৈরাচারদের পতন আল্লাহতায়ালা তার অমোঘ নিয়মেই করে থাকেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, হে সার্বভৌম শক্তির মালিক আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা প্রদান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা আপনি সম্মান দান করেন, আর যাকে ইচ্ছা আপনি হীন করেন। কল্যাণ আপনারই হাতে। নিশ্চয়ই আপনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ -সুরা আলে ইমরান : ২৬

বর্ণিত আয়াতে রয়েছে মহান আল্লাহর সীমাহীন শক্তি ও তার মহা কুদরতের প্রকাশ। তিনি বাদশাহকে ফকির করেন এবং ফকিরকে বাদশাহ। তিনিই সব কর্তৃত্বের মালিক।

আল্লাহতায়ালাই মহাজগতের সব ক্ষমতার অধিকারী। তিনিই রাজাধিরাজ। তার ক্ষমতা ও রাজত্ব সমগ্র সৃষ্টিজগতে কার্যকর। পৃথিবী তার রাজত্বের ক্ষুদ্রতম অংশ মাত্র। আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুত্তাকিরা থাকবে স্রোতস্বিনী বিধৌত জান্নাতে, যোগ্য আসনে, সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী আল্লাহর সান্নিধ্যে।’ -সুরা কামার : ৫৪-৫৫

সৃষ্টিজগতে সবার রাজত্বই অস্থায়ী ও ধ্বংসশীল। কিন্তু মহান আল্লাহর রাজত্ব চিরন্তন ও চিরস্থায়ী। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা কেয়ামতের দিন পৃথিবী আপন মুঠোয় ধারণ করবেন এবং আসমানকে তার ডান হাতে গুটিয়ে নিয়ে বলবেন, আমিই একমাত্র অধিপতি। দুনিয়ার বাদশাহরা কোথায়?’ -সহিহ বোখারি : ৭৩৮২

যেহেতু আল্লাহর রাজত্বই চিরস্থায়ী ও চিরন্তন এবং তিনিই পৃথিবীর ক্ষমতা ও রাজত্ব নিয়ন্ত্রণ করেন। তাই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহই সব বাদশাহর বাদশাহ এবং প্রকৃত মালিক। ইরশাদ হয়েছে, ‘মহিমান্বিত আল্লাহ যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; সম্মানিত আরশের তিনিই অধিপতি।’ -সুরা মুমিনুন : ১১৬

এ সম্পর্কিত আরও খবর