আলমি শুরার তত্ত্বাবধানে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) কাকরাইলের মুরব্বি ও শূরা সদস্য হাফেজ মাওলানা যোবায়ের আহমদ পরিচালনা করেন। এর পর রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে দিল্লি নিজামুদ্দিন মারকাজের তত্ত্বাবধানে মাওলানা সাদপন্থীদের ইজতেমা শুরু হয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাত থেকে মাওলানা সাদের অনুসারীরা মাঠে প্রবেশ করতে থাকেন। তবে শনিবার সকালে বৃষ্টির জন্য তাদের বেশ বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। পরে অবশ্য বৃষ্টির কারণে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইজতেমার সময় এক দিন বেড়েছে। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আখেরি মোনাজাত হবে মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায়। যা আগে সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার মধ্যে হওয়ার কথা ছিল। মোনাজাত পরিচালনা করবেন দিল্লি নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা শামিম আহমদ।
মাওলানা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা রোববার বাদ ফজর নিজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা ইকবাল হাফিজের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে উপস্থিত মুসল্লিরা ময়দানে অবস্থান করে বয়ান শোনার পাশাপাশি অন্যান্য আমল করছেন। বেশিরভাগ মূল বয়ান উর্দুতে হয়। সেই উর্দু বয়ান বাংলার পাশাপাশি আরবি, ইংরেজি অন্য বেশ কয়েকটি ভাষায় ভাষান্তর করে শোনানো হয়।
সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা যায়, ময়দানের ভেতরে এখনও অনেক অংশ ফাঁকা পড়ে আছে। তবে মাঠে অবস্থানরত মুসল্লিরা ইবাদত-বন্দেগিতে সময় কাটাচ্ছেন। তারা বয়ান শোনার পাশাপাশি জিকির-আজকার ও ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত রয়েছেন।
ইজতেমা উপলক্ষে প্রশাসনের নেওয়া সব কার্যক্রম আগের মতোই রয়েছে। ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বেও ইজতেমা ময়দানসহ পুরো টঙ্গীতে কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে। ইজতেমা সমাপ্তির পর ইজতেমা ময়দানে থাকা সমস্ত মালামাল প্রশাসনের হেফাজতে থাকবে। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সাল থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মাঠে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে টঙ্গীতে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম বছর যারা (যে ৩২ জেলার মুসল্লি) টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতেন তারা পরবর্তী বছর সেখানে যেতেন না। ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবছর টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার পাশাপাশি জেলায় জেলায় আঞ্চলিক ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু এবার তাবলিগ জামাতের মাঝে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে দুই গ্রুপ এক সঙ্গে বিশ্ব ইজতেমা করছে। আর জেলার ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছে।
এর আগে ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় আলমি শুরার তত্ত্বাবধানে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। সে পর্বে এবার বিশ্ব মুরব্বিরা অংশ নেন। তাদের মধ্যে ভারতের তাবলিগের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা ইবরাহিম দেওলা ও মাওলানা জুহাইরুল ইসলাম, বাংলাদেশের আল্লামা শাহ আহমদ শফি, আল্লামা আশরাফ আলী, আল্লামা মাহমূদুল হাসান ও আল্লামা কুদ্দুসসহ শীর্ষ আলেমরা অংশ নেন। এ ছাড়া সৌদি আরবসহ আরববিশ্ব ও অন্যান্য দেশের শূরা সদস্যরা ইজতেমায় অংশ নেন।
১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারির ইজতেমায় সারাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ধর্মপ্রাণ মানুষ, তাবলিগি সাথী ও উলামায়ে কেরাম অংশ নেন। মাঠে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয় স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত। জুমার নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা যোবায়ের।