সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন কাজে অফিসের বাইরে যেতে হয়। ওই সফরে নানাখাতে খরচ হয়। এ খরচগুলো ভাউচারের মাধ্যমে অফিস থেকে আদায় করে নেন তারা। এক্ষেত্রে সাধারণত চাকরির পদ অনুযায়ী উচ্চপদে কর্মরতদের বিল সহজেই পাশ হয়ে যায়। চাকরিজীবীরা পদ অনুযায়ী বিল তৈরি করে দেন। সাধারণত কেউ নিজের পদ থেকে উন্নতমানের অথবা নিম্নমানের যাতায়াত ও অন্যান্য খরচের ভাউচার দেন না।
অনেকে আবার বাড়তি কিছু সঞ্চয়ের আশায় নিজের পদ অনুযায়ী প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে নিম্নমানে যাতায়াত করে ভাউচার তৈরি করার ক্ষেত্রে নিজ পদমর্যাদা সমমানের খরচ লিখে বিল পাশ করায়। এটা ইসলামি শরিয়তে জায়েজ কি না?
বর্ণিত অবস্থায় দু’টি বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য ইসলামি স্কলাররা মত দিয়েছেন।
এক. যদি কর্তৃপক্ষ যাতায়াত ও আনুষঙ্গিক খরচের টাকা দায়িত্বশীলকে মালিক বানিয়ে প্রদান করে থাকে। যাতায়াত খরচ কম হোক বা বেশি হোক, এর দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের নয়, বরং কাজটি সম্পন্ন করা দায়িত্বশীলের দায়িত্ব। আর এ জন্য যাতায়াত ভাড়া, থাকা-খাওয়া ইত্যাদি নামে টাকা বরাদ্দ করা হয়। এক্ষেত্রে কমবেশি মেনে নিয়ে কাজ করলে, উদ্ধৃত্ত টাকা থাকলে সেটা নিজে নিতে পারবে। এক্ষেত্রে টাকা কম হয়ে গেলে, নিজ থেকে পরিশোধ করার মানসিকতা থাকতে হবে। এ পদ্ধতি একটা চুক্তিবিশেষ। সুতরাং এখানে চুক্তি অনুযায়ী কাজ হবে।
দুই. কর্তৃপক্ষ যাতায়াতসহ প্রয়োজনীয় খরচ হিসেবে টাকা প্রদান করেন। কোনো কারণে খরচ বেশি হলে কর্তৃপক্ষ এর দায় গ্রহণ করেন।
উপরোক্ত দুই অবস্থার মাঝে প্রথম অবস্থায় কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীলকে যাতায়াত খরচ হিসেবে যে টাকা প্রদান করেন, ওই টাকার মালিক বানিয়ে দেন, খরচের কমবেশির জিম্মাদার কর্তৃপক্ষ হন না। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ব্যক্তি খরচ কমিয়ে বাকি টাকা রেখে দেওয়া তার জন্য বৈধ।
তবে দ্বিতীয় অবস্থায় যেহেতু সত্যিকার অর্থে যাতায়াতসহ অন্যান্য খরচ হিসেবে যে টাকা দেওয়া হয়। এর চেয়ে বেশি খরচ হলে কর্তৃপক্ষ জিম্মাদার হয়, তাহলে বুঝা যাচ্ছে, টাকাটা তার যাতায়াত, থাকা-খাওয়া ও অন্যখাতে প্রাপ্ত টাকা হিসেবেই প্রদান করা হয়েছে। দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে এর মালিক বানিয়ে দেওয়া হয়নি। শুধু কাজটি শেষ করতে যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন ততটুকু খরচের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।
তাই এক্ষেত্রে কম খরচ করার পর টাকা উদ্বৃত্ত থাকলে তা কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত দিতে হবে। এ ছাড়া খরচের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ করা যাবে না। নিজের স্ট্যাটাস অনুযায়ী খরচ করতে হবে। ভাউচারেও বেশি লেখা যাবে না। এটা ধোঁকার শামিল। আর ইসলামের ধোঁকা হারাম কাজ। ধোঁকার মাধ্যমে অর্জিত সবকিছু হারাম।
হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতভুক্ত নয়। -সহি মুসলিম: ১৬৪
অন্য হাদিসে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মুসলমানরা তার শর্তের ওপর থাকবে। -সুনানে আবু দাউদ: ৩৫৯৪