প্রায় তিন দশক আগে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া বসনিয়ার একটি ঐতিহাসিক মসজিদ আবারও নামাজের জন্য খোলা হলে তাতে অংশ নেয় হাজার হাজার মানুষ। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত চলা বসনিয়া যুদ্ধের সময় বোমার আঘাতে ধ্বংস হয় মসজিদটি।
জাতিগত বিরোধের জেরে বসনিয়ার সার্ব সেনাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই যুদ্ধের শুরুতেই ফোকা অঞ্চলের আলাদজা মসজিদটি ধ্বংস করা হয়।
ষোড়শ শতাব্দীর ওই মসজিদটিকে অটোমান স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শনগুলোর একটি হিসেবে মনে করা হয়। মসজিদটির পুনর্নির্মাণ প্রকল্প সম্পন্ন হতে বেশ কয়েকবছর সময় লেগেছে। তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ মসজিদটির পুনর্র্নিমাণ কাজে অর্থায়ন করেছে।
মসজিদটি ১৫৫০ সালের দিকে তৈরি করা হয়। ডিনামাইট দিয়ে ধ্বংসের আগ পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান ছিল মসজিদটির। মসজিদে বিস্ফোরক স্থাপন করার অপরাধে ২০১৮ সালে সাবেক একজন বসনিয় সার্ব সেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
মসজিদটির আদিপ্রস্তর শৈলীর যেসব অংশ বিস্ফোরণের পর পরিত্যক্ত করে মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল, সেই অংশগুলোও আবার মাটির নিচ থেকে বের করে আনা হয়েছে।
ফোকাতে মসজিদটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। বসনিয়ার যুদ্ধের সময় শুধু ফোকা শহরেই ১২টি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছিল।
যুদ্ধের আগে ওই শহরে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল শহরের মোট জনসংখ্যার (৪১ হাজার) অর্ধেকেরও বেশি।
তবে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের মতে বর্তমানে ওই শহরে মুসলিমের সংখ্যা ১ হাজারের কিছু বেশি।
জাতিগতভাবে যারা সার্ব নয়, এমন জনগোষ্ঠীর মানুষদের গণহত্যার কারণে বসনিয়া যুদ্ধের সময় কুখ্যাতি লাভ করেছিল ফোকা।
যুদ্ধের সময় ওই শহরের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় স্রবিনিয়ে। তবে ২০০৪ সালে বসনিয়ার আদালত শহরের পুরনো নাম পুনর্বহালের আদেশ দেয়।
বসনিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা এই ঐতিহাসিক স্থানকে আবারও তৈরি করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। মুসলিমদের নেতা হুসেইন কাবাজোভিচ বলেন, ‘আমরা আশা করতে পারি যে, এখানকার মানুষের মধ্যে আবারও শান্তি ফিরে আসবে।’
তুরস্কের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী মেহমেট নুরি এরসয় বলেন, এই মসজিদের পুনরায় তৈরি হওয়ার বিষয় থেকেই বোঝা যায় যে, ‘বর্ণ বৈষম্য এবং ঘৃণা বস্তুগত ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হলেও সংস্কৃতির মূলে থাকা শত শত বছর ধরে লালন করা সহাবস্থানকে নষ্ট করতে পারে না।’