রোজার পুরস্কার আল্লাহ নিজে দেবেন

রামাদ্বান কারীম, ইসলাম

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 15:42:54

ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি সম্পর্কে বর্ণিত আছে, রমজান মাসের আগমন হলে তিনি কিতাব বন্ধ করে দিতেন। অজু করে কোরআনে কারিম নিয়ে মসজিদে গমন করে বলতেন, ‘এ তো কোরআনের মাস। এ মাসে কোরআন ছাড়া আর কোনও কথা চলতে পারে না।’

রমজান মাস এলে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.) ফতোয়া, মাসায়েল ইত্যাদি সব কিছু ছেড়ে দিয়ে বসে বসে তাসবিহ, তাহলিল, জিকির ও কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল থাকতেন।

ইসলামের ইতিহাসে বহু মনীষী ও বুজুর্গ সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, রমজান মাস এলে তারা সব সময় মসজিদে বসে বসে কোরআন তেলাওয়াত ও জিকিরে মশগুল হতেন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তারা মসজিদ থেকে বাড়িতে আসতেন না।

রমজানে রোজা, নামাজ, অন্যান্য আমল, বিশেষ করে কোরআন তেলাওয়াত ও কোরআন নিয়ে গবেষণার বিষয়ে ব্যস্ত থাকাকে কর্তব্য মনে করেন সচেতন মুসলমানগণ। কারণ রমজানের মতো এমন মোবারক মাস আর নেই। এ মাসে আমলের সাওয়াব বা মূল্য যেমন বেড়ে যায়, তেমনি আমল কবুল হওয়ার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।

রোজা ও রমজানের গুরুত্ব এবং আমলের মূল্য সম্পর্কে একটি হাদিসে বিস্তারিত জানা যায়। হাদিসটি ‘হাদিসে কুদসি’ বিধায় অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও মূল্যবান, যা হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত এবং বোখারি শরিফে ১৮৯৪ ও ১৯০৪ এবং মুসলিম শরিফে ১৬৩ ও ১৬৪ নং হাদিস হিসাবে লিপিবদ্ধ।

এতে বলা হয়েছে যে, রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই। কিন্তু রোজা স্বতন্ত্র। রোজা আমারই জন্য আর আমি তার প্রতিদান দেবো। সে পানাহার ও যৌনাচার ছেড়ে দেয় একমাত্র আমারই জন্য। রোজা ঢালস্বরূপ, কাজেই তোমাদের কেউ যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ তাকে গালিগালাজ করে অথবা তার সাথে লড়াই-ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি রোজা পালনকারী। সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, নিঃসন্দেহে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট। রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে, তখন সে আনন্দিত হয়। একটি হলো, যখন সে ইফতার করে তখন সে আনন্দিত হয়। আর যখন সে আপন পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত করবে, তখন সে স্বীয় রোজার জন্য আনন্দিত হবে।’

এই দীর্ঘ হাদিসে রোজা ও রোজাদারের অনেকগুলো গুরুত্ব বা ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে মূল্যবান কথা হলো, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই, কিন্তু রোজা স্বতন্ত্র, তা আমার (আল্লাহ) জন্য, আর আমি তার প্রতিদান দেবো’, যার অর্থ করা হয়েছে, রোজা বান্দা ও আল্লাহর মাঝে একটি গোপন বিষয়। বান্দা যে রোজাদার তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জানার সুযোগ নেই। ফলে রোজা হলো বান্দা ও আল্লাহর মধ্যকার বিষয়। রোজা হলো আল্লাহর জন্য। এবং রোজার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজে দেবেন।

কারণ, কেউ মানুষকে ফাঁকি দিয়ে পানাহার বা ভক্ষণ করতে পারে। লুকিয়ে করা এসব কাজ মানুষের চোখকে ফাঁকি দিয়ে করা সম্ভব হলেও আল্লাহকে ফাঁকি দিয়ে করা সম্ভব নয়। এজন্য আল্লাহ রোজাকে নিজের কাছে রেখেছেন এবং বলেছেন, আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই। কিন্তু রোজা, আল্লাহ ও বান্দার মাঝে গোপন বিষয়। রোজা বান্দার সামনে মেলে ধরা হবে যেদিন বান্দা আল্লাহর কাছে আসবে।

আল্লাহ তার কাজের (রোজার) প্রতিদান নিজে দেবেন। যদি বান্দা আল্লাহর সাথে সত্যপন্থা অবলম্বন করে, অর্থাৎ রোজার আদব ও শর্তসমূহ পরিপূর্ণভাবে মান্য করে, তাহলে আল্লাহ রোজাদারকে পিপাসার বিনিময়ে দেবেন হাউজে কাউসারের সুপেয় ঠাণ্ডা পানি।

যে কঠিন দিনে সব মানুষ পিপাসায় কাতর থাকবে, যে দিন সব মানুষ এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করবে, সবাই থাকবে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, তখন তাকে পানি, আহার, ফল দেওয়া হবে। তাকে দেওয়া হবে পরিপূর্ণ পরিতৃপ্তি। যেমনটি ঘোষণা করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে সূরা যুমারের ১০ নম্ব আয়াতে: ‘ধৈর্যশীলদের অপরিমিত পুরস্কার প্রদান করা হবে।’

রমজানের রোজার মধ্যে ধৈর্যশীলতার সকল কিছুই রয়েছে। পানি, খাদ্য, সম্ভোগ ইত্যাদি সব কিছু পরিত্যাগের পাশাপাশি মন্দ কথা, মন্দ আচরণ, গিবত, শেকায়েত, বদগুমানি, কিনা ইত্যাদি থেকেও ধৈর্য ধারণ করতে হয় রোজাকে পবিত্র রাখার প্রয়োজনে। অতএব একমাত্র আল্লাহর জন্য ধৈর্য ও পবিত্রতার মাধ্যমে রমজান মাসের মূল আমল রোজা এবং অন্যান্য আমলের মাধ্যমে স্বয়ং মহান আল্লাহ কাছ থেকে অশেষ পুরস্কার ও কল্যাণ হাসিলের জন্য সচেষ্ট হওয়া প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর একান্ত কর্তব্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর