বাংলাদেশে রমজান মাসের শেষ জুমাকে জুমাতুল বিদা হিসেবে পালন ও অভিহিত করা হয়। জুমাতুল বিদা দ্বারা রমজানের শেষ জুমা বোঝানো হয়। কোনো কোনো মানুষের ধারণা, এর বিশেষ ফজিলত রয়েছে। তারা এ জুমাকে খুব গুরুত্ব দেয় এবং একে শরিয়ত নির্দেশিত ফজিলতপূর্ণ দিবস-রজনীর অন্তর্ভুক্ত মনে করে। ফলে তারা এ জুমা আদায়ের জন্য পারতপক্ষে এলাকার সবচেয়ে বড় মসজিদে গমন করে। সেই সঙ্গে এ জুমায় মুসল্লির সমাগমও বেশি হয়।
কিন্তু ইসলামি শরিয়তে জুমাতুল বিদা বলে আলাদা ফজিলতের কিছু নেই। এটি একটি নব আবিষ্কৃত পরিভাষা। এর কোনো বিশেষ ফজিলত কোরআন-হাদিসে পাওয়া যায় না। নবী করিম (সা.), সাহাবায়ে কেরাম কেউ এর আমল করেননি। বরং এটি রমজানের অন্যান্য জুমার মতোই ফজিলত রাখে; এর বাড়তি কোনো ফজিলত প্রমাণিত নয়।
অনেকে এ দিনে বিশেষভাবে দোয়া করেন। কেউ কেউ মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন। অনেকে আবার এ দিন উপলক্ষে বিশেষ কিছু নামাজ পড়েন, ইফতার আয়োজনও করেন। পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন ও টেলিভিশনে নিউজ আসে, ‘যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে সারাদেশে জুমাতুল বিদা পালিত হয়েছে।’ এসব ভুল ও বিদআত।
তবে হ্যাঁ, জুমার দিন একটি ফজিলতপূর্ণ দিবস। ইসলামে আলাদাভাবে শুক্রবারের বিভিন্ন ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু জুমাতুল বিদার কোনো কথা বলা নেই।
যেমন হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের সঙ্গে একদিন শুক্রবারের ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন, জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, সেই সময়টায় যদি কোনো মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহতায়ালার কাছে কিছু চায়, আল্লাহতায়ালা অবশ্যই তার সে চাহিদা বা দোয়া কবুল করবেন এবং এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) তার হাত দিয়ে ইশারা করে সময়টির সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন। -সহিহ বোখারি
ইসলামি স্কলাররা ওই সময় সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। কোনো কোনো বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘ইমামের মিম্বরে বসার সময় থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত সময়টিই সেই বিশেষ মুহূর্ত।’ -সহিহ মুসলিম
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বর্ণনা করেন, শুক্রবার আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া কবুল হয়। বিখ্যাত সিরাতগ্রন্থ যাদুল মায়াদে বর্ণিত আছে, জুমার দিন আসরের নামাজ আদায়ের পর দোয়া কবুল হয়। জুমার দিনের বিশেষ সেই মুহূর্ত সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনায় বলা হয়েছে, জুমার নামাজে সূরা ফাতিহার পর আমিন বলার সময়, আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়, মুয়াজ্জিন আজান দেওয়ার সময়, জুমার দিন সূর্য ঢলে পড়ার সময়, ইমাম খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে দাঁড়ানোর সময়। উভয় খুতবার মধ্যবর্তী সময় ও জুমার দিন ফজরের আজানের সময়। সুতরাং শুক্রবারের আলাদা গুরুত্বের কথা স্বীকৃত, কিন্তু জুমাতুল বিদার কোনো আলাদা ফজিলতের কথা কোথাও বলা হয়নি। এটাকে ইসলামি স্কলাররা সমর্থন করেন না। সুতরাং জুমাতুল বিদা বলে নতুন কিছু রসম-রেওয়াজ পালন করা থেকে সবার বিরত থাকা কর্তব্য।