রমজান মাসের প্রথম আমল চাঁদ দেখা

, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক | 2023-09-01 19:22:53

প্রত্যেক এলাকার মুসলমানদের ওপর আরবি মাসের হিসাব রাখা এবং মাসের শুরুতে চাঁদ দেখা ফরজে কেফায়া। কিছু লোক যদি দেখে নেয় তাহলে সবাই দায়িত্বমুক্ত হবে। অন্যথায় কেউ না দেখলে সবাই গোনাহগার হবে।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে চাঁদ দেখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও দেখার প্রতি উৎসাহিত করতেন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মাসের নতুন চাঁদ দেখে এ দোয়া পড়তেন,

‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমান। ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলাম ওয়াত তাওফিকু লিমা ইউহিব্বু রাব্বুনা ওয়া ইয়ারদা, রাব্বুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’ -সুনানে দারেমি, হাদিস- ১৭২৯, সুনানে তিরমিজি, হাদিস- ৩৪৫১

এছাড়াও বিভিন্ন হাদিস শরীফে আরও কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) চাঁদ দেখার বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিতেন।

চাঁদ দেখার বিবিধ মাসয়ালা

মুসলিম সরকার কর্তৃক অনুমোদিত চাঁদ দেখা কমিটি যদি অভিজ্ঞ মুফতি ও আলেমদের সমন্বয়ে গঠিত হয় এবং ওই কমিটি ইসলামি শরিয়তের নীতিমালা অনুযায়ী চাঁদ দেখার ঘোষণা দেন, তাহলে তাদের ঘোষণার ওপর সবার আমল করা আবশ্যক। অন্যথায় তাদের ঘোষণা অনুযায়ী আমল করা জরুরি না। বরং এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুফতিরা যদি শরিয়তসম্মত পন্থায় চাঁদ দেখার ঘোষণা দেন, তাহলে তাদের ঘোষণা অনুযায়ী আমল করা সবার জন্য জরুরি। -আল বাহরুর রায়েক: ২/২৬৬ ও আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৪৬৬

আকাশ অপরিষ্কার থাকলে রমজানের চাঁদ প্রমাণিত হওয়ার জন্য চাঁদ প্রত্যক্ষকারী একজন সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন বালেগ, শরিয়তের অনুশাসন মান্যকারী নির্ভরযোগ্য মুসলমান হতে হবে। এক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর একই হুকুম। ঈদের চাঁদ দেখার জন্যও অনুরূপ গুণসম্পন্ন দু’জন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দু’জন নারী হতে হবে। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১৯৭

আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে রমজান ও ঈদের চাঁদ দেখার শরয়ি বিধান হলো- এত সংখ্যক লোক চাঁদের সাক্ষ্য দেওয়া জরুরি; যার দ্বারা চাঁদ দেখা কমিটি বা শরয়ি কাজী বা দেশের বিশিষ্ট অভিজ্ঞ মুফতিদের কাছে তা দৃঢ় বিশ্বাস্য হয়ে যায়। এর বিশেষ কোনো সংখ্যা নির্ধারিত নাই। -হেদায়া: ১/১১৯

ইসলামি শরিয়তের নীতি হলো, মানুষ যে দেশে বাস করে সে দেশে স্বীকৃত চাঁদ হিসেবে রোজা রাখবে ও ঈদ করবে। প্রত্যেক দেশে যেহেতু সূর্য উদয় ও অস্ত এক সময় হয় না, ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হয়ে থাকে তাই নির্ভরযোগ্য মতানুসারে যে দু’দেশের মাঝে চাঁদ দেখার দিন তারিখ হিসেবে এক দিনের বেশি ব্যবধান হয়, সে ক্ষেত্রে এক দেশে চাঁদ দেখার দ্বারা অন্য দেশের ওপর চাঁদ উদয়ের বিধান বর্তাবে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যেহেতু বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মাঝে চন্দ্র উদয় ও অস্ত যাওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান এক দিনের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তাই সৌদি আরবে রোজা বা ঈদের চাঁদ দেখা গেলে বাংলাদেশে রোজা ও ঈদের হুকুম দেওয়া যাবে না। এ কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে সৌদির অনুসরণে রোজা ঈদ পালন করা বৈধ নয়। -তাবঈনুল হাকায়েক: ১/৩২১

যদি কেউ সৌদি আরব থেকে ২৯টি রোজা রেখে পরের দিন ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঈদ পালন করে এবং ঈদের দিন বা পরদিন বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয়, আর বাংলাদেশে দিনের বেলা পৌঁছে জানতে পারে আজ ৩০তম রোজা এবং আগামীকাল ঈদ। এক্ষেত্রে সে মুসলমানদের সাথে একাত্বতা প্রকাশ ও রমজান মাসের সম্মান মর্যাদার খাতিরে ওই দিনের বাকী অংশ রোজাদারের ন্যায় খানা-পিনামুক্ত থাকবে এবং পরের দিন সবার সঙ্গে ঈদ করবে। দ্বিতীয় বার নফলের নিয়তে সবার সঙ্গে ঈদের জামাতে শরিক হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক: ৭৩০৪ ও আপকে মাসায়েল: ২/৪১৬

এমএইউ/

এ সম্পর্কিত আরও খবর