অবৈধ সম্পদ ইবাদত-বন্দেগি কবুলের অন্তরায়

, ইসলাম

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক | 2023-08-30 21:09:20

রোজার অন্যতম অনুষঙ্গ তারাবির নামাজ। এটা আলাদা একটি ইবাদতও বটে। আজ অনুষ্ঠিত প্রথম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াতকৃত অংশের বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে, সম্পদের অবৈধ ভোগদখল।

এ বিষয়ে সূরা বাকারার ১৮৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং মানুষে ধন-সম্পদ জেনেশুনে অন্যায়ভাবে আত্মসাত করার উদ্দেশে বিচারকের নিকট পেশ করো না।’

এ বিষয়টি পবিত্র কোরআনের আরও কয়েক স্থানে আলোচিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা অন্যায়ভাবে এতিমের সম্পদ গ্রাস করে তারা নিজেদের পেটে আগুন ভক্ষণ করে। তারা জ্বলন্ত আগুনে জ্বলবে।’ –সূরা আন নিসা: ১০

‘হে মুমিনগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না।’ –সূরা আন নিসা: ২৯

পবিত্র কোরআনে যেভাবে অবৈধ সম্পদ ভোগের ওপর সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, ঠিক সেভাবে এর বিপরীত আদেশে ভোগ করতে বলা হয়েছে শুধুমাত্র ওই সম্পদ থেকে যা বৈধ পন্থায় উপার্জিত। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র তা থেকে ভোগ করো। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ –সূরা আল বাকারা: ১৬৮

‘আল্লাহ তোমাদের যা দিয়েছেন তা থেকে যা বৈধ ও পবিত্র তা ভোগ করো। আল্লাহর নেয়ামতসমূহের শোকরিয়া আদয়া করো, যদি কেবল তারই ইবাদতকারী হয়ে থাকো।’ –সূরা আন নাহল: ১১৪

পবিত্র হাদিসেও এ বিষয়ে অনেক কঠোর ও উদ্দীপক কথা বলা হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অবশ্যই মহান আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোনো কিছু কবুল করেন না। তিনি রাসূলগণকে যা আদেশ করেছেন মুসলিমদেরও তাই আদেশ করেছেন। তিনি বলেছেন, হে রাসূলগণ! হালাল খাও এবং নেক আমল করো। তিনি আরও বলেছেন, হে ঈমানদারগণ! আমার দেওয়া রিজিকের হালাল অংশ খাও।

অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন, যে দীর্ঘ সফর করেছে, চুল-দাড়ি এলোমেলো হয়ে ধুলায় মেখে গেছে। সে আকাশের দিকে দুই হাত পেতে বলছে করুণ কন্ঠে বলছে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রভু! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম, তার দেহ গঠিত হয়েছে হারাম দ্বারা। এমতাবস্থায় তার দোয়া কীভাবে কবুল হবে? –সহিহ মুসলিম: ২৩৯৩

কোনো মানুষ হারাম পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে তা থেকে দান করলে তার দান আল্লাহর কাছে কবুল হয় না, নিজের প্রয়োজনে খরচ করলে তার খরচে বরকত দেওয়া হয় না, মৃত্যুর সময় ওয়ারিশদের জন্য রেখে গেলে তার জাহান্নামের শাস্তি বাড়ায়। হারাম মাল দান করার কারণে আল্লাহ গোনাহ ক্ষমা করেন না। বরং হালাল মাল দান করার কারণে গোনাহ ক্ষমা করেন। -মুসনাদে আহমাদ: ৩৬৭২

অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, দেহের যে গোশত হারাম আয় দ্বারা তৈরি হবে তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বরং জাহান্নাম হবে তার জন্য অধিক উপযুক্ত স্থান। -মুসনাদের আহমাদ: ১৪৪৪১

হাশরের মাঠে চারটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ব্যতীত কোনো মানুষ তার স্থান থেকে এক পা নড়তে পারবে না। তার মধ্যে তৃতীয় প্রশ্ন হবে, দুনিয়ার জীবনে সম্পদ কীভাবে উপার্জন করেছো এবং কোথায় ব্যয় করেছো? –সুনানে তিরমিজি: ২৪১৭

উল্লেখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিসসমূহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, বৈধ সম্পদ ইবাদত কবুলের ও জান্নাতে প্রবেশের পূর্বশর্ত। রিজিক হারাম হলে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, জিকির ও দান-খয়রাত থেকে শুরু করে কোকো ভালো কাজ এবং আমল আল্লাহর কাছে কবুল হয় না।

কেউ যদি মনে করেন, সারাজীবন সরকারি সম্পদ অবাধে লুটপাট করে, জনগণের ভূমি দখল করে, ঘুষের টাকা দিয়ে বিশাল বিত্ত-সম্পদের মালিক হবো। শেষ জীবনে কিছু টাকা দিয়ে হজ করবো আর একটা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করবো। এতে আমি ও আমার সব সহায়-সম্পদ পবিত্র হয়ে যাবে; আল্লাহ আমার প্রতি খুশি হয়ে যাবে। এমন ধারণা ভুল। এমন চিন্তা তার মন ও জ্ঞানের সঙ্গে প্রতারণা বৈ অন্য কিছু নয়। এ বিষয়ে সূরা বাকারার ১৮৮ নম্বর আয়াতের বলা হয়েছে, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্মসাত করার উদ্দেশে শাসন কর্তৃপক্ষের কাছে নিয়ে যেয়ো না।’

এ আয়াত দ্বারা আরও বুঝে আসে, আদালতের রায়ের কারণে বা সরকারের সুযোগ দেওয়ার কারণে কারো জন্য তার হারাম সম্পদ কখনও হালাল হয় না।

তাই আসুন, পবিত্র রমজানের এ শুভক্ষণে ইমানি চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সব ধরণের দুর্নীতিকে ‘না’ বলি। সকল অবৈধ সম্পদ পরিহার করি। শত কষ্ট হলেও হালাল রিজিকের ওপর নিজের জীবন-যাপনকে সীমিত রাখার শপথ নেই।

এমএইউ/

এ সম্পর্কিত আরও খবর