রোজাদারের জন্য রয়েছে জান্নাতের বিশেষ দরজা

, ইসলাম

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক | 2023-09-01 03:09:42

আরবি মাসসমূহের নবম মাস হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। আর রোজা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে।

রোজা ফরজ হওয়া প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি, যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো, পরহেজগার হতে পারো।’

বর্ণিত আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি, রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে তাকওয়া অর্জনের জন্য, গোনাহ বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাতের উপযোগী হয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য।

রোজার প্রতিদান

বোখারি শরীফে বর্ণিত হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার অতীতের গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে।’

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রোজা এবং কোরআন হাশরের ময়দানে মানুষের জন্য সুপারিশ করবে এবং আল্লাহতায়ালা তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করবেন।’

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরও বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘প্রত্যেক বস্তুর জাকাত রয়েছে, তেমনি শরীরেরও জাকাত আছে, আর শরীরের জাকাত হচ্ছে- রোজা পালন করা। অর্থাৎ জাকাতদানে যেভাবে মালের পবিত্রতা অর্জিত হয়, তেমনিভাবে রোজা পালনের মাধ্যমে শরীর পবিত্র হয়, গোনাহমুক্ত হয়।’

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)হতে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মানুষের প্রত্যেক আমলের সওয়াব দশ গুণ হতে সাত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়।’

হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রোজা এ নিয়মের ব্যতিক্রম, কেননা তা বিশেষভাবে আমার জন্য আমি স্বয়ং তার প্রতিদান দেব, বান্দা তার পানাহার ও কামনা–বাসনাকে আমার সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করেছে।’

গোনাহ বর্জনের অঙ্গীকার করতে হবে

রোজার মাসে শুরুতে আল্লাহ জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেন, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেন এবং শয়তানকে শিকলবদ্ধ করে রাখেন। তাই রমজান মাসে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। নেক কাজে অগ্রগামী হওয়া যায়।

আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের অনেক জায়গায় শয়তানকে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘শয়তান তোমাদের শত্রু, তাকে শত্রু হিসেবেই গ্রহণ করো।’ সে চায় মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করতে, মদ-জুয়ায় নিমগ্ন রাখতে, মিথ্যা বলায় উদ্বুদ্ধ করতে, এককথায় খারাপ কাজে জড়িয়ে দেওয়াই শয়তানের কাজ।

তাই হাদিস শরীফে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা ও তৎসংক্রান্ত কাজ পরিত্যাগ করলো না, তার রোজা রাখার আমার কোনো প্রয়োজন নেই।’ তাই শয়তানি কার্যক্রম থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে এবং আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে হবে।

রোজাদারের জন্য জান্নাতের বিশেষ দরজা

হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে একটি দরজার নাম- ‘রাইয়ান।’ এ দরজা দিয়ে শুধু রোজাদাররা প্রবেশ করবে। অন্যরাও এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে চাইবে। কিন্তু রোজাদার ব্যতীত অন্য কাউকে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ রয়েছে, একটি তার ইফতারের সময়, অপরটি হলো- আল্লাহতায়ালার সাক্ষাতের সময়।

হাদিসে আরও উল্লেখ রয়েছে, ইফতারের সময় দোয়া কবুলের সময়। আল্লাহতায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করেন। আর এই সময়ের দোয়া হচ্ছে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিয়াত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরা লি জুনুবি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর