আলেকজান্ডারের দেশ মেসিডোনিয়ার মসজিদগুলো রমজানে মুসল্লিতে ভরপুর থাকে

, ইসলাম

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক | 2023-08-31 09:25:18

ইউরোপের অনন্য এক ঋতুর দেশ বলা হয় মেসিডোনিয়াকে। ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে এদেশের ঋতু এবং রূপবৈচিত্র ভিন্ন হওয়ায় পর্যটকদের কাছে মেসিডোনিয়া বেশ প্রিয়। প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনগুলো দেশটিতে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে। রয়েছে প্রাচীন অসংখ্য ধর্মীয় নিদর্শন।

ইতিহাসখ্যাত ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট কিং’-এর জন্ম এই মেসিডোনিয়াতেই।

২৫ হাজার ৭১৩ বর্গকিলোমিটারের দেশ মেসিডোনিয়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। রাজধানীর নাম স্কোপজে।

দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ অর্থডক্স চার্চের অনুসারী। মুসলিম ৩৩ শতাংশের বেশি। দেশটিতে ১২ শত চার্চ এবং পাঁচ শ’ মসজিদ রয়েছে।

মেসিডোনিয়া ইউরোপের অন্যতম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। সংখ্যা এবং অনুপাতে এর চেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত ইউরোপীয় দেশ হচ্ছে তুরস্ক, কসোভো, আলবেনিয়া, বসনিয়া হার্জেগোভিনা। কসোভো, আলবেনিয়া ও হার্জেগোভিনার মোট জনসংখ্যার যথাক্রমে ৯০, ৭০ এবং ৪৮ শতাংশ মুসলিম।

২০১২ সালের শুমারি অনুযায়ী মেসিডোনিয়ায় মুসলিমদের সংখ্যা ৮ লাখের মতো।

স্পেনে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মুসলিম ধর্মপ্রচারক ও জ্ঞানান্বেষীরা ছাড়িয়ে পড়েন। তাদের মাধ্যমে মেসিডোনিয়া সর্বপ্রথম ইসলামের পরিচয় লাভ করে।

মুসলিম ধর্মপ্রচারকরা সেখানে মসজিদ ও ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ১৩৮২ খ্রিস্টাব্দে উসমানিয় শাসকগণ মেসিডোনিয়া বিজয় করেন এবং তাদের সহযোগিতায় সেখানে দ্রুত ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত প্রথম বলকান যুদ্ধ পর্যন্ত তুর্কিরাই কার্যত মেসিডোনিয়া শাসন করে।

উসমানিয় শাসকরা মেসিডোনিয়ায় বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। উসমানিয় শাসন আমলে গড়ে তোলা পাঁচ শতাধিক মসজিদ এখনও মেসিডোনিয়ায় টিকে আছে।

মুসলিম শাসন অবসানের পর মেসিডোনিয়ার মুসলিম জনসংখ্যা ক্রমশ কমতে থাকে। ১৯২১ সাল থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত মুসলিম জনসংখ্যা ৩১ ভাগ থেকে ২৪ ভাগে নেমে আসে। ১৯৭১ সাল থেকে মুসলিম জনসংখ্যা আবারও বাড়তে থাকে।

বর্তমানে মেসিডোনিয়ার মুসলিম জনসংখ্যার হার ৩৩ ভাগ। যা ২০৫০ সাল নাগাদ ৫৬ ভাগে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মেসিডোনিয়ার মুসলিম জনগণের অধিকাংশই আলবেনিয় ও তুর্কি বংশোদ্ভূত। বাকিরা বসনিক ও স্থানীয়।

মেসিডোনিয়া ইউরোপিয়ান দেশ হলেও এখানকার মুসলিম জীবনে তুর্কি সংস্কৃতির প্রভাবই বেশি। খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে ধর্মীয় উদযাপন পর্যন্ত সবকিছুতেই তারা তুর্কি সংস্কৃতির অনুসারী। দীর্ঘদিন তুর্কি শাসনাধীন থাকায় এর প্রধান কারণ।

বলকান অঞ্চলের মুসলিমদের মধ্যে মেসিডোনিয়ান মুসলিমরাই রমজানের আগমনে সবচেয়ে বেশি উল্লসিত হয়। মেসিডোনিয়ার সর্বস্তরের মুসলিমরা, এমনকি ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ও পণ্ডিতরা সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলে রমজানকে স্বাগত জানায়। সাধারণ মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদে মসজিদে ধর্মীয় আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

মসজিদে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথিদের উপস্থিত করা হয়। কখনও কখনও বলকান অঞ্চলের অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে ইসলামিক স্কলারদের আমন্ত্রণ করা হয়।

বিশ্বর অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের মতো রমজানে মেসিডোনিয়ান মুসলিমরাও ইবাদত-বন্দেগিতে গভীরভাবে মনোযোগী হন। দিন-রাতের দীর্ঘ সময় মসজিদে কাটায়। প্রতিটি মসজিদে ধীরস্থীরভাবে নিয়মমাফিক তারতিলের সঙ্গে কোরআন খতম করা হয়। অনন্য এক আবহ তৈরি হয়, জেগে থাকে মসজিদগুলো দিনরাত মুসল্লিদের আগমনে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর