মসজিদে নববীর রাস্তায় শিশুরা ইফতার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে

, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক | 2023-09-01 19:42:48

পবিত্র রমজানে ইফতারে পরস্পর সহমর্মিতার অপরূপ নিদর্শন দেখা যায় মদিনার মসজিদে নববীতে। প্রতিদিন সেখানে বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ রোজা পালনকারী ইফতার করে থাকেন। মসেজিদের নববীতে আসরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় ইফতার পরিবেশনের প্রস্তুতি।

এখানে প্রায় ১২ হাজার মিটার জায়গাজুড়ে দস্তরখানা বিছিয়ে ইফতার পরিবেশন করা হয়। ওই ইফতারে মদিনার স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ি থেকে খেজুর ও নানা ধরনের খাবার নিয়ে আসেন। ওই খাবারগুলো সেখানে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের ওমরা পালনকারী ও রোজাদারদের মাঝে বিতরণ করা হয়। রমজানে প্রতিদিন মসজিদে নববীতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের ইফতারের আয়োজন করেন মদিনার বিত্তবানরা।

শত বর্ষের এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে দেশটিতে ইফতারের সময় বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মসজিদে নববীর রাস্তায় রাস্তায় শিশুরা দাঁড়িয়ে যায় ইফতার নিয়ে।

সাধারণত মসজিদের ভেতর খেবসা (এক ধরনের বিরিয়ানি, সৌদি আরবের জাতীয় খাবার) নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। খাবারের মধ্যে থাকে খেজুর, লাবান (টক দই), শরবত, ফল, লাচ্ছি, রুটি, চা ও কফি। তৃষ্ণা নিবারণে থাকে জমজমের পানি।

মসজিদের বাইরের ময়দানে থাকে খেবসাসহ নানা ধরনের খাবার। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা নবীপ্রেমিদের আপ্যায়নে দুপুর থেকে শুরু হয় ইফতার তৈরির কাজ। কেউ নিজ বাড়িতে, কেউ রেস্টুরেন্ট থেকে ইফতার বানিয়ে পরিবেশন করেন। এ ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পিছিয়ে থাকেন না।

মসজিদে নববীতে ইফতারের আয়োজনে কোনো রকম কমতি থাকে না। মদিনার বাসিন্দারাই এই বিপুল ইফতারের মূল জোগানদাতা। মসজিদের কোনায় কোনায় থরে থরে সাজানো থাকে খেজুর, রুটি, দই, পানিসহ নানা খাদ্যদ্রব্য। কোনো কিছুরই অভাব নেই। যার যত ইচ্ছা খাও।

ইফতারের জন্য মসজিদে নববীতে আসরের নামাজের আধা ঘণ্টা পর থেকে ইফতার সামগ্রী গ্রহণ করা হয়। চারটি কর্নার দিয়ে বৈধ ইফতার সামগ্রী প্রবেশ করানো হয়। ইফতার শেষে মাগারিবের নামাজের ইকামাত হওয়ার আগেই পরিচ্ছন্নকর্মী, সুপারভাইজার ও যারা ইফতার সামগ্রী নিয়ে আসেন তারা মিলে সব উচ্ছিষ্ট সরিয়ে নেন।

মসজিদের মূল চত্বরের বাইরে পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক স্থানে ইফতার আয়োজন করা হয়।

রোজাদারদের আতিথেয়তায় মসজিদে নববীর আয়োজন অনন্য। বলে বুঝানোর উপায় নেই যে, মদিনাতে ইফতারের মধ্য দিয়ে যে উৎসব হয়, পৃথিবীর আর কোথাও এর তুলনা মেলা ভার। এখানে রোজাদারদের ইফতার করানোর জন্য যে আকুতি তা প্রতিযোগিতায় রূপ নেয়। তবে বলে রাখা ভালো এ প্রতিযোগিতা কোনো অসুস্থ প্রতিযোগিতা নয়। রোজাদারদের খেদমতের মাধ্যমে নেকি অর্জনই প্রধান উদ্দেশ্য। সেজন্য এখানকার মানুষ মন থেকে চেষ্টা করেন দেশি-বিদেশি রোজাদারদের সর্বোচ্চ খেদমতের।

শুধু যে সৌদি আরবের বাসিন্দারা ইফতারের আয়োজন করেন তা নয়। শুধু ইফতার খাওয়ানোর নিয়তে তুরস্ক, মিসর, কাতার, ওমান, দুবাই থেকেও বিত্তশালীরা মদিনায় আসেন। এসব আরব বিত্তবান শেখ শুধু মসজিদে নববীর ইফতার আয়োজনে লাখ লাখ রিয়াল ব্যয় করেন। তবে মজার বিষয় হলো, মদিনায় ইফতার করানোর সুযোগ পাওয়া খুব সহজ কিছু নয়। বিভিন্ন দেশের আরব শেখরা মাস খানেক আগে থেকেই তাদের ইফতার আয়োজনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। আগ্রহীর সংখ্যা এত বেশি যে এক কোটি মুসল্লিকেও ইচ্ছা করলে একত্রে ইফতার করানো কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু স্থান সংকুলানের কারণে অনেকটা টেন্ডারের পদ্ধতিতেই ইফতার আয়োজনের কোটা বরাদ্দ করেন মসজিদে নববী কর্তৃপক্ষ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর