রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না

, ইসলাম

মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, অতিথি লেখক | 2023-09-01 21:01:18

মানুষের মধ্যে গুণাহ করার প্রবণতা স্বভাবজাত। এটা মানুষের একটি অভ্যাসও বটে। কিছু মানুষ শয়তানের কুমন্ত্রণার কারণে গুণাহের কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে না। অনেকে আবার অপরাধ করার পর ভুল বুঝতে পারে, এটাও কিছু মানুষের গুণ। এই গুণের কারণে মানুষ গুণাহ করার কারণে অনুতপ্ত হয়, তওবা করে।

তওবা প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে ধাবমান হও এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের ন্যায়, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন, যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের গুণাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ব্যতীত কে পাপ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করে ফেলে, জেনেশুনে তার পুনরাবৃত্তি করে না।’ -সূরা আল ইমরান: ১৩৩-৩৫

গুণাহ করার পর ভুল বুঝতে পেরে তা থেকে তওবা না করা, গুণাহের কাজে অবিচল থাকা, কিংবা গুণাহের কাজ চালিয়ে যাওয়া মারাত্মক অপরাধ। যা আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়। এতে আল্লাহ নারাজ হন। আল্লাহতায়ালা চান- মানুষ তওবা করুক, ফিরে আসুক। কারণ, গুণাহগার হলেও সেতো আল্লাহরই বান্দা! তাই বান্দা হিসেবে মানুষ যত গুণাহ করুক না কেন, গুণাহের পথ থেকে ফিরে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ক্ষমাশীল আল্লাহতায়ালা তার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব গুণাহ ক্ষমা করে দেন।

আল্লাহতায়ালা কোরাআনে কারিমে বলেছেন, ‘বলো, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ সব পাপ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ -সূরা যুমার: ৫৩

এখন চলছে রমজানের দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত। মাগফিরাতের দশকে বান্দার জন্য বিশেষ করণীয় হচ্ছে, পূর্বের সব গুণাহ থেকে বাঁচার জন্য খাঁটি অন্তরে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া। আল্লাহর দরবারে তওবার দরজা সবসময় খোলা থাকলেও রমজান মাস গত হলে মাগফিরাত কামনার এই বিশেষ সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। তাই, মাগফিরাতের দশককে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা।

হাদিসে বলা হয়েছে, রোজাদারের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। আরও বলা হয়েছে, রমজানে রোজাদারকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা। গুণাহ মাফের জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া করা। রমজান মাসের শেষ রাতগুলো দোয়া, তওবা ও ইস্তেগফার করার সবচেয়ে উপযোগী সময়।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে তখন আল্লাহতায়ালা নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং ঘোষণা করতে থাকেন, কে আমাকে ডাকছো! আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। কে প্রার্থনা করেছো, আমি তাকে দান করবো। কে আছো ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

রমজান মাসে শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে তাসবিহ-তাহলিল পাঠ ও তওবা-ইস্তেগফার করার সুযোগ অন্য মাসের তুলনায় একটু বেশি। কেননা সাহরি খাওয়ার জন্য শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠতেই হয়, তাই এই সময়টাকে বরকত মনে করে আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করা। দু'ফোটা চোখের পানি ফেলে মাগফিরাত কামনা করা। হতে পারে আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করে দেবেন।

আল্লাহতায়ালা রমজানের রোজা ফরজ করেছেন, যেনো বান্দারা সারা বছরের গুণাহ ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে তওবা করে মাগফিরাত লাভে সচেষ্ট হয়। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত। আল্লাহর এই রহমত থাকা সত্ত্বেও অনেক হতভাগা বঞ্চিত হয় রমজান মাসের রহমত লাভ থেকে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

হাদিসে এসেছে, হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘অনেক রোজাদার আছেন যাদের ভাগ্যে ক্ষুধা-পিপাসা ছাড়া আর কিছুই জোটে না, অনেকে সারারাত যাপন করেন, কিন্তু তা রাত্রি জাগরণ ছাড়া আর কিছুই হয় না।’ -সহিহ মুসলিম

সুতরাং রমজানের অতীত জীবনের কৃত পাপ থেকে একনিষ্ঠভাবে তওবা করা। পাপের পথে না যাওয়ার, পাপের কাজ আর না করার অঙ্গিকার করা। আল্লাহতায়ালা সবাইকে পাপমুক্ত রমজান ও জীবন নসিব করুন। আমিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর