সার্বিক উন্নতির জন্য তওবা

, ইসলাম

মুফতি মুহাম্মদ তাসনীম, অতিথি লেখক | 2023-08-28 03:57:13

পবিত্র রমজান মাস দোয়া কবুল ও আত্মশুদ্ধির মাস। পাপ-পঙ্কিলতার যেসব আবর্জনা আমাদের হৃদয়ে জন্মেছে ও জমে আছে, সেসবের জন্য তওবা করে ক্ষমা চাওয়া জরুরি।

ক্ষমা কিভাবে চাওয়া উচিত? ধরুন আপনার সন্তান মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিংবা কোনো সঙ্কটে পড়েছে। কিছুতেই রোগ সারছে না, সঙ্কটের সমাধানও হচ্ছে না। এমতাবস্থায় আপনি যদি কাবা শরিফে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন তখন আপনি নিশ্চয়ই খুব আন্তরিকভাবে ও ব্যাপক আশাবাদ নিয়েই ওই সঙ্কট সমাধানের জন্য দোয়া করবেন।

অতীত জীবনের গোনাহ মাফের জন্যও ঠিক এমন গভীর আকুলতা, আন্তরিকতা ও আশাবাদ নিয়ে তওবা করতে হবে। যে গোনাহ হয়ে গেছে তা আর কখনও না করার জন্য দৃঢ়সংকল্প করতে হবে।

কিন্তু দেখা গেল ভুল করে অথবা শয়তানের ধোঁকায় লিপ্ত হয়ে আবারও সেই একই গোনাহের কাজ হয়ে গেলো। এভাবে শতবার তওবা ভাঙার পরও তওবার দরজা খোলা থাকে। কিন্তু তওবা করার সময় এমন মনোভাব থাকা উচিত নয় যে, এখন তওবা করছি ঠিকই; সুযোগ পেলে আবারও সেই পাপ করবো! যে এমন অনুতাপহীন মনোভাব নিয়ে তওবা করে সে আসলে নিজেকেই উপহাস করে বলে হাদিস বলা হয়েছে। আল্লাহতায়ালার দরবারে এমন কপট মনোভাব নিয়ে তওবা করার মতো লজ্জাহীন হওয়া কিভাবে সম্ভব?

যে ব্যক্তি কোনো গোনাহ করে না তারও ইস্তিগফার বা তওবা করা উচিত। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিদিন অন্তত শতবার তওবা করতেন। নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের উচিৎ আরও বেশি পরিমাণে তওবা করা।

গিবত করা, অন্যের ক্ষতি করা, মিথ্যা কথা বলা বা কু-দৃষ্টি দেওয়া; এ জাতীয় কোনো গোনাহ করেন না- সমাজে এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। যে এমন কোনো গোনাহ করেন না, তারও উচিত ইস্তিগফার করা। কারণ এ ধরনের মানুষ যখন চলাফেরা করেন তখন আশপাশের সাধারণ মানুষদের দেখে তার মনে এমন ভাব আসতে পারে যে, এই মানুষগুলো কতোই না গোনাহ করছে, কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার মতো মানুষ এসব পাপে মশগুল না। এভাবে অন্যদের ছোট ভাবা, হিংসা, লোভ ও পরনিন্দার মতো পাপ মানুষকে নিচে নামিয়ে দেয়। তাই সবারই ইস্তিগফার করা জরুরি।

নবী-রাসূলরা নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও তওবা করেছেন। আল্লাহর অলিরা এ পথেই অগ্রসর হয়েছেন। তওবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছেন। আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরও উচিৎ বেশি বেশি তওবা-ইস্তিগফার করা। তওবা, ক্ষমা ও আল্লাহর দরবারে করা প্রাণস্পর্শী দোয়া আল্লাহতায়ালা খুব পছন্দ করেন। খোদাপ্রেমের আকুতি, তার সন্তুষ্টি লাভের চিন্তায় অস্থির অবস্থাগুলো বান্দার বিনয় প্রকাশ করে।

ইসলামি স্কলাররা বলেন, যে দোয়ায় আল্লাহর শাস্তির প্রতি তীব্র ভয়, আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের প্রবল ইচ্ছা থাকে- সে দোয়া বিফলে যায় না।

এক কথায় বলা চলে, সবার উচিত তওবা করা। রমজানে তওবা কবুলের বিশেষ সুযোগ রয়েছে। কাজেই আমাদের উচিৎ রমজানের ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করা। পাপের কারণে আল্লাহর রহমত থেকে মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে, এ বাধা দূর করার জন্য তওবা করা। আল্লাহতায়ালার দয়া, অনুগ্রহ ও করুণা প্রাপ্তির জন্য তওবা করা। মোদ্দাকথা, আমাদের সার্বিক উন্নতির জন্যই এটা জরুরি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর