আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে ইতিকাফ

, ইসলাম

মুফতি রহিমুল্লাহ শরীফ, অতিথি লেখক | 2023-09-01 23:31:23

আরবি ইতিকাফ শব্দের অর্থ অবস্থান করা। ইসলামি পরিভাষায় ইতিকাফ বলে পাকপবিত্র অবস্থায় নিয়তসহকারে মসজিদে অবস্থান কর। যেহেতু ইতিকাফকারী পার্থিব সমস্ত ব্যাস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে আল্লাহর ঘরে আবদ্ধ রাখেন- এজন্য তাকে মুতাকিফ বলা হয়।

ইসলামি শরিয়তে ইতিকাফের অবস্থান
ইতিকাফ মূলতঃ তিন প্রকার। ওয়াজিব ইতিকাফ, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ইতিকাফ ও নফল ইতিকাফ।

এখানে আলোচনা করা হবে, রমজানের শেষ দশদিনের ইতিকাফ নিয়ে। রমজানের শেষ দশদিনের ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া।

নবী করিম সা.-এর ইতিকাফ
মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি বছর ইতিকাফ করেছেন। দাওয়াত, তরবিয়ত, শিক্ষা ও জিহাদে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি। এগারো হিজরি বার রবিউল আওয়াল তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন আর শেষ বছর তথা দশম হিজরিতে বিশদিন ইতিকাফ করেছেন।

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণী হজরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষের দশকে ইতিকাফ করেছেন ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপর তার স্ত্রীরা ইতিকাফ করেছেন। -সহিহ বোখারি: ২০২৪, সহিহ মুসলিম: ১১৭২

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফে কাটান। -সহিহ বোখারি: ২০৪৪

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহ আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতেন। তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সেবার বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন। -সহিহ বোখারি: ৩০৯

ইতিকাফের ফজিলত
ইতিকাফ একটি মহান ইবাদত। ইতিকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্য সব বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিকভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধনায়।

ইতিকাফকারী যদি মসজিদে কিছু না করে বসেও থাকে তবু সে ইবাদতগুজার হিসেবে গণ্য হয় এবং সে মসজিদে বসে বসে অসংখ্য আমলের সওয়াব লাভ করে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলিইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইতিকাফকারী ব্যক্তি গোণাহ থেকে মুক্ত এবং তাকে সে পরিমাণ সওয়াবের বিনিময় দান করা হয় (যা ইতিকাফে থাকার কারণে তার সুযোগ হয়নি) যা আমলকারী ব্যক্তি পেয়ে থাকে। -মিশকাত: ১-১৮৩

অন্য বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করে আল্লাহ তার এবং জাহান্নামের মাঝখানে তিন খন্দক পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করে দেন আর এক খন্দকের দূরত্ব জমিন থেকে আসমানের দূরত্বের সমান। -আত তারগিব ওয়াত তারহিব: ২-৯৬

আর রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফে থাকলে শবেকদর পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।

হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি (প্রথমে) এ রাতের সন্ধানে প্রথম দশে ইতিকাফ পালন করি। অতপর ইতিকাফ পালন করি মাঝের দশকে। পরবর্তীতে অহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশকে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশকে) ইতিকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সঙ্গে ইতিকাফ পালন করল। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমাকে তা এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাঁদা ও মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অতপর রাসূলুল্লাহ (সা.) একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল্লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দাঁড়ালেন তখন আকাশ ছেপে বৃষ্টি নেমে এলো এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়লো। আমি কাঁদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজরের নামাজ শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাঁদা। সেটি ছিল একুশের রাত। -সহিহ মুসলিম: ১১৬৭

এ সম্পর্কিত আরও খবর