আজ পবিত্র আশুরা

ইসলামি খবর, ইসলাম

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-23 15:09:22

আজ মহররম মাসের ১০ তারিখ। পবিত্র আশুরা আজ। ইসলামের ধর্মতাত্ত্বিক ইতিহাসের ধারায় এ দিন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

আশুরা দিনটি বিশ্ব মুসলিমের কাছে গভীর বেদনা, ত্যাগ ও শোকের। ৬১ হিজরি মোতাবেক ৬৮০ সালের এই বেদনাবিধুর ও শোকাবহ দিনে আরব জাহানের ইরাক দেশের কারবালা প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল সত্য ও মিথ্যার লড়াই। সত্যের আলোক শিখা নির্বাপিত করার হীন উদ্দেশ্যে মিথ্যা, অসৎ ও অসত্য মতের ক্ষমতালোভী বাহিনী চালিয়েছিল মানবতাবিরোধী নৃশংস হত্যাযজ্ঞ।

ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র, ন্যায়পন্থী ইমাম হোসাইন (রা.) অন্যায় ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এই দিনে চক্রান্তকারী ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে কারবালা প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেন। দিনটি একদিকে শোকের ও বেদনার, অন্যদিকে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের উজ্জ্বল উদাহরণ।

কারবালা প্রান্তরের সেই মর্মান্তিক ঘটনা শুধু ইসলামের ইতিহাসেই নয়, বিশ্ব ইতিহাসেরও একটি কালো দিবস। কারণ উমাইয়া শাসক ইয়াজিদ অবৈধভাবে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে এবং এ জন্য ষড়যন্ত্র ও বলপ্রয়োগের পথ বেছে নেয়। মহানবী (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হাসান (রা.)-কে বিষপানে হত্যা করে ষড়যন্ত্রকারীরা।

অন্যদিকে, ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন ও ৭২ জন সঙ্গীসহ শাহাদাত বরণ করেন মহানবী (সা.)-এর আরেক দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)।

এই হত্যাকাণ্ড ছিল অত্যন্ত নির্মম। অসহায় নারী ও শিশুদের পানি পর্যন্ত পান করতে দেয়নি ইয়াজিদ বাহিনী। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণে প্রতিটি মানবতাবাদী মানুষ শোকসন্তপ্ত আবেগে তাড়িত হন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন।

হাদিস অনুযায়ী, মহররমের ১০ তারিখ ইসলামের ইতিহাসে আরও অনেকগুলো কারণেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারবালা প্রান্তরে পরিবার-পরিজন, সঙ্গী-সাথিসহ হজরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদাত বরণের মর্মান্তিক ঘটনার আগেও এই তারিখে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। আদি মানব হজরত আদম (আ.) এই দিনে পৃথিবীতে আগমন করেন, তাঁর তওবা কবুল হয় এই দিনেই। এই দিনে হজরত নূহ (আ.)-এর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে রক্ষা পায়। এমন বহু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে মহররম মাসের ১০ তারিখ আশুরার দিনে।

আশুরার মূল চেতনা অবশ্যই আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান ও বিশ্বাস আনার শিক্ষা দেয়। আল্লাহ ছাড়া কাউকে আনুগত্য করতে নিষেধ করে। আশুরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করার দীক্ষা দেয়।

আশুরার শিক্ষা থেকে যে সত্য প্রতিভাত হয়, তা হলো, ন্যায়ের পথে সংগ্রামে সাময়িক আঘাত এলেও চূড়ান্ত বিজয় অবধারিত। এটাই মহররমের শিক্ষা এবং আশুরার সারসত্য। ফলে অন্যায়-অবিচার ও ষড়যন্ত্র থেকে পৃথিবীকে মুক্ত রাখতে আশুরার সংগ্রামী প্রেরণা ও ত্যাগের মহিমা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় যে কথাটি চমৎকারভাবে উচ্চারিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না’। আশুরার শিক্ষায় ন্যায় ও সত্যের জন্য কেবল কান্নাকাটি বা হা-হুতাশ নয়, ত্যাগ ও সংগ্রামের চেতনায় বলীয়ান হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর