হাজার মাস থেকেও উত্তম রাতের অপেক্ষায়

, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 18:33:44

হাজার মাস থেকেও উত্তম রাতের অপেক্ষায় মুসলিম সম্প্রদায়। বুধবার (১২ জুন) দিবাগত রাতটি সেই রাত। মুসলমানদের জন্য দয়াময় আল্লাহর বিশেষ রহমত এবং অনুগ্রহের রাত পবিত্র ‘লাইলাতুল কদর’। যা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নাজাতের উসিলা হিসেবে যথাযথ মর্যাদা ও পবিত্রতার সঙ্গে পালন করে থাকেন। কদরের রাতের ইবাদত-বন্দেগি হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম বলে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ রয়েছে। এ রাত থেকে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর কোরআনে কারিম নাজিল শুরু হয়।

আজকের রাতটি ইবাদত-বন্দেগিরতে কাটাবেন মুসলমানরা। সেই সঙ্গে অনেকে মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবরও জিয়ারত করবেন। সারারাত ইবাদত-বন্দেগি শেষে মসজিদে মসজিদে বাদ ফজর বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।

শবেকদরের গুরুত্ব ও আমল
রমজান মাস আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ নিয়ামত। গুনাহ মাফের ও অধিক সওয়াব অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ। এ মাসে আল্লাহ প্রদত্ত একটি রাত রয়েছে- তা হচ্ছে শবেকদর। যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো- সে বঞ্চিত হবে মহাকল্যাণ হতে।

হাদিসে বলা আছে, ‘রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে কদরের রজনী তালাশ করো।’ –মিশকাত: ২০৮৩/২০৮৫

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব
শবেকদরে কোরআনে কারিম লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে নাজিল হয়। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি এটি (কোরআন) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে।’ –সূরা কদর: ১

এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’ –সূরা কদর: ৩

কোরআনে কারিমে আরও বলা হয়েছে, এ রাতে ভাগ্য নির্ধারণ হয়। বর্ণিত আছে, ‘সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, আমার নির্দেশে। নিশ্চয়ই আমি রাসূল প্রেরণকারী।’ –সূরা দোখান: ৪-৫

শবেকদরের নফল নামাজ গুণাহ মাফের কারণ। এ বিষয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াব পাওয়ার আশায় ইবাদত করবে তার পূর্বের সব গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ –সহিহ বোখারি: ৩৫

এ রাত পাওয়ার জন্য নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ করো।’ –সহিহ বোখারি: ২০১৭

শবেকদর পাওয়ার জন্য হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিশ্রম করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য সময়ের তুলনায় রমজানের শেষ ১০ দিনে অধিকহারে পরিশ্রম করতেন।

এ রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেশতা নেমে আসে। কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘সে রাতে ফেরেশতারা তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন।’ –সূরা কদর: ০৪

শবেকদরের আমল
এ রাতে নফল নামাজ আদায় ও অধিক দোয়া করা। সেই সঙ্গে বেশি বেশি তওবা করা এবং সদকা করা।

পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে শুরু করে দেশের সব মসজিদে আলোচনা ও বিশেষ মোনাজাত করা হবে। নারীরা তাদের ঘরে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানেরাও নিজেদের গুণাহ মাফ এবং অধিক সওয়াব হাসিলের আশায় পুরুষরা ঘরে ও মসজিদে ইবাদত-বন্দেগি, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, নফল নামাজের মধ্য দিয়ে রাতটি অতিবাহিত করবেন। পবিত্র এই রাতে অনেকে কবরস্থানে গিয়ে স্বজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করবেন।

পবিত্র শবেকদর উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আজ বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র শবেকদরের গুরুত্ব-তাৎপর্য, ফজিলত ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে সোমবার দেওয়া এক বাণীতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম জাহানের উত্তরোত্তর উন্নতি, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করেছেন।

বাণীতে শেখ হাসিনা পবিত্র লাইলাতুল কদর উপলক্ষে দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাইলাতুল কদর এক মহিমান্বিত রজনি। সিয়াম সাধনার মাসের এই রাতে মানবজাতির পথ নির্দেশক পবিত্র কোরআন পৃথিবীতে নাজিল হয়। পবিত্র কোরআনের শিক্ষা আমাদের পার্থিব সুখ-শান্তির পাশাপাশি আখেরাতের মুক্তির পথ দেখায়।

তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়।

তিনি আরও বলেন, পবিত্র এই রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। অর্জন করতে পারি তার অসীম রহমত, বরকত ও মাগফেরাত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর