আজান ইসলামের একটি অন্যতম নিদর্শন। এর জন্য সুন্নতি দিক-নির্দেশনা রয়েছে। যেমন আজানের জওয়াব দেওয়া, আজানের পর দরুদ ও দোয়া পাঠ করা ইত্যাদি।
সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা যখন আজান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে, তোমরাও তাই বলো।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
আজানের জওয়াব দেওয়ার পর দরূদ পাঠ করা প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, হজরত আবদুল্লাহ বিন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, তোমরা যখন মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাও তখন সে যা বলে তাই বলো। অত:পর আমার ওপর দরুদ পড়ো। যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করলো আল্লাহ তার ওপর দশ বার অনুগ্রহ করবেন। অতঃপর আল্লাহর কাছে আমার জন্য উসিলার প্রার্থনা করো। এটি জান্নাতের মধ্যে এমন একটি স্থান, যা শুধু আল্লাহর একজন বান্দা পাবেন। আমি আশা করছি, সেই একজন আমিই হবো। যে আমার জন্য তা প্রার্থনা করবে, তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে। -সহিহ মুসলিম
মুয়াজ্জিন আজানে যা যা বলবে তার সঙ্গে তাই বলতে হবে, শুধুমাত্র ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ যখন বলবে তখন জবাবে সেটা না বলে বলতে হবে- লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ। অর্থ: আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।
এটা হচ্ছে আজানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি। আজানের জবাব দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, আজান শুনে নামাজ আদায়ই হচ্ছে আজানের সবচেয়ে বড় জবাব।
আমাদের দেশে দেখা যায়, আজানের সময় কেউ গান শুনতে থাকলে তিনি গান বন্ধ করে দেন, টিভি দেখতে থাকলে তা বন্ধ করে দেন, কেউ বক্তব্যরত অবস্থায় থাকলে বক্তব্য থামিয়ে দেন, নারীরা ভক্তিসহকারে মাথায় কাপড় দেন।
আবহমানকাল থেকে গ্রাম-বাংলায় দেখা যায়, অনেক নারী আজানের সময় মাথায় কাপড় দেওয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কেউ কাপড় দিতে না চাইলে তাকে নানা ধরনের অবজ্ঞামূলক কথা বলা হয়। সে হিসেবে অনেকেই জানতে চান, আজানের সময় নারীদের মাথা ঢেকে রাখতে হবে কি না?
এর উত্তরে ইসলামি স্কলাররা বলেছেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কোনো দিক-নির্দেশনা আসেনি যে, আজানের সময় মেয়েরা মাথায় কাপড় দেবে বা মাথা ঢাকবে। এমনকি শুয়া অবস্থায় আজান হলে উঠে বসতে হবে বা দাঁড়াতে হবে। তবে হ্যাঁ, নারীদের তো সর্বদা গাইরে মাহরামের সামনে মাথা ঢেকে রাখা বা পর্দা করা ফরজ। পর্দা ঈমানের সঙ্গে সম্পৃক্ত আজানের সঙ্গে নয়। কেননা আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়।’ –সূরা আহজাব: ৫৯
এ আয়াতে ‘জালাবিব’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘জিলবাব’ শব্দের বহুবচন। আরবি অভিধানের বিখ্যাত গ্রন্থ লিসানুল আরাব (১/২৭৩)-এ রয়েছে, জিলবাব ওই চাদরকে বলা হয়, যা নারীরা নিজেদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার জন্য ব্যবহার করে।
তাফসিরবিদদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, জিলবাব এমন কাপড়কে বলা হয়, যার মাধ্যমে নারীরা নিজেদের শরীর ঢেকে রাখেন। আর জিলবাব অর্থ বড় চাদর, যা মাথাসহ মুখমণ্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করে ফেলে। -তাফসিরে কুরতুবি: ১৪/২৪৩
সরাসরি ইসলামের বিধান না হলেও আমাদের সমাজে নারীরা আজানের সময় যেভাবে মাথা ঢেকে নেন, এটা মূলত আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। যদি কোনো নারীর বাসা-বাড়িতে অসতর্কাবস্থায় মাথায় কাপড় না থাকে, তাহলে আজানের সময় সে যদি সতর্ক হয় এবং মাথায় কাপড় টেনে নেয়- তাহলে এটা ঈমান ও আল্লাহভীতির পরিচায়ক। এটা ব্যক্তিগত অনুভূতির বিষয়। নিজস্ব ব্যাপার। কেননা আজান আল্লাহতায়ালার বড়ত্ব ও মহত্ত্ব সংবলিত কিছু বাক্যের সমষ্টি, যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। কোরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘এটাই হলো আল্লাহর বিধান, যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই।’ –সূরা হজ: ৩২
উল্লেখ্য, আজান সংশ্লিষ্ট আমল হচ্ছে- আজানের জবাব দেওয়া, আজান শেষে দরূদ এরপর দোয়া পড়া। এই তিন আমলের কথা হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে।