মহিমান্বিত লাইলাতুল কদরের চাওয়া

, ইসলাম

মাওলানা আবদুল জাব্বার, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 15:37:02

আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রজনী। লাইলাতুল কদরে আল্লাহতায়ালা মানবজাতির পথ প্রদর্শনকারী কিতাব পবিত্র কোরআনকে লওহে মাহফুজ থেকে পৃথিবীর মানুষের জন্য হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের তত্ত্বাবধানে ঊর্ধ্বাকাশের বাইতুল ইজ্জতে নাজিল করেন। পরবর্তীতে সময়ে সময়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর পবিত্র কোরআন নাজিল হয় দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে।

পবিত্র কোরআন নাজিলের শুভ সূচনার রাতকে আল্লাহতায়ালা মহিমান্বিত বা বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ রাত হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ বিষয়ে সূরা কদরে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদর বা কদরের রাতে। হে মুহাম্মদ! আপনার কি জানা আছে কদরের রাত কি? কদরের রাত হচ্ছে- হাজার মাসের চেয়ে উত্তম একটি রাত।’

নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা রমজান মাসের শেষ ভাগে পবিত্র লাইলাতুল কদর তালাশ করো।’ হাদিসের ভাষ্য মতে, রমজান মাসের শেষাংশের যে কোনো বিজোড় রাত অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯-এর মধ্যে যে কোনো রাতই লাইলাতুল কদর। এ জন্য রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফের বিধান রাখা হয়েছে। যাতে ইতিকাফকারীরা সহজেই লাইলাতুল কদর পেতে পারে এবং এর ফজিলত লাভ করতে পারে।

অভিজ্ঞ আলেম সমাজের অধিকাংশের মতে, ২৭ রমজানের রাতই পবিত্র লালাইতুল কদর। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ২৭ রমজানের রাতকেই লাইলাতুল কদর হিসেবে গণ্য, মান্য ও পালন করা হয়। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে রাতটি পালিত হয়। রাতভর নামাজ, দোয়া-দরূদ, জিকির-আজকার, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষ এই রাতটি অতিবাহিত করেন।

এ বিশেষ রাতে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এদের একটা বড় অংশ তরুণ। বিষয়টি অবশ্যই আশা জাগানিয়া। কারণ, নামাজের পথে, ধর্মের পথে, ইসলামের পথে, তরুণদের আগমন যে বাড়ছে জুমার নামাজসহ লাইলাতুল বরাত ও লাইলাতুল কদরে তাদের অংশগ্রহণ থেকেই তা উপলব্ধি করা যায়। আগেই বলেছি, এটা অবশ্যই আনন্দ ও সন্তোষের বিষয়।

পবিত্র কোরআনের বর্ণনামতে, কদরের রাতে আল্লাহর নৈকট্যশীল ফেরেশতারা হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের নেতৃত্বে পৃথিবীময় ঘুরে বেড়ান। তারা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল মানুষের প্রতি সালাম ও বিশেষ বার্তা প্রদান করেন। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ফেরেশতারা জিবরাইলের নেতৃত্বে এই রাতে পৃথিবীতে নেমে আসে এবং ফজর পর্যন্ত শান্তির বার্তা বিতরণ করেন।

বর্তমানে বিশ্বময় যে অশান্তি ও হানাহানি বিরাজ করছে তাতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শান্তি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এই বিবেচনায় আজকের রাতটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সহজেই অনুমেয়।

বস্তুত শান্তি প্রদানের মালিক আল্লাহ। তিনি আজ রাতে ফেরেশতাদের মাধ্যমে শান্তির বার্তা বিতরণ করবেন। এই সুযোগ বিশ্ব মুসলিমের জন্য এক বিশেষ ও বিরল সুযোগ। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা এ রাত অতিবাহিত করেন ক্ষমা প্রার্থনা ও বিশ্বমানবতার কল্যাণ কামনা করে।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ আছে, যারা রমজান মাস এবং লাইলাতুল কদর পেলো, অথচ গোনাহ মাফ করাতে পারল না, তারা বড়ই হতভাগ্য। প্রতিটি মুসলমানের উচিত, হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এই রাতের ফজিলত কাজে লাগিয়ে আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভ করা। যারা দশদিন ইতিকাফে আছেন তারা ছাড়া অন্য মুসলমানদের উচিত ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯-এর রাতগুলোতে কমপক্ষে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়া, কোরআন তেলাওয়াত করা, সামান্য কিছু হলেও দান করা। এতে যে রাতেই শবেকদর হোক, যেহেতু একজন তিনটি আমল প্রতি বিজোড় রাতেই করেছে তাই সে হাজার মাস আমল করার সওয়াব পাবে। যা হিসাব করলে দেখা যায় প্রায় ৮৪ বছরের সমান। এটি কারও পক্ষেই খুব কঠিন নয়।

পবিত্র কোরআন নাজিলের এ মাসকে আল্লাহতায়ালা রোজার মাস হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। কোরআনে কারিমকে আল্লাহ মুত্তাকিদের পথপ্রদর্শক হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। আর রোজাকে তাকওয়া অর্জনের উপায় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বস্তুত তাকওয়া অর্জনকারীকেই মুত্তাকি হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। পবিত্র কোরআন ও রোজার লক্ষ্য অভিন্ন, আর তা হলো- মানুষকে মুত্তাকি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে আল্লাহর করুণা ও নৈকট্য অর্জনের অধিকারী করা। রোজা হলো মুত্তাকি হওয়ার প্রশিক্ষণ। আর মুত্তাকির জীবনবিধান হলো পবিত্র কোরআন। পরহেজগার মানুষই আল্লাহর নৈকট্য ও করুণা লাভ করতে পারেন।

যারা মাহে রমজানে যারা রোজা রেখেছেন, সাধ্যমতো ইবাদত-বন্দেগি করেছেন, তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রাপ্তি লাভ করুক এটাই কাম্য।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আজ বিশ্বের বহু দেশে ও জনপদে মুসলমানরা ঠিকমত রোজা পালন বা ইবাদত-বন্দেগিতে রাত্রি যাপন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। যুদ্ধ-সংঘাত, অনিরাপত্তা ও অনিয়শ্চয়তা তাদের জীবনকে দুর্বিষহ ও মানবেতর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষীরা এক হয়ে বিশ্ব মুসলিমের ক্ষতিসাধনে হেন কিছু নেই যা করছে না। এমতাবস্থায় মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

এই মহাপবিত্র মহিমান্বিত রজনীতে আল্লাহতায়ালা সারা বিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে সংহতি বৃদ্ধিসহ বিশ্ব মুসলিমের জন্য সার্বিক উন্নয়ন, কল্যাণ ও মুক্তির ব্যবস্থা করে দিন, আজকের রাতে এ প্রত্যাশা সবার। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন সবাইকে তার রহমতের ছায়াতলে আশ্রয় দান করুন, মহাপবিত্র লাইলাতুল কদরে এটাই আমাদের প্রার্থনা ও বিনীত মোনাজাত। আল্লাহতায়ালা কবুল করুন। আমিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর