ঈদের প্রয়োজনীয় মাসয়ালা ও আমল

, ইসলাম

ইসলাম ডেস্ক | 2023-09-01 08:38:32

হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈদের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদতে মশগুল থাকবে তার অন্তর সেদিনও মৃত্যুবরণ করবে না, যেদিন সবার অন্তর মৃতপ্রায় হয়ে যাবে।’ -সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৮২

ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ
১. অন্যদিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে উঠা। -তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: ২৮৫৯

২. মিসওয়াক করা। -তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: ২৮৫৯

৩. গোসল করা। -সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩১৫

৪. শরিয়তসম্মত সাজসজ্জা করা। -সহিহ বোখারি শরীফ: ৯৪৮

৫. সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম পোশাক পরিধান করা। উল্লেখ্য, সুন্নত আদায়ের জন্য নতুন পোশাক জরুরি না। -তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: ২৮৯

৬. সুগন্ধি ব্যবহার করা। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৬৮

৭. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় জিনিস, যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। তবে ঈদুল আজহাতে কিছু না খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং ঈদের নামাজের পর নিজের কোরবানির পশুরু গোশত দ্বারা আহার করা উত্তম। -সহিহ বোখারি শরীফ: ৯৫৩

৮. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। -সুনানে আবু দাউদ: ১১৫৭

৯. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করা। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৬৮

১০. ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায় করা সুন্নত। বিনাউজরে মসজিদে আদায় করা উচিত না। -সহিহ বোখারি শরীফ: ৯৫৬

১১. যে রাস্তায় ঈদগাহে যাবে সম্ভব হলে ফেরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা। -সহিহ বোখারি শরীফ: ৯৮৬

১২. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। -তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: ২৯০

১৩. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে তাকবির বলতে থাকা। তাকবির হলো- আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।

তবে ঈদুল আজহাতে যাওয়ার সময় তাকবির উচ্চ আওয়াজে পড়তে থাকবে। -বায়হাকি: ৬১৩০

ঈদের মুস্তাহাবসমূহ
১. সাধ্যানুযায়ী অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত করা। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৬৯

২. আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ঈদ মনে করে আনন্দ এবং খুশি প্রকাশ করা। -তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: ২৮৯

. নিজ মহল্লার মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করা। ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে সর্বদা আদায় করা অত্যন্ত জরুরি এবং ওয়াজিব। তবে দুই ঈদের ফজরের নামাজ মহল্লার মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করা অতি উত্তম। -তাহতাবি আলা মারাকিল ফালাহ: ২৮৯-২৯০

ঈদের নামাজের নিয়মকানুন
প্রথমে কান বরাবর উভয় হাত তুলবে। তারপর নিয়ত করবে, আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ এই ইমামের পিছনে পড়ছি। অতঃপর তাকবিরে তাহরিমা বলে হাত নাভির নিচে বাঁধবে এবং সানা (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা) পুরোটা পড়বে। তারপর তিনটি অতিরিক্ত তাকবির বলবে। প্রথম দু’বার হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে হাত ছেড়ে দিতে হবে, পরে তৃতীয় বার হাত কান পর্যন্ত তুলে আল্লাহু আকবার বলে হাত বেঁধে চুপ করে ইমামের কেরাত শ্রবণ করবে।

এভাবে প্রথম রাকাত আদায়ের পর দ্বিতীয় রাকাতের কেরাতের পর তিন বার হাত কান পর্যন্ত উঠিয়ে প্রত্যেকবার আল্লাহু আকবার বলে হাত ছেড়ে দেবে। এরপর চতুর্থ বার হাত না তুলে আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে চলে যাবে এবং অবশিষ্ট নামাজ অন্য নামাজের ন্যায় সম্পন্ন করবে। -ফাতাওয়ায়ে শামি: ১/১৭২

ঈদের মাসআলা-মাসাইল
১. মসজিদের বিছানা, চাটাই ও শামিয়ানা ইত্যাদি ঈদগাহে নিয়ে যাওয়া দুরুস্ত। -ফাতাওয়ায়ে শামি: ৩/৩৫৯

২. যে ব্যক্তি দাড়ি শেভ করে অথবা একমুষ্ঠির কম রাখে তাকে ইমাম বানানো জায়েয নেই। ঈদ এবং অন্যান্য নামাজের ক্ষেত্রেও একই হুকুম। ইমামতির ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীর দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। বরং শরীয়তের দৃষ্টিতে ইমামতির যোগ্য হওয়া জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/৫৫৯

৩. ঈদের নামাজের পূর্বে নিজ ঘরে বা ঈদগাহে ইশরাক ইত্যাদি নফল পড়া নিষিদ্ধ। ঈদের জামাতের পরেও ঈদগাহে নফল নামাজ পড়া মাকরূহ। হ্যাঁ, ঘরে ফিরে ইশরাক, চাশত নফল পড়তে কোনো অসুবিধা নেই। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৬৯

. ঈদের নামাজের সালাম ফেরানোর পর মোনাজাত করা মোস্তাহাব। ঈদের খুতবার পরে মোনাজাত করা মোস্তাহাব নয়। -মুসনাদে আহমদ: ২২১৮

৫. শরিয়ত অনুমোদিত সমস্যা ব্যতীত ঈদের নামাজ মসজিদে আদায় করা সুন্নতের খেলাফ। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৬৯

৬. যদি ইমাম অতিরিক্ত তাকবির ভুলবশতঃ না বলে, আর ঈদের জামাত অনেক বড় হয়; তাহলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না। সুতরাং সিজদায়ে সাহু করতে হবে না। আর যদি এমন হয় যে, উপস্থিত সবাই সিজদায়ে সাহু সম্পর্কে অবগত হতে পারে; তাহলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে। - আদ্দুররুল মুখতার: ২/৯২

৭. ঈদের দ্বিতীয় রাকাতের রুকুর তাকবির ওয়াজিব। যদি কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয় রাকাতের রুকুতে শরিক হয় তাহলে সে প্রথমে দাঁড়িয়ে তাকবিরে তাহরিমা বলবে। অতঃপর দাঁড়ানো অবস্থায় হাত তুলে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। এরপর রুকুর তাকবির বলে রুকুতে শামিল হবে। -আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৭৪

৮. যদি কেউ প্রথম রাকাতে রুকুর পূর্বে জামাতে শরিক হয় এবং তাকবিরে তাহরিমার পর দাঁড়ানো অবস্থায় হাত তুলে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলার সুযোগ না পায় তাহলে রুকুতে গিয়ে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। তবে সেক্ষেত্রে কান পর্যন্ত হাত উঠাবে না। -আদ্দররুল মুখতার: ১/২৭৪

৯. যদি প্রথম রাকাত ছুটে যায় তাহলে ইমামের সালামের পর দাঁড়িয়ে প্রথমে সূরা-কেরাত পড়বে। অতঃপর রুকুর পূর্বে তিন বার হাত তুলে তিন তাকবি দেবে। তারপর রুকুর তাকবির বলে রুকু সিজদা করে যথা নিয়মে নামাজ সম্পন্ন করবে। -রুদ্দুল মুহতার: ২/১৭৪

১০. ঈদের ময়দানে জানাজার নামাজ পড়া জায়েজ। প্রথমে ঈদের নামাজ অতঃপর জানাজার নামাজ এরপর খুতবা হবে। -রদ্দুল মুহতার: ৪/৩৫৬

১১. বর্তমানে অনেক খতিব ঈদের খুতবার শুরুতে ও মাঝে যে তাকবিরে তাশরিক বলেন নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরং এ ব্যাপারে সঠিক মাসয়ালা হলো, প্রথম খুতবার শুরুতে নয় বার, দ্বিতীয় খুতবার শুরুতে সাত বার এবং দ্বিতীয় খুতবার শেষে মিম্বর থেকে নামার পূর্বে চৌদ্দ বার শুধু ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে। এটাই মোস্তাহাব। খুতবার সময় বা খুতবার মাঝে তাকবিরে তাশরিক বলবে না। হ্যাঁ, ঈদের নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে তাকবিরে তাশরিক একবার বলবে। - আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৭৫

১২. নামাজের পর ঈদের দুই খুতবা শ্রবণ করা ওয়াজিব। যদি খুতবা শোনা না যায়, তাহলে চুপচাপ বসে থাকবে। অনেক লোক সালামের পর খুতবা না শুনেই চলে যায়, এটা সুন্নতের খেলাফ।
-আদ্দুররুল মুখতার: ২/১৫৯

১৩. খুতবার মধ্যে মুসল্লিদের কথাবার্তা বলা নিষেধ। এমনকি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম উচ্চারিত হলে মুখে দরূদ পড়া নিষেধ। তবে অন্তরে পড়তে পারবে। তেমনিভাবে খুতবার মধ্যে দানবাক্স বা রুমাল চালানোও নিষেধ এবং গুনাহের কাজ। -মুসনাদে আহমদ: ১০১৪০

১৪. উভয় খুতবা শেষ হলে ঈদের নামাজের সব কাজ শেষ হলো। এরপর ঈদের আর কোনো কাজ নাই। সুতরাং খুতবা শেষ হলে সবাই নিজের বাড়িতে ফিরে আসবে।

বর্তমানে দেখা যায়, ঈদের খুতবার পরে লম্বা মোনাজাত হয়; এটা মোস্তাহাব নয়। তারপর মানুষ পরস্পরে কোলাকুলি করে। এগুলো ঈদের কোনো আমল নয়। সুতরাং এটা ঈদের সুন্নত মনে করা ভুল, বরং এটা দেখা সাক্ষাতের সুন্নত।

কোনো ভাইয়ের সঙ্গে অনেক দিন পর সাক্ষাত হলে প্রথমে সালাম বিনিময় করবে, তারপর মুসাফাহা করবে; তারপর কোলাকুলি করবে। সুতরাং ঈদের নামাজের আগে সাক্ষাত হলে তখনই এটা সেরে ফেলবে। আর যদি ঈদের খুতবার পর এরূপ কারও সঙ্গে সাক্ষাত হয় তাহলে কোলাকুলি করবে। এরূপ করবে না যে, সাক্ষাত হলো নামাজের পূর্বে কিন্তু কোলাকুলি করা হলো- খুতবার পরে। -ফাতাওয়ায়ে শামি: ৬/৩৮১

এ সম্পর্কিত আরও খবর