তাহাজ্জুদ আরবি শব্দ। পবিত্র কোরআনে এ শব্দের ব্যবহার রয়েছে। শব্দটি নিদ্রা যাওয়া ও জাগ্রত হওয়া এই পরস্পরবিরোধী দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলে ৭৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন।’
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকার অর্থ নামাজ পড়া। এ কারণে ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রাত্রিকালীন নামাজকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের প্রচলন ঠিক কখন থেকে শুরু হয়েছিল, তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা না গেলেও তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দেশ সর্বপ্রথম পাওয়া যায় সূরা মুজ্জাম্মিলের প্রথম দিকের আয়াত নাজিল হওয়ার পর। আর সূরা মুজ্জাম্মিল যেহেতু ইসলামের শুরুতে কোরআন অবতরণের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ হয়েছে; তাই বলা যায় ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকেই তাহাজ্জুদ নামাজের প্রচলন শুরু।
শুরুতে তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ ছিল। তাহাজ্জুদ নামাজের এ বিধান বলবৎ ছিল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগ পর্যন্ত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মেরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আদেশ অবতীর্ণ হলে তাহাজ্জুদ নামাজের ফরজ হুকুম রহিত হয়ে নফল হয়ে যায়। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম সর্বদা নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তেন। -তাফসিরে মাজহারি
তাহাজ্জুদের মর্যাদা অপরিসীম। ফরজ নামাজের পরে উত্তম নামাজ হলো- তাহাজ্জুদের নামাজ। হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের পর উত্তম রোজা হলো- মহররম মাসের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ হলো- রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদের নামাজ)।নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় মুমিন বান্দাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। তবে দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত থেকে শুরু করে যত রাকাত ইচ্ছা আদায় করা যায়। ইসলামবেত্তাদের পরামর্শ হলো- ন্যুনতম চার রাকাত আদায় করা। যে কয় রাকাতই পড়া হোক, তা নিয়মিত আদায়ের অভ্যাস করা।
যেমন হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হজরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানে নবীজীর নামাজ কেমন হতো? তিনি উত্তরে বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে এবং রমজানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাইবাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। -সহিহ বোখারি: ১/১৫৪
আরেক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি কাইস বলেন, আমি হজরত আয়েশা (রা.)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। -সুনানে আবু দাউদ: ১/১৯৩
উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনও তাহাজ্জুদ নামাজ চার রাকাত পড়তেন, কখনও ছয় রাকাত পড়তেন। কখনও আট রাকাত পড়তেন। কখনও দশ রাকাত পড়তেন।
সুতরাং তাহাজ্জুদের নামাজ ১০ রাকাত পর্যন্ত পড়া হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে আমরা সহিহ হাদিসে পিই। এরচেয়ে বেশি পড়া যাবে না, এমন নয়। যেহেতু এটি নফল নামাজ, তাই যত বেশি পড়া যায় ততই সওয়াব।
সেই সঙ্গে চার রাকাতের কম পড়লে তা তাহাজ্জুদ হবে না, বিষয়টি এমন নয়। তাই দুই রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ নামাজ হিসেবেই গণ্য হবে। সময় কম থাকলে দুই রাকাত পড়ে নিলেও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
রাতের এবং দিনের নফল নামাজের নিয়ত চার রাকাত করে নিয়ত করা যায়, এমনিভাবে দুই রাকাত করেও নিয়ত করা যায়। কোনো সমস্যা নেই।
তাহাজ্জুদ নামাজে ২ রাকাতের নিয়ত করে ২ রাকাত ২ রাকাত করে পড়া যায়, আবার ৪ রাকাতের নিয়ত করে ৪ রাকাত করে পড়া যায়। -ফাতওয়ায়ে শামি: ২/৪৫৫