সপ্তম শতকের প্রথমভাগে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল দিয়ে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রবেশ করে আরব ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। ওই স্থানটি কেরালা রাজ্যে অবস্থিত। আর সেখানেই নির্মিত হয় ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদ, চেরামন জুমা মসজিদ। এটি শুধু ভারতবর্ষের প্রথম মসজিদ নয়, আরব বিশ্বের বাইরে নির্মিত পৃথিবীর প্রাচীনতম মসজিদগুলোর একটি।
সেই কেরালার কোজিকোড়ে দিল্লি জামে মসজিদের তুলনায় একটি বড় মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বসবাসরত ভারতীয়দের উদ্যোগে মসজিদটি নির্মিত হবে।
প্রস্তাবিত মসজিদ তৈরি করতে ব্যয় হবে ১২ বিলিয়ন ডলার। এটির নামাকরণ করা হয়েছে, ‘মোবারক মসজিদ।’ মসজিদটিতে একসঙ্গে ৩০ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারবেন।
কেরালার আয়তন ৩৮ হাজার ৮৬৩ বর্গকিলোমিটার বা ১৫ হাজার ৫ বর্গমাইল। জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন কোটি। সেখানকার প্রায় ৯৪ ভাগ মানুষই শিক্ষিত, যদিও বর্তমানে তারা শতভাগ শিক্ষিত বলে দাবি করেন। রাজ্যটির মানুষের মাথাপিছু আয় ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বেশি।
কেরালায় নানা জাতি-ধর্মের মানুষের বসবাস। শতকরা ১৫-১৬ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যটিতে বেশকিছু ঐতিহাসিক মসজিদ রয়েছে। এমনই একটি মসজিদ হলো- ইরুমেলির ভাভর জামে মসজিদ। কেরালার পাতানামতিট্টা জেলায় এ মসজিদের অবস্থান।
হিন্দুদের কাছে ইরুমেলির ভাভর মসজিদ পবিত্র একটি স্থান। এই মসজিদকে ঘিরে নানা ধরনের মিথ রয়েছে। মসজিদটির নির্মাণশৈলি যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি এর ঐতিহাসিক গুরুত্বও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কেরালার এই মসজিদটি দেখতে পর্যটক ও ইতিহাস অনুসন্ধনীরা যেমন ভিড় করেন, তেমনি শবরীমালা যাওয়ার পথে ভাভর মসজিদে হিন্দু পুণ্যার্থীরাও ঘুরে যান। ভাভর জামে মসজিদ প্রশাসন কমিটিও তাদের ফেরান না।
প্রতি বছর নভেম্বর থেকে জানুয়ারি শবরীমালায় চলে হিন্দু পুণ্যার্থীদের দর্শন। সেই সময়েই ভিড় বাড়ে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ইরুমেলির ভাভর মসজিদে। শবরীমালায় ওঠার আগে আয়াপ্পা ভক্তরা দর্শন করে যান ভাভর মসজিদ। এই মসজিদ প্রাঙ্গণে নারীদের প্রবেশে কোনো মানা নেই।
মসজিদ প্রশাসন কমিটির সভাপতি হাকিম শাজাহান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘শবরীমালার দর্শনার্থীরা দলে দলে এই মসজিদে আসেন। তারা মসজিদ প্রদক্ষিণ করেন, নারকেল ফাটিয়ে, ফুল দিয়ে তাদের রীতিতে প্রার্থনা করেন। তবে কেউ বাধা না দিলেও মসজিদের ভেতরে তারা প্রবশে করেন না। তাদের অনেকেই আবার মসজিদের দিকে মুখ করে পিছু হঠে বেরিয়ে যান, পীঠ দেখান না। ‘
স্থানীয় মুসলিমদের মতে, ইরুমেলির ভাভরে এটা সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের উজ্জ্বল ছবি।