ফরজ নামাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণে সুন্নত নামাজের ভূমিকা অনন্য। তাই ফরজের পাশাপাশি সুন্নত নামাজও গুরুত্ব দিয়ে আদায় করা জরুরি। ফজরের ফরজ নামাজের আগের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাকে অনেক গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। কখনও এ দুই রাকাত নামাজ ত্যাগ করতেন না।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফজরের (ফরজের আগের) দুই রাকাত নামাজ দুনিয়া ও তার সব জিনিসের চেয়েও উত্তম।’ –সহিহ মুসলিম
জোহরের ফরজ নামাজের আগের চার রাকাত ও পরের দুই রাকাত নামাজ সুন্নত। এ নামাজের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়, যা দোজখের আগুনকে হারাম করে দেয়। হাদিসের ভাষায়, হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জোহরের ফরজ নমাজের আগের চার রাকাত এবং পরে দুই রাকাত নামাজের হেফাজত করে তথা আদায় করে, আল্লাহ তার ওপর দোজখের আগুন হারাম করে দেবেন।’ –সুনানে তিরমিজি
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জোহরের আগের চার রাকাত ও পরের দুই রাকাত নামাজ আদায় করা সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘তিনি (রাসূলুল্লাহ সা.) আমার ঘরে জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাত নামাজ পড়তেন অতঃপর মসজিদের উদ্দেশে বের হয়ে যেতেন এবং লোকদের নামাজ পড়াতেন, অতঃপর ঘরে এসে দুই রাকাত নামাজ পড়তেন।’ –সহিহ মুসলিম
মাগরিবের ফরজ নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নত নামাজ। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, তাবেঈ হজরত মাকহুল (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি মুরসাল হিসেবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করে বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি মাগরিবের ফরজ নামাজের পর কথাবার্তা বলার আগে দুই রাকাত, অন্য বর্ণনায় রয়েছে চার রাকাত নামাজ পড়ে, তার সে নামাজ ইল্লিয়িনে পাঠানো হয়। হজরত হুজায়ফা (রা.) থেকেও অনুরূপ বর্ণিত আছে এবং তিনি এর সঙ্গে যোগ করেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা মাগরিবের ফরজ নামাজের পরের দুই রাকাত নামাজ তাড়াতাড়ি করে পড়বে। কেননা, এ দুই রাকাত নামাজও ফরজের সঙ্গে ওপরে উঠানো হয়।’ –বায়হাকি শোয়াবুল ঈমানে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন
বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে, মাঝে মাঝে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের ফরজ নামাজের পরের দুই রাকাত নামাজকে খুব লম্বা করে আদায় করতেন।
এশার ফরজ নামাজের পরের দুই রাকাত সুন্নত। এ সম্পর্কে প্রখ্যাত তাবেঈ আবদুল্লাহ ইবনে শাকিক (রহ.) হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘অতঃপর (হজরত রাসূলুল্লাহ সা.) লোকদের এশার নামাজ পড়াতেন, আর ঘরে এসে দুই রাকাত নামাজ পড়তেন।’ –সহিহ মুসলিম
উল্লেখিত ফজর, জোহর, মাগরিব ও এশার নামাজের আগে এবং পরে মোট ১২ রাকাত সুন্নত নামাজের আলাদা আলাদাভাবে গুরুত্ব ও মর্যাদা থাকলেও সম্মিলিতভাবেও এর মর্যাদা কম নয়। এই বারো রাকাত নামাজের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে হাদিসে এভাবে, ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে তার ঘরে জোহরের (ফরজ) নামাজের আগে দুই রাকাত এবং এর পরে দুই রাকাত আর মাগরিবের (ফরজ) নামাজের পর দুই রাকাত নামাজ পড়েছি। তিনি আরও বলেন, হজরত হাফসা (রা.) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দুই রাকাত নামাজ (ফজরের ফরজ নামাজের আগে) সংক্ষিপ্তভাবে পড়তেন, যখন উষার আলো উদ্ভাসিত হতো।’ –সহিহ বোখারি
এই ১২ রাকাত নামাজ আদায়কারীর জন্য আল্লাহতায়ালা জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন, যা এ সুন্নত নামাজের ফজিলত অধিকাংশে বাড়িয়ে দেয়। এ সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত উম্মে হাবিবা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি দিবারাত্রি (ফরজ ব্যতীত) ১২ রাকাত নামাজ পড়বে, তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর তৈরি করা হবে। তা হলো- জোহরের (ফরজ) নামাজের আগের চার রাকাত ও পরের দুই রাকাত। মাগরিবের (ফরজ) নামাজের পরের দুই রাকাত। এশার (ফরজ) নামাজের পরের দুই রাকাত এবং ফজরের (ফরজ) নামাজের আগের দুই রাকাত।’ –তিরমিজি
মুসলিম শরিফের অপর এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি (উম্মে হাবিবা রা.) বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কোনো মুসলমান বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ফরজ ব্যতীত প্রতিদিন ১২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করবে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর তৈরি করবেন অথবা তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর তৈরি করা হবে।’