বিশ্ব ইজতেমার ময়দান থেকে: শুক্রবার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও লোক সমাগম বেশি হওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) আসরের নামাজের পর শুরু হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমার মূল আনুষ্ঠানিকতা।
তাবলিগের জিম্মাদার সাথী, কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা শাহরিয়ার আলম বার্তা২৪.কমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন যে পরিমাণ লোক ময়দানে অবস্থান করেন, তার চেয়ে বেশি তাবিলিগি সাথী মাঠে চলে এসেছেন। তাই আসরের নামাজের পর শুরু হবে আম বয়ান। আসরের নামাজের পর আম বয়ান করবেন পাকিস্তান রায়বেন্ডের মুরব্বি মাওলানা ফাহিম খান। বাদ মাগরিব আলমি শুরার সদস্য ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা বয়ান করবেন।
এদিকে বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বাদ ফরজ উপস্থিত তাবলিগি সাথীদের উদ্দেশ্যে ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা বিষয়ে বয়ান করেন কাকরাইলের অন্যতম শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা রবিউল হক। আর জোহরের নামাজের পর বয়ান করেন কাকরাইলের মুরব্বি মাওলানা আবদুল মতিন। তিনি ঈমান ও আমলের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
বয়ানে মাওলানা রবিউল হক বলেন, মাঠের আমল, আমলের গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা করেন। মাঠে অবস্থানের সময় দুনিয়াবী কথা বলে সময় না কাটিয়ে ন তাহলে এটা অনেক বড় গাফলতের কথা। এই তিন দিনকে তিনি দুনিয়াবী কাজে না কাটিয়ে সময়গুলো দ্বীনী ফিকিরে কাটানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে মঙ্গলবার থেকেই জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ইজতেমা ময়দানে আসছেন তাবলিগের সাথী, আলেম-উলামা, মাদরাসার ছাত্র ও সাধারণ মুসুল্লিরা। বৃহস্পতিবার সকালেই মাঠ কানায় কানায় ভরে গেছে। বাতাস আর হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ৬৪ জেলার মুসুল্লিরা ময়দানে এসে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন।
ইজতেমার ময়দানকে মোট ৯২টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ইজতেমায়া একযোগে ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ৮৭টি খিত্তা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঁচটি খিত্তা সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। কোনো জেলার মুসল্লি বেশি হলে অথবা মাদরাসার ছাত্রদের ওই খিত্তাগুলোতে দেওয়া হবে।
বিশ্ব ইজতেমায় দেশের মুসল্লিদের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের মুসল্লিরা উপস্থিত হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩৫টি দেশের জামাত ইজতেমার ময়দানে উপস্থিত হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে আরও ৪০টি দেশের তাবলিগি সাথীরা ময়দানে এসে পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদেশি অতিথিদের জন্য বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে বিশেষ খিত্তা নির্মাণ হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য গরম পানি, রান্নার জন্য গ্যাস ও উন্নত টয়লেটসহ নানা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ইজতেমায় অংশ নিতে আলমি শুরার সদস্য, ভারতের মাওলানা আহমদ লাট, মাওলানা ইবরাহীম দেওলা ঢাকায় পৌঁছেছেন। বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তারা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জাম্মেল হক এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল তাদের অভ্যর্থনা জানান। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের শীর্ষ মুরব্বি হজরাত মাওলানা ইহসানও ইজতেমার ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছেন।
ইজতেমার একাধিক দায়িত্বশীল বার্তা২৪.কমকে জানিয়েছেন, এবারের ইজতেমায় মাওলানা জুহাইরুল হাসান, মাওলানা খোবাইবুল হাসান, মাওলানা ইসমাইল গোধরা, ডক্টর সানাউল্লাহ খান, মাওলানা আকবর শরীফ, মাওলানা ইউনুস মুম্বাইসহ ভারত, পাকিস্তান, আরব ও আফ্রিকার শীর্ষস্থানীয় তাবলিগি মুরুব্বিরা অংশ নেবেন।
এবার পুরো ইজতেমার ময়দানে এলইডি লাইট সরবরাহ করেছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। সেই সঙ্গে মুসুল্লিদের যাতায়তের পথগুলো মেরামত, ময়দান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ নিয়মিতভাবে করছে তারা। আর ইজতেমা ময়দানের পাশে স্থাপিত বিনামূল্যের চিকিৎসা ক্যাম্পগুলো বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করা হবে।