বিশ্ব ইজতেমা ময়দান থেকে: টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ১৬০ একর আয়তনের সুবিশাল প্যান্ডেলে ঠাঁই নেই। মাঠের ভেতরের রাস্তাগুলোও বন্ধন। লাখো মুসল্লির ভিড়ে ইজতেমা ময়দান মুখর। ময়দানের কোথাও ঠাঁই না পেয়ে মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড় আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। কনকনে শীত উপেক্ষা করে মুসল্লিরা খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় অবস্থান নিয়েছেন। তার পরও কারও কোনো অভিযোগ নেই। প্রায়ই থাকছে না অজুর পানি। রান্নার জায়গা নেই। পর্যাপ্ত মাইক নেই। তবুও হাসিমুখে সব সয়ে যাচ্ছেন। সকালে ইজতেমার মাঠ ও আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে প্রচুর মানুষের সমাগম। অনেকে ইজতেমা ময়দানে জায়গা না পেয়ে বা দলছুট হয়ে ঘোরাঘুরি করছেন এদিক-সেদিক।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া সড়ক, স্টেশনরোড-কামারপাড়া সড়কসহ ইজতেমার ময়দানে প্রবেশের রাস্তার দুই পাশে মুসল্লিরা অবস্থান নেওয়ায় রাস্তাগুলো সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও যানবাহন এমনকি হাঁটার পথও বন্ধ হয়ে গেছে। এর মাঝেই চলছে বয়ান, জিকির-আজকার, কিতাবের তালিম, জামাতের জন্য তাশকিল, নফল ইবাদত-বন্দেগি, খাওয়া-দাওয়া ও আনুষঙ্গিক কাজ।
শুক্রবার সকালের দিকে আবহাওয়া কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বিকেল থেকে হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। খোলা অঅকাশের নিচে হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীত উপেক্ষা করে বয়ান শুনছেন মুসল্লিরা। শনিবার (১১ জানুয়ারি) বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ঈসমাইল গোধরা। বাদ আসর বয়ান করছেন ভারতের মাওলানা জোহায়রুল হাসান। বাদ মাগরিব বয়ান তাবলিগের অন্যতম শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা ইবরাহিম দেওলা বয়ান করবেন।
মাঠে মূল বয়ান উর্দূতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। রয়েছে বধিরদের জন্য সাংকেতিক ভাষায় বয়ান অনুবাদের ব্যবস্থাও।
শনিবার মাঠে আম বয়ান ছাড়া আলেম-উলামাদের উদ্দেশে ভারতের মাওলানা ইবরাহিম দেওলা, আরবের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভারতের মাওলানা আকবর শরীফ এবং মাদরাসার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভারতের মাওলানা আহমদ লাট বয়ান করেছেন।
মাঠের প্রবেশপথে মুসল্লিদের ভিড়, ছবি: বার্তা২৪.কম
শনিবার সকালে (১১ জানুয়ারি) বাদ ফজর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান। বয়ানে তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা মানুষকে কামিয়াব করার জন্য একটা রাস্তার কথা বলে দিয়েছেন। সেটা হলো- দ্বীনের রাস্তা। মানুষ যে অবস্থায় থাকে তার মধ্যে যদি দ্বীন থাকে তাহলে সে কামিয়াব হবে। নতুবা ধ্বংস হয়ে যাবে। মানুষের কাছে দুনিয়ার আসবাব বেশি হওয়ার মধ্যে কামিয়াবি নেই। বরং কামিয়াবি হলো- দ্বীন ও দাওয়াতে তাবলিগের মধ্যে। আর দাওয়াতে তাবলিগ মানে দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবার-পরিজন ছেড়ে দেওয়া নয়। বরং সব কাজ-কারবার দ্বীনদারীর মাধ্যমে করা। এভাবে আমরা যখন পুরোপুরি দ্বীনের ওপর চলবো, তখন আমরা উপকৃত হবো।
ইজতেমার মাঠে লোক উপস্থিতিতে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, টঙ্গীর ইজতেমার মাঠ ও এর আশাপাশের এলাকায় অবস্থান নেওয়া মুসল্লির সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়াবে। ইজতেমায় শুক্রবার উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলা থেকে তাবিলগের সাথীরা ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। ইজতেমামুখী মুসল্লিদের ঢল অব্যাহত রয়েছে। এ ঢল অব্যাহত থাকবে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত।
দেশি মুসল্লির পাশাপাশি ইজতেমা শুরুর আগ থেকেই ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, কাজাখিস্তান, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইথিওপিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিদেশি মুসল্লিরা এসেছেন। শনিবার সকাল পর্যন্ত পর্যন্ত ৪৬টি দেশ থেকে প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন বিদেশি মুসল্লি এসেছেন বলে জানা গেছে। আজ ও আগামীকাল সকালের মধ্যে এ সংখ্যা বাড়বে বলে তাবলিগ জামাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন।
রোববার (১২ জানুয়ারি) সকালে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আলমি শুরাপন্থিদের ইজতেমা। পরে ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে সাদপন্থিদের ইজতেমা। ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে তাদের ইজতেমা।