ধর্মহীনতা মানসিক অস্থিরতার অন্যতম কারণ

, ইসলাম

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-08-31 04:18:27

মানসিক চাপ কিংবা অস্থিরতা অনেক সময় ব্যক্তির ভেতরে আপনা আপনিই জন্ম নেয় এবং ধীরে ধীরে তা বাসা বাঁধে। অনেক সময় এই মানসিক অশান্তি এমনভাবে মানব মনে শেকড় গেড়ে বসে যে তার নিরাময় অবশ্যম্ভাবি হয়ে ওঠে।

মানসিক অশান্তি সৃষ্টি, বিস্তারের নেপথ্য কারণ- বিষয়ে প্রচুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তারপরও ধর্মীয় বিষয়কে কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই।

বলা হয়, ধর্মাচারে অনীহা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি এবং বাড়ার অন্যতম কারণ। এ বাস্তবতা অস্বীকার করার জো নেই, এ এক কঠিন বাস্তবতা। ধর্মের সঙ্গে দূরত্বের বিষয়টি মানসিক অস্থিরতার ওপর প্রভাব ফেলার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখে বলে মনে মন্তব্য করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, মানসিক চাপ ও অস্থিরতায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা প্রচলিত ওষুধ সেবন করার পাশাপাশি নামাজ পড়েন, কোরআন তেলাওয়াত করেন, জিকির-আজকার করেন, তাসবিহ পাঠ করেন, দোয়া-দরূদ করেন অর্থাৎ ধর্মীয় ইবাদতে সময় দেন- তাদের নিরাময় ও সুস্থতার পরিমাণ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি।

যেসব নামাজি এক আল্লাহর অনন্ত শক্তি ও সর্বময় ক্ষমতার পাশাপাশি তার অসীম দয়ার ওপর বিশ্বাস করেন এবং মনে করেন আল্লাহতায়ালা সর্বত্র বিরাজমান এবং সর্বজ্ঞ সত্তা ও বিশ্বজাহানের একমাত্র প্রতিপালক; তারা আল্লাহর ইবাদাত করার মাধ্যমে মূলতঃ সব অস্থিরতা ও বিপদাপদের উৎসগুলোর সঙ্গে লড়ার শক্তি অর্জন করেন। দৈনিক পাঁচবার নামাজ পড়ার মধ্য দিয়ে সেই নামাজি তার মনের ভেতর এই অশান্তির আক্রমণ থেকে সার্বিক নিরাপত্তা লাভ করে। ফলে সে এক ধরনের প্রশান্তি ও সুস্থিরতা অনুভব করে।

নামাজের মাধ্যমে আমাদের স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সম্পর্কের এক অদৃশ্য সেতু রচিত হয়। নামাজ আদায়কারীসহ ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিতরা নামাজের জন্য আল্লাহর দেওয়া আদেশকে তার পক্ষ থেকে এক ধরনের করুণা ও রহমত বা দয়া বলে মনে করেন।

আরও পড়ুন: তাওয়াফের প্রতি কদমে গোনাহ মাফ হয়

মানুষকে তার লক্ষ্যে পৌঁছার উপায় এবং পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার অন্যতম সোপান বলে মনে করা হয়- নামাজকে। তাকবির দিয়ে যখন নামাজ শুরু হয়, তখন নামাজ আদায়কারীর অন্তরাত্মা পার্থিব জগতের মোহ ও ব্যস্ততার উর্ধ্বে উঠে এমন এক মহান সত্তার সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রচিত হয় যার মর্যাদা পৃথিবীর অন্য সব শক্তির তুলনায় একেবারে তুচ্ছ, নস্যি।

নামাজ আদায়ের জন্য যখন দাঁড়ানো হয়, তখন একজন নামাজির সামনে পার্থিব জগতের সব সম্পদ নিরর্থক ও তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। শুধুমাত্র অবিনশ্বর এক আল্লাহর কথাই তার অন্তর চক্ষুর সামনে ভাসতে থাকে। কারণ নামাজ আদায়কারী যার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, তিনি এমন এক স্রষ্টা ও প্রতিপালক- যিনি সবচেয়ে দয়ালু। তিনি মানুষের সৃষ্টিকারী এবং সাহায্যকারী।

এ কারণে কোরআনে কারিম মানুষকে আহ্বান জানায়, সবসময় যেন সেই খোদাকে স্মরণে রাখে। আর খোদাকে স্মরণ করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপায় হলো- আল্লাহর জিকির বা নামাজ। কেননা নামাজ হলো- মানুষের অন্তরে প্রশান্তির যথাযথ উৎস।

সূরা ত্বহার ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমিই আল্লাহ, আমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। অতএব, আমার ইবাদত করো এবং আমার স্মরণার্থ নামাজ কায়েম করো।’

সামগ্রিকভাবে বলা যায়, নামাজ হচ্ছে ক্লান্ত হৃদয়ের জন্য প্রশান্তির আধার এবং এক আল্লাহর সঙ্গে বান্দার স্থায়ী বা নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের উপায়। নামাজের মধ্য দিয়ে একজন নামাজি মানুষ আল্লাহর প্রশংসায় মশগুল হয়। তার বিশ্ব প্রতিপালনের মহত্ব এবং বিশালত্বসহ বিচিত্র সৌন্দর্যের সাক্ষ্য দেয়। অসম্ভব ভদ্রতা, নম্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সব গুণের কথা ফুটিয়ে তোলা হয়। আল্লাহর এই প্রশংসা ও বিনয়ী প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বান্দা তার মানসিক নিরাপত্তা ও আস্থাশীলতা অর্জন করে। প্রার্থনার মাধুর্য তাকে সকল প্রকার ভয়ভীতি, মানসিক অস্থিরতা, বিষন্নতা ইত্যাদি সকল প্রকার অশান্তি থেকে মুক্তি দেয়।

অবশ্য যেসব বান্দা আল্লাহর এই মহত্ব, দয়া ও তার সৌন্দর্যের বিষয়টি মনেপ্রাণে উপলব্ধি করেন- তারাই মোনাজাতে তাদের সকল বিনয়ী ভাষণ পেশ করতে পারেন। এজন্য অন্তর দিয়ে আল্লাহতায়ালাকে উপলব্ধি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর