চীন থেকে শুরু হয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। এ ভাইরাস এখন মহা আতংকের নাম, অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ। এমতাবস্থায় করোনাভাইরাস থেকে ইসলামি শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন দেশের সর্বজনমান্য আলেম, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির, দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসা মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) সন্ধ্যায় আল্লামা শফীর পক্ষে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ আনাস মাদানি কর্তৃক গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি জনগণের প্রতি এসব পরামর্শ দেন।
বিবৃতিতে আল্লামা শফী বলেন, করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে কিছু পরামর্শ দিতে চাই।
এক. রোগ-মহামারি কিংবা দুর্যোগ আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে আসে। বান্দাদের পরীক্ষা করতে বিভিন্ন সময় আল্লাহতায়ালা এমন করে থাকেন। যেমন পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ।’ -সূরা বাকারা: ১৫৫
তাই বর্তমান সময়ে আমাদের উচিত ধৈর্যধারণ করা, আল্লাহতায়ালার ওপর বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় করা এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
দুই. মহামারি কিংবা ভাইরাস নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী এমন ভাইরাস ছড়িয়েছে। এমনকি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়েও এমন মহামারি ছড়িয়েছিল। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সমাধানও দিয়ে গেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তোমরা মহামারির কোনো সংবাদ শোনো তো সেখানে তোমরা প্রবেশ হতে বিরত থাকো। আর যদি কোনো শহরে বা নগরে কেউ মহামারিতে আক্রান্ত হয়, তো সেখান থেকে তোমরা বের হয়ো না।’ -বোখারি শরিফ: ৫৩৯৬
তাই কোথাও মহামারি কিংবা সংক্রমণব্যাধি দেখা দিলে ওই জায়গা থেকে না আসা। আমাদের হাদিসটির ওপর আমল করে বিভিন্ন এলাকায় চলাফেরা ও যাওয়া-আসার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। প্রয়োজনে কড়াকড়ি আরোপ করা উচিত।
তিন. পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে সবকিছু আল্লাহতায়ালার ইচ্ছাতেই ঘটে। তবে সবকিছুর কারণ ও প্রতিকার বুঝতে আমরা সামর্থ্য রাখি না। কারণ আল্লাহতায়ালা সবচেয়ে বড় কৌশলী ও প্রজ্ঞাবান। তাই এমন মুহূর্তে আমাদের উচিত মসজিদে ও ঘরে সম্মিলিত কিংবা একাকীভাবে দোয়ার আমল করা। আল্লাহতায়ালার কাছে সমস্ত অপরাধ ও পাপ থেকে ক্ষমা চাওয়া এবং করোনাভাইরাসসহ সকল প্রকার রোগ থেকে পরিত্রাণ চাওয়া। কারণ কান্নাবিজড়িত দোয়া আল্লাহতায়ালার আজাব কমায়।
চার. আমার পরামর্শ হলো- প্রত্যেক মসজিদে বুধবার (১১ মার্চ) ফজর থেকে কুনুতে নাজেলা পড়া হোক। কারণ কুনুতে নাজেলার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা কাছে বিশেষ আর্জি পেশ করা হয়। যেমন হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসূল (সা.) ফজরের নামাজের সময় সর্বদা কুনুত নাজেলা পড়তেন না। শুধু পড়তেন কোনো জাতির জন্য দোয়া করতে বা বদদোয়া করার প্রয়োজন হলে। তিনি কুনুত পড়তেন যখন ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতের রুকু থেকে মাথা উঠাতেন।’
আরবের বিভিন্ন দেশের মানুষ মসজিদে যাচ্ছে না, জুমার নামাজে অংশ নিচ্ছে না। এটা অনুচিত ও গর্হিত কাজ। যে আল্লাহ এই রোগ দিয়েছেন তার কাছে মুক্তি চাওয়াই প্রকৃত মুমিনের কাজ। তাই মসজিদে মসজিদে কুনুতে নাজেলার আমল করা হোক।
পাঁচ. সর্বাবস্থায় নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। নিজেকে জীবাণুমুক্ত রাখুন, দু’হাত ধৌত করুন। সবসময় অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করুন। ময়লা-আবর্জনার মাধ্যমে কোনো ব্যাধি যেন না ছড়ায় সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রোগ নিরাময়ে সহযোগী এবং একটি সুন্নাহসম্মত কাজ।