সন্দেহ নেই এবারের রমজান মাস মুসলিম ইতিহাসে একেবারে ভিন্ন, ব্যতিক্রমী ঘটনা হিসাবে জায়গা পাবে। তবে কষ্ট হলেও পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। এমন উদ্বেগের মাঝেই মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে রমজান মাস। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এসব দেশের রমজান পরিস্থিতি।
আলজেরিয়া
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আলজেরিয়ায় ১৭ মার্চ থেকে মসজিদ বন্ধ রাখা হয়েছে এবং রমজানেও বন্ধ থাকবে। আলজেরিয়ার ফতোয়া কমিটির প্রধান মুহাম্মদ আবির মাশনান জানিয়েছেন, রমজানে কোরআন তেলাওয়াত এবং ধর্মীয় বক্তৃতা মসজিদ থেকে সম্প্রচার করা হবে। কোনো ধরনের জমায়েত ও আনুষ্ঠানিকতা থাকছে না।
মিসর
মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মিসরই প্রথম জোটবদ্ধ ইফতার এবং নামাজ বাতিল ঘোষণা করেছে। ৭ এপ্রিল করোনাভাইরাসের কারণে জমায়েত হয় রমজান মাসের এমন সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অনেকে বলছেন, মিসরের এসব সিদ্ধান্ত যতটা না ধর্মীয়, তারচেয়ে বেশি রাজনৈতিক।
জর্ডান
১৪ এপ্রিল জর্ডানে রমজান মাসে মসজিদে নামাজ পড়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির রাজধানী আম্মানে কঠোর লকডাউন জারি করা হয়েছে। কেউ ঘর থেকে বের হলেই গ্রেফতার করা হচ্ছে।
লিবিয়া
রাজনৈতিকভাবে প্রচণ্ড অস্থিতীশীল অবস্থায় থাকা লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণ জাতিসংঘ অনুমোদিত বিভিন্ন মিলিশিয়া সমর্থিত জাতীয় জোট সরকার (জিএনএ) এবং জেনারেল খলিফা হাফতারের নেতৃত্বাধীন বেনগাজীভিত্তিক লিবিয়ার জাতীয় সেনাবাহিনীর (এলএনএ) মধ্যে বিভক্ত। ১৮ মার্চ এলএনএ এবং ২২ মার্চ জিএনএ তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলে কারফিউ জারি করেছে। তবে মসজিদ খোলা থাকবে কিনা সে বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। রমজানের আয়োজন নিয়েও কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি।
লেবানন
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনেকগুলো ধর্মের স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশ লেবাননের প্রায় দুই তৃতীয়াংশই মুসলিম। করোনার কারণে চলমান লকডাউনে এখানে মসজিদগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। গণজমায়েতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি থাকলেও উত্তরাঞ্চলীয় শহরগুলোতে এখনও মানুষ জুমার নামাজ মসজিদে আদায় করছেন। রমজান নিয়ে তাদের নতুন কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি।
মরোক্কো
২০ মার্চ থেকে জারি করা লকডাউনের অংশ হিসেবে মরোক্কোর সব মসজিদ বন্ধ রয়েছে। সরকার লকডাউন ২০ মে পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ফলে পুরো রমজান মাস লকডাউনেই কাটাতে হচ্ছে মরোক্কোবাসীদের।
ফিলিস্তিন
পুরো রমজান মাস জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ মুসলিমদের নামাজের জন্য বন্ধ থাকবে। ইসলামের তৃতীয় পবিত্র স্থানের রক্ষণাবেক্ষণকারী জর্ডান নিয়োগকৃত কাউন্সিল একথা জানিয়েছে। জেরুজালেম এবং ফিলিস্তিন অংশের গ্র্যান্ড মুফতি মুহাম্মদ হুসেইন জমায়েত করে রমজানের চাঁদ দেখতেও নিরুৎসাহিত করেছেন ফিলিস্তিনিদের। আর গাজা অংশে হামাস দুই সপ্তাহের জন্য সব মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে। রমজান নিয়ে তাদের ভিন্ন কোনো পরিকল্পনার কথা শোনা যায়নি।
সিরিয়া
সিরিয়ার বাশার আল আসাদ সরকার ২ মে পর্যন্ত মসজিদে জামাত করে নামাজ আদায় বন্ধ ঘোষণা করেছে। এখন পর্যন্ত রমজানের জন্য আলাদা কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
তিউনিসিয়া
প্রতিবেশী দেশ আলজেরিয়ার মতো তিউনিসিয়া মার্চের মাঝামাঝিতে মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে। রমজান মাস উপলক্ষে তারা মসজিদ চালুর ঘোষণা দেয়নি।
তুরস্ক
দেশে ১৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পরই ১৬ মার্চ তুরস্কের মসজিদে জামাত করে নামাজ আদায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত সপ্তাহে দেশটির ঊর্ধ্বতন ধর্মীয় সংস্থা তারাবির সময় মসজিদ বন্ধ থাকবে বলে নিশ্চিত করেছে। ইফতার মাহফিল আয়োজন থেকে বিরত থাকতে এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতেও বলা হয়েছে নাগরিকদের।
-আল আরাবিয়া অবলম্বনে