বিশ্বের মুসলমানরা একযোগে পবিত্র রমজানের রোজা পালন করছেন। রমজান মাস মানেই ইবাদত-বন্দেগির মাস। মুমিন-মুসলমানরা এ মাসের জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন।
মুসলমানগণ রমজানের রোজা পালনের পাশাপাশি পাপ মোচনের জন্য এ মাসে আল্লাহতায়ালার দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার পাঠ করেন। আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করার নিমিত্তে ভালো ও নেকের কাজে মনোনিবেশ করেন। রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষায়, এ মাসের সম্মানে মানুষমাত্রই সব ধরনের অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন।
রমজানের রোজা মূলত একটি ইবাদত, এটা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তাকে পাওয়ার একটি মাধ্যম। আল্লাহপাক রমজানের রোজাকে প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরজ ঘোষণা করেছেন।
পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’
রমজান মাস শুরু হলে রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে শয়তানকে শিকলে আবদ্ধ করে রাখা হয়।
রমজান আসে মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে। রোজা ফার্সি শব্দ, যার অর্থ ‘বিরত থাকা’। আরবিতে বলা হয় সিয়াম, অর্থ ‘বিরত থাকা’, ‘আত্মসংযম করা’ ইত্যাদি।
রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে একজন রোজাদার নিজেকে গড়ার চেষ্টা করেন, নিজের ভেতরে আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তোলেন, নিজের ভুলত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেন। যাবতীয় অনাচার-পাপাচার থেকে বিরত থাকেন। যদিও পরিভাষায় সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পানাহার, দাম্পত্য মিলন ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার সকল বিষয় থেকে বিরত থাকার নাম সিয়াম।
রমজানের এই তাৎপর্য রোজাদাররা মনেপ্রাণে কতটুকু ধারণ করতে পারছে- সেটা বিশ্লেষণ সাপেক্ষ বিষয়। বছর ঘুরে আমাদের মাঝে রমজান আসে, রমজান যায়। কিন্তু আমাদের মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন দেখা যায় না। দিন দিন আমাদের ভেতরের পাশবিকতা যেন বেড়ে যাচ্ছে, আমরা অমানুষে পরিণত হচ্ছি। যে রমজানে আমাদের সৎ থাকার কথা সেই রমজান মাসকে জিম্মি করে মানুষকে নানাভাবে হয়রানি করছি। প্রতারণা করছি তাদের সঙ্গে।
রমজান মাস এলে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়িরা সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেন বিভিন্ন অজুহাতে। মানুষের দুর্ভোগ, সরকারি নানা পদক্ষেপ ও আইন প্রয়োগ করেও তাদের থামানো যায় না। এমন মনোভাব কোনোভাবেই কাম্য নয়। এবার যেহেতু ভিন্ন পরিস্থিতিতে রমজান এসেছে, তাই আমরা আশাবাদী- রমজানে দ্রব্যমূল্য মানুষের নাগালেই থাকবে।
আমরা ব্যবসায়ীদের কাছে প্রত্যাশা করি, অন্তত রমজান মাসের পবিত্রতা ও সম্মান রেখে চলমান রোজায় দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখুন। এক দিকে মানুষের বিপদ, আর বিপদকে পুঁজি বানিয়ে মানুষকে জিম্মি করা, সিন্ডিকেট গড়ে তুলে প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া কাম্য নয়। এগুলো রমজানের শিক্ষার বিপরীত কাজ।
মনে রাখবেন, ব্যবসায় যারা সাধারণ মানুষকে না ঠকিয়ে, প্রতারণা না সৎ ও সাধুতার সঙ্গে ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করে- তারা সমাজ, দেশ ও জাতির মহান সেবক। এমন ব্যবসায়ীদের প্রসঙ্গে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সত্যবাদী, সৎ ব্যবসায়ীরা পরকালে নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবেন। অর্থাৎ সৎ ব্যবসায়ীরা কিয়ামতের মাঠেও সম্মানিত হবেন।