পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এ মাসকে ঘিরে মুমিন-মুসলমানদের প্রত্যাশা অনেক। তারা অপেক্ষায় থাকেন ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করে পরিশুদ্ধ হয়ে আল্লাহতায়ালার দরবারে উপস্থিত হতে। এ জন্য রমজান মাসে ফরজ রোজা পালনের পাশাপাশি, তারাবির নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার বেশি বেশি করতে হবে। সেই সঙ্গে আত্মোন্নয়ন ও সংশোধনের অতিরিক্ত কিছু আমল করা দরকা। সেসব আমলের কিছু হলো-
সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত
সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত সকল ঈমানদারদের জন্য একটি অবশ্য পালনীয় কাজ। মনে রাখতে হবে, কোরআন তেলাওয়াত সহিহ-শুদ্ধ না হলে নামাজও সহিহ হয় না। কাজেই এর গুরুত্ব সর্বাধিক। এমতাবস্থায় আমাদের পরামর্শ থাকবে, অন্তত রমজান মাসকে টার্গেট করে সহিহ কোরআন তেলাওয়াত শিক্ষা করা। ইমাম আযম হজরত আবু হানিফা (রহ.) সহ আমাদের আকাবিরগণ মাহে রমজানে কোরআন তেলাওয়াতে এমনভাবে নিবেদিত থাকতেন যা আমাদের কাছে অকল্পনীয়।
কেননা মাহে রমজান হচ্ছে কোরআন নাজিলের মহিমান্বিত মাস। অতএব করোনাকালে আগমন করা মাহে রমজানের অবসরের সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত রপ্ত করা এবং সামগ্রিকভাবে কোরআন চর্চা করা। সুযোগ হলে কোরআনের অর্থ ও তাফসির পাঠ করা। কোরআনের শিক্ষার আলোকে জীবনকে গড়া।
জাকাত আদায়
জাকাত আদায় করা অবস্থাসম্পন্ন সাহেবে নেসাব মুসলিমদের জন্য অবশ্য করণীয় কাজ। তবে জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে যেহেতু বছর অতিক্রান্ত হওয়ার বিষয় জড়িত সেহেতু সকলকে রমজান মাসেই জাকাত দিতে হবে এমনটি নয়। তবে উলামায়ে কেরামের মতে জাকাত অগ্রীম হিসেবেও দেওয়া যায়। আর যাদের জাকাত প্রদানের সময় আসন্ন হয়ে পড়েছে তাদের পক্ষে তো জাকাত আদায় করতেই হবে। সে প্রেক্ষিতে মাহে রমজানে জাকাত আদায় করলে দু’টি লাভ। একদিকে এটি হবে মাহে রমজানে সমাজের অসহায় মানুষের জন্য সহযোগিতা অপর দিকে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক পরিমাণ সওয়াব অর্জনের সুযোগ। কাজেই এ ব্যাপারে আমরা সংশ্লিষ্ট সকলের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
জরুরি মাসয়ালা-মাসায়েল জানা
মাহে রমজানে রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল সম্পর্কে মুসলিম জনসাধারণের মধ্যে অনেকেই অজ্ঞাত। রমজান মাসে সেসব বিষয়ে জ্ঞাত হওয়া জরুরি। শুধু রোজা সম্পর্কে নয়- পবিত্রতা, নামাজ, জাকাত, কোরআন তেলাওয়াত, পরস্পরে আচার-ব্যবহার ইত্যাদি বিষয়ের প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল বিষয়ে অবগত হওয়া উচিৎ।
মোদ্দা কথা, যাবতীয় ইবাদত সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা মুসলিম হিসেবে আমাদের অবশ্য কর্তব্য। কাজেই মাহে রমজানে আমরা যদি জরুরি মাসয়ালা-মাসায়েল অধ্যয়ন সেরে নিতে পারি সেটি হবে সবচাইতে যৌক্তিক কাজ। তবে এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ থেকে অধ্যয়ন করতে হবে। নিকটস্থ মুফতি, ইমাম-খতিবের কাছ থেকে মাসয়ালা শিখা যেতে পারে।
সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আমরা যেসব আমলের কথা উল্লেখ করেছি সেগুলো মোটেই ঠুনকো কোনো বিষয় নয়। বরং আমাদের ঈমানের অপরিহার্য দাবি এগুলো। সর্বোপরি উল্লিখিত কাজগুলো কেবল বলা বা লেখার বিষয় নয়, যদি আমরা বাস্তবিক আমলের বিষয়ে পরিণত করতে পারি তাহলে সেটিই হবে মাহে রমাজানকে মর্যাদাদানের সর্বোৎকৃষ্ট উপায়।