বাংলাদেশের অধিকাংশ জায়গায় রমজান মাসে তারাবির নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় করে থাকেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বিকল্প হিসেবে টেলিভিশনে কিংবা তারাবির নামাজ সরাসরি সম্প্রচার অনুসরণ করে তারাবির নামাজে অংশ নিতে উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। এমনকি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল তারাবির নামাজ সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
টেলিভিশন ছাড়াও অনেকে অনলাইনে সম্প্রচারিত কোনো জামাতের অডিও শুনে খতমে তারাবি আদায়ের কথা বলছেন। তাদের যুক্তি অনেক বড় মসজিদে বেশিরভাগই লোকই কিন্তু ইমামকে দেখতে পান না। তারা মাইকে ইমামের যে শব্দ ভেসে আসে সেটা অনুসরণ করে নামাজ পড়েন। এখানে অডিও শুনে নামাজ আদায় করবেন।
কিন্তু ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক এভাবে নামাজ পড়া বিধিসম্মত নয়। এটা নামাজ আদায়ের বৈধ কোনো পদ্ধতিও নয়। ইসলামি ফিকহে এর অনুমোদন নেই। এ বিষয়ে বিশ্বের অধিকাংশ মুফতি একমত।
মুফতিদের মতে, শুধু যন্ত্রের ওপর নির্ভর করে নামাজ পড়লে সেটা নামাজ হবে না। আর বড় মসজিদের ক্ষেত্রে ইমামকে দেখতে পাওয়ার বিষয়টা জরুরি নয়। কারণ মসজিদে প্রথম কাতারে যারা থাকেন তারা ব্যতিত আর তো ইমামকে দেখতে পান না। পেছনের কাতার থেকে ইমামকে দেখে না কিন্তু ইমামের আওয়াজ শোনে। তবে তারা একই মসজিদের জামাতবদ্ধ থাকেন।
কেউ কেউ ধর্মের বিধানের বাইরেও এ পদ্ধতিতে নামাজ আদায়ের সমালোচনায় বলছেন, টেলিভিশন দেখে কিংবা অডিও শুনে নামাজ পড়ার সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেলে কি হবে? তাই এটা অনুসরণযোগ্য নয়।
আসলে বিষয়টি এমন নয়। অব্যাহত বিদ্যুৎ নিশ্চিত করে নিলেও এভাবে ইমামতি ও জামাত ইসলামি শরিয়তে শুদ্ধ নয়। ইসলামি শরিয়তে জামাত সহিহ-শুদ্ধ হওয়ার ইমামের মুক্তাদির সামনে থাকা শর্ত। এ ছাড়া সবার স্থানগত উপস্থিতি, কাতারে কাতারে সংযোগ (যেটাকে শরিয়তের পরিভাষায় ইত্তিসাল বলা হয়), মসজিদ ও বারান্দায় খোলা দরজা ইত্যাদি জরুরি। পেছনের কাতারের বেশি দূরত্ব, বড় অন্তরায় বা কাতারের মাঝে চলাচলের রাস্তা থাকলে পেছনের মুসল্লিদের নামাজ বা জামাতে অংশগ্রহণ শুদ্ধ হয় না। জামাতে সশরীরে উপস্থিতি এবং কাতারে সংযোগ না থাকলে নামাজ সহিহ হয় না। তাই টেলিভিশনে নামাজের ইক্তেদার ধারণা ইসলামসম্মত নয়। সুতরাং টেলিভিশনে কোনো ইমামকে অনুসরণ করে নামাজ আদায় কিংবা আদায়ের আহ্বান ধর্মের নামে বিভ্রান্তি ছড়ানো বৈ অন্য কিছু নয়।
মনে রাখতে হবে, নামাজ একটি ইবাদত। তাই নামাজের ক্ষেত্রে নবী করিম (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তীদের অনুসরণ করে তা আদায় করতে হবে।
আরেকটি কথা, অনেকে নামাজে কোরআন মজিদ দেখে পড়ার কথা বলছেন। এটাও সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর কথা। নামাজে কোরআন দেখে তেলাওয়াত করা নামাজ ভঙ্গের কারণ। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনোই নামাজে কোরআন দেখে পড়েননি। সাহাবিদেরও কেউ কখনও নামাজে কোরআন দেখে তেলাওয়াত করেননি। বোখারি শরিফে বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সেভাবেই নামাজ পড়ো, যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখেছো।’
নামাজ একটি বিশেষ ইবাদত। ইবাদত সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য হওয়া জরুরি। এর সঙ্গে অন্য কিছু জড়িত থাকলে এটা শিরকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। শুধু প্রদর্শনের জন্য নামাজের আয়োজন হতে পারে না।
মহামারি কিংবা মারাত্মক অসুস্থতাসহ যথাযথ কারণ থাকলে মসজিদে না গিয়ে বাসা-বাড়িতে নামাজ পড়া যাবে। এতে ইসলামে কোনো বাধা নেই।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এ সময়ে বাড়াবাড়ি করে মসজিদে ব্যাপক জনসমাগম মোটেই উচিত নয়, বরং সতর্কতা অবলম্বন করে বাড়িতে নামাজ পড়াই শ্রেয়। কিন্তু এই সুযোগে ইবাদত-বন্দেগির ধরণ বদলানোর চেষ্টা কিংবা মনগড়া নতুন নতুন পদ্ধতির আবিষ্কারও কাম্য নয়।