প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এই ভাইরাস মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে। লকডাউনের ফলে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে কোটি কোটি মানুষ। এই সময়ে আগমন ঘটেছে পবিত্র রমজান মাসের।
একদিকে বৈশ্বিক মহামারির প্রকোপের বিপদ, অন্যদিকে রহমতের মাসের আগমন। তাই এই সময়টাকে রহমত মনে করে বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহতায়ালার দরবারে বেশি বেশি দোয়া-মোনাজাত করতে হবে। তাই লকডাউন পরিস্থিতিতে রমজানের অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। কারণ, এই সময়টা হচ্ছে- আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তনের সময়। আল্লাহর রহমত প্রত্যাশার সময়।
ঘরবন্দী অবস্থায় এখন আমাদের হাতে অনেক অবসর সময় রয়েছে। যদিও অধিকাংশ মানুষকে অবসর সময়ের মূল্য দেয় না। এ প্রসঙ্গে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’টি নেয়ামত এমন রয়েছে অধিকাংশ মানুষ যার মূল্য দেয় না। সেই দু’টি নেয়ামত হলো- সুস্থতা এবং অবসর সময়। এজন্য আমাদের এই অবসর সময়ের মূল্য দিতে হবে।
ইসলামি স্কলাররা রমজানের মুসলিমদের ঘরে সময় কাটানোর ব্যাপারে কতগুলো দিক-দির্দেশনা ও পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হলো-
এক. গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। বিশেষ করে যেসব মহিলাদের দেখা জায়েজ নয়, তাদের দেখা থেকে বিরত থাকা।
দুই. গান-বাজনা শোনা থেকে বিরত থাকা, ঘরে ছবি না ঝুঁলানো ও না রাখা।
তিন. অপ্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময় নষ্ট করবে না।
চার. যাচাই-বাছাই না করে কোনও খবর প্রচার করবে না এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করবে না।
পাঁচ. সমাজে ভয়ভীতি ছড়ানো থেকে বিরত থাকা। গুজব পরিহার করে চলা।
ছয়. ছয় থেকে আট ঘন্টার বেশি না ঘুমানোর চেষ্টা করা।
সাত. সারাক্ষণ মোবাইল হাতে রাখা, গেম খেলা এবং খারাপ জিনিস দেখা থেকে বিরত থাকা।
আট. ঘরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাতের সঙ্গে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার চেষ্টা করা। সেই সঙ্গে সুন্নত, নফল, তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত্ এবং আওয়াবিন নামাজ আদায়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
নয়. নামাজ আদায়ের পর সুন্নত দোয়া-দরুদ পড়া।
দশ. সাধারণ মানুষের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ১ পারা এবং কোরআনের হাফেজের জন্য তিন পারা তেলাওয়াত করা।
এগারো. দরুদ শরিফ, ইস্তেগফার লা হাউলা ওলা কুয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বেশি বেশি পড়া। তিন তাসবিহের আমল করা।
বারো. প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট একাগ্রচিত্তে আল্লাহর নিকট দোয়া করা।
তেরো. প্রতিদিন কিছু সময় বই পড়া। ভালো হয়- হায়াতুস সাহাবাহ বই পড়া। সম্ভব হলে নির্ভরযোগ্য কোরআনের তাফসির পাঠ করা। অথবা যে কোনো ভালো বই পড়া যেতে পারে।
চৌদ্দ. নিজের সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদের সময় দেওয়া। তাদের সঙ্গে গল্প করা এবং তাদের কথা শুনা। রান্না-বান্না, ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ ঘরের কাজে নারীদের সাহায্য করা।
পনেরো. আত্মীয়-স্বজন, পড়া-প্রতিবেশী ও অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের খোঁজ-খবর নেওয়া। প্রয়োজনে তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।