পবিত্র রমজানের ১৭তম তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে ২০তম পারা। অর্থাৎ সূরা নমলের ৬০ নম্বর আয়াত থেকে সূরা আনকাবুতের ৪৪ নম্বর আয়াত পর্যন্ত। আজকের তারাবির তেলাওয়াতকৃত অংশের বিশেষ প্রসঙ্গ হচ্ছে আল্লাহর নবী হজরত মুসা আলাইহিস সালাম।
সূরা কাসাসের শুরু থেকে ৪২ নম্বর আয়াত পর্যন্ত হজরত মুসা (আ.)-এর জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অংশ আলোচনায় স্থান পেয়েছে।
পবিত্র কোরআন হজরত মুসা (আ.)-এর বৃত্তান্ত শুরু করেছে তার জন্মের প্রেক্ষাপট দিয়ে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ফেরাউন তার দেশে পরাক্রমশালী হয়েছিল এবং সে দেশবাসীকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে তাদের একটি দলকে দুর্বল করে দিয়েছিল। সে তাদের পুত্র সন্তানদের হত্যা করতো এবং নারীদের জীবিত রাখতো। নিশ্চয় সে ছিল অনর্থ সৃষ্টিকারী।’ -সূরা কাসাস: ৫
আলোচ্য আয়াতে ফেরাউনের চরিত্র বর্ণার মাধ্যমে মহান আল্লাহ যুগ-যুগান্তরের অত্যাচারী শাসকদের চরিত্র চিত্রায়িত করেছেন। সকল দেশের, সকল যুগের গণবিচ্ছিন্ন অত্যাচারী শাসক তাদের শোষণ চিরস্থায়ী করতে এ দুই চরিত্র ধারণ করে থাকে। জাতিকে বিভক্ত করে আর বিরুদ্ধবাদীদের হত্যা করে। একজন সফল, জনদরদী, প্রজাহিতৈষী ও কল্যাণকামী শাসকের লক্ষ্য থাকে জাতীয় সংহতি সুদৃঢ় করা। কিন্তু জনকল্যাণের পরিবর্তে নিজের কল্যাণে বিভোর শাসক জাতীয় সংহতি ও ঐক্য সুদৃঢ় করার পরিবর্তে বিদ্যমান সংহতি ও ঐক্যকে আরও বিনষ্ট করে। প্রজাদের পরস্পরের মধ্যে বিভেদ উসকে দিয়ে প্রজাদের বহু ধারায় বিভক্ত করে। বিভক্তিকে আরও সুদৃঢ় করে, দীর্ঘস্থায়ী করে। কখনও তা করে চেতনার নামে, কখনও তা করে দলের নামে, কখনও তা করে ভাষার নামে।
‘ভাগ করো, শাসন করো’-এটা মূলত ফেরাউনের মতবাদ। অপরদিকে একজন কল্যাণকামী শাসকের বৈশিষ্ট্য হলো- সমালোচকদের কথা শোনা, শত্রুকে আপন করে নেওয়া, নিরপেক্ষতার সঙ্গে পক্ষের বিপক্ষের সব নাগরিককে সমান রাষ্ট্রীয় সুযোগ ও অধিকার প্রদান করা। কিন্তু অত্যাচারী শাসক সবসময়ে থাকে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তটস্থ, গণবিদ্রোহে উৎখাতের ভয় তাকে সর্বদা তাড়া করে ফেরে তাই সে নিজেকে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী করতে হত্যা ও গুমের পথ বেছে নেয়। নামে-বেনামে বিপক্ষের মানুষদের, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের, সমালোচকদের গুম ও হত্যার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। এটা পৃথিবীতে নতুন নয়। সেই ফেরাউন থেকে এর সূচনা।
দুর্বল শাসকরা গুম করাকে সহজ মনে করে। আর সবল শাসকরা গুমের ঝামেলায় না যেয়ে প্রকাশ্যে হত্যার পথে হাঁটে। ফেরাউন বনী ইসরাইলদের দমন করার জন্য হত্যার পথ বেছে নেয়। এক দুই নয় হাজার হাজার ছেলে শিশুকে ফেরাউন হত্যা করতে থাকে। বনী ইসরাইলদের ঘরে কোনো নবজাতক ভূমিষ্ঠ হওয়ামাত্রই ফেরাউনের রাজসৈনিক চলে আসতো। নবজাতক দেখতো। ছেলে সন্তান পেলে সঙ্গে সঙ্গে হত্যা করতো।
আল্লাহতায়ালা তো আল্লাহই। তিনি একক, তিনি অমুখাপেক্ষী। তার ইচ্ছে কেউ বানচাল করতে পারে না। ‘দেশে যাদের দুর্বল করা হয়েছিলো, আমার ইচ্ছা হলো- তাদের প্রতি অনুগ্রহ করার, তাদেরকে নেতা করার এবং তাদেরকে দেশের উত্তরাধিকারী করার এবং তাদেরকে দেশের ক্ষমতায় আসীন করার।’ -সূরা কাসাস: ৬
তিনি বনী ইসরাইলের এক শিশু মুসাকে ফেরাউনের ঘরে ফেরাউনের স্ত্রী ও দাসীদের মাধ্যমে ফেরাউনের অর্থায়নে ফেরাউনকে দ্বারাই লালন-পালন করালেন, সুবহানাল্লাহ।
আল্লাহতায়ালা দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে রাখলেন, ক্ষমতায় কেউ চিরস্থায়ী নয়, জুলুম করে কাউকে দমন করে রাখতে চাইলে আল্লাহতায়ালা তাকে ওপরে উঠাবেন, গুম-হত্যার দ্বারা দমন সফল হয় না। পৃথিবীর সকল জালেম শাসকদের জন্য এ সূরা একটি চূড়ান্ত নোটিশ।