সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার পাপের কাজ

রামাদ্বান কারীম, ইসলাম

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-08-31 04:26:54

রমজানের ২৩তম তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে ২৬তম পারা অর্থাৎ সূরা আহকাফের শুরু থেকে সূরা জারিয়াতের ৩০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত। এ তারাবির অতিব গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গগুলোর একটি হলো- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভদ্রতা।

সামাজিক যোগাযোগ পৃথিবীতে নতুন কিছু নয়। আদিকাল থেকেই মানুষের মাঝে সামাজিক সম্পর্ক আর সেই সম্পর্কের সূত্রে সামাজিক যোগাযোগ চর্চা হয়ে আসছে। তবে প্রযুক্তির উৎকর্ষ আবহমানকালের সামাজিক যোগাযোগে এনেছে নতুনমাত্রা। দিয়েছে নতুন মাধ্যম। প্রযুক্তির নতুন মাধ্যম অন্তর্জাল, আর সেই অন্তর্জালকে ব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ইত্যাদি মাধ্যমগুলো সামাজিক যোগাযোগকে করে দিয়েছে অনেক সহজ এবং অনেক অনেক দ্রুতগতিসম্পন্ন। সহজ ও গতি এ দুয়ের কারণে আধুনিক এ সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেভাবে উপকারী ঠিক সেভাবে ক্ষতিকরও বটে। তবে এগুলোর উপকার ও ক্ষতি নির্ভর করে নিছক ব্যবহারকারী চরিত্র ও মানসিকতার ওপর। তাই আদিকালের সামাজিক যোগাযোগের চেয়ে বর্তমানের সামাজিক যোগাযোগে ব্যক্তিকে আরও বেশি দায়িত্বশীল ও বিশ্বস্ত হতে হয়। অথচ বাস্তবে এর উল্টোটাই বেশি ঘটছে, সম্মুখ জীবনে ভদ্র বলে সুপরিচিত ব্যক্তিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভদ্র হয়ে উঠে। ফেসবুকের কমেন্টে এমন শব্দ সে ব্যবহার করে বসে যে শব্দ তার মুখ থেকে তার কাছের ব্যক্তিরা কোনোদিন শোনেনি।

আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ব্যক্তির থেকে এমনটি হওয়ার কথা ছিলো না। কেননা, অফলাইন আর অনলাইন সব লাইনের কাজের জবাব কিন্তু পরকালে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে দিতে হবে। তিনি প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সব সমানভাবে জানেন। ১ কিলোবাইট পরিমাণ কাজও কিন্তু বিচারের আওতার বাইরে থাকবে না। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতিটি পোস্ট, প্রতিটি কমেন্ট, প্রতিটি রিয়েক্ট, প্রতিট রিচ, প্রতিটি শেয়ার, প্রতিটি লাইক তথা প্রতিটি বাইটের নিখুঁত তথ্য আমলনামাতে সংরক্ষিত হচ্ছে। আর প্রতিটি বাইটের জন্যই হয়তো সওয়াব পাবেন, না হয় গোনাহ পাবেন। হয়তো পুরস্কার পাবেন, না হয় শাস্তি পাবেন।

আজকের তারাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ার কয়েকটি ভদ্রতার কথা আলোচনা করা হবে। যেমন-

১. কোনো সংবাদ, ছবি পোস্ট করার আগে বা কোনো সংবাদ বা ছবির লিংক শেয়ার করা আগে সেই সংবাদ বা সেই ছবির সত্যতা যাচাই করা। যদি অসত্যতা প্রমাণিত হয় অথবা যাচাই করা সম্ভব না হয় তাহলে তা পোস্ট বা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা।

কিছু অমানুষ পুরোনো ঘটনার ছবিকে নতুন ঘটনার ছবি বলে ছড়িয়ে দেয়, এক ঘটনার ছবিকে আরেক ঘটনার ছবি বলে ছড়িয়ে দেয়, খুব সূক্ষ্মভাবে ছবি এডিট করেও ছড়ায় অনেকে। চমৎকার শিরোনাম পেয়ে, নিজের পক্ষের শিরোনাম পেয়ে, বিপক্ষের জন্য ক্ষতিকর শিরোনাম পেয়ে অনেকেই ঠিকানাহীন, দায়িত্বহীন, অস্তিত্বহীন পোর্টালের লিংক শেয়ার করে বসে।

অথচ মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেন, ‘মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।’ -সূরা হুজরাত: ৬

২. ঠাট্টা ও বিদ্রুপাত্মক বা উপহাসমূলক কোনো পোস্ট না করা, অন্যের এ ধরণের পোস্ট লাইক ও শেয়ার করা থেকে বিরত থাকা।

৩. দোষাদোষীমূলক পোস্ট নিজেও না করা, এ ধরণের পোস্টে লাইক ও শেয়ার না করা।

৪. পোস্টে কারও নাম বিকৃত না করা, মন্দ নাম না দেওয়া। ভিন্ন মতের, ভিন্ন মাসলাকের, ভিন্ন ফেরকার, ভিন্ন মাজহাবের, ভিন্ন আদর্শের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে ফেসবুকে এ ধরনের পোস্টের এতো বেশি ছড়াছড়ি যা রীতিমতো বিরক্তিকর ও ঘৃণাকর। আপনি যুক্তি, প্রমাণ ও তথ্য দিয়ে তার মত খণ্ডন করে পোস্ট দিতেই পারেন, এমনকি এ ক্ষেত্রে তার পোস্টের কাউন্টারও করতেই পারেন কিন্তু তাই বলে তো মতের ভিন্নতায় আপনি তাকে নিয়ে ট্রল করতে পারেন না। তার ছবি, তার নাম, তার পরিচয়, তার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ, তার বেশভূষা ইত্যাদি নিয়ে বিদ্রুপ করতে পারেন না, ব্যঙ্গ করতে পারেন না। অন্যরা তার দোষ নিয়ে হাসাহাসি করবে এমনভাবে তা বর্ণনা করতে পারেন না। তার ছবিকে বিকৃত করতে পারেন না। মানুষকে হাসানোর জন্য তার ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড বদলে মন্দ কিছু দিতে পারেন না।

চরম হতাশা ছেঁয়ে যায়, যখন দেখা যায় একজন আলেম ভিন্নমতের আরেকজন আলেমকে নিয়ে, দাঈকে নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক পোস্ট করে, তার মন্দ নাম দেয়, তার ব্যক্তিগত দোষ খোঁজে বের করে।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিনগণ! কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। ... তোমরা একে অপরকে দোষারোপ করো না। একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাকে মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করবে তারাই জালেম।’ -সূরা হুজরাত: ১১

এ সম্পর্কিত আরও খবর