মক্কা (সৌদি আরব) থেকে: শনিবার (১৮ আগস্ট) দিন শেষে শুরু হচ্ছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। বাংলাদেশ থেকে এবার পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব এসেছেন সোয়া লাখের বেশি হাজী। সুস্থভাবে হজ সুসম্পন্ন করতে তাদের জন্যে বার্তা২৪.কমের মাধ্যমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন ক্যাডারের যুগ্ম সচিব ও জেদ্দায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হজ মিশনের কাউন্সিলর মুহাম্মাদ মাকসুদুর রহমান।
মক্কায় প্রচণ্ড তাপমাত্রা। এই তাপমাত্রার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা হাজী সাহেবরা খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণে ঠাণ্ডা কাশিতে আক্রান্ত হন।
অনুগ্রহ করে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে প্রচণ্ড রোদে বাইরে ঘোরাঘুরি করবেন না। মনে রাখতে হবে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অনেক কষ্ট করে আপনারা এসেছেন পবিত্র হজ পালন করতে। তাই হজের আগে শারীরিক দুর্বলতা দেখা দেয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন।
অনেকেই হজের আগে বেশি বেশি করে নফল ওমরাহ করছেন। এতে করে শারীরিকভাবে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আপাতত সাধ্যের অতিরিক্ত নফল ওমরাহ থেকে বিরত থাকুন।প্রস্তুতি নিন হজের জন্যে। মিনা,মুজদালিফাহ ও আরাফাত এলাকায় উচ্চ তাপে বাইরে অযথা ঘোরাফেরা করবেন না। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে বাইরে বেড়াতে বা বাজার করতে না যাওয়াই ভালো। এই পবিত্র নগরীতে দয়া করে কেউ একা একা বের হবেন না। বের হলেও সাথে মোয়াল্লেম কার্ড রাখুন।লক্ষ্য রাখবেন যেন নিজে দল ছুট না হয়ে যান। কারণ লাখ লাখ মানুষের ভিড়ে নিজের হারিয়ে গেলে আপনি যেমন অসহায় বোধ করবেন তেমনি আপনাকে খোঁজাখুঁজি করার জন্যে আপনার সঙ্গীদের বাড়তি পেরেশানিতে পড়তে হবে। হারাম শরিফে নামাজ পড়তে গেলেও দল বেঁধে একত্রে যান। কোন ক্রমেই অচেনা এই নগরীতে একা কোথাও যাবেন না।
মিনা,আরাফাতের ময়দান ও মুজদালিফাহতে বেশি খাবেন না। বেশি খেলে বেশিবার টয়লেটে যেতে হবে।সেখানে টয়লেটের সংকট রয়েছে। পানি পর্যাপ্ত পান করুন।আরাফাতের ময়দানে আল্লাহর মেহমান হিসেবে বিনামূল্যে অনেকে খাবার পরিবেশন করেন।এই খাবারকে বলা হয় সাবিল।সাবিলের খানা কম খাবেন।নিজের ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন থাকুন। আল্লাহর ঘরে এসে অনেকে নিজের ডায়াবেটিস রোগের কথা একেবারের ভুলে যান।এটা কখনোই সঠিক নয়।আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
মক্কায় এসে অনেকে বেশি বেশি খেজুর খান।এটা পরিমিত খাওয়াই উত্তম। প্রচণ্ড গরম থেকে হোটেলে পৌঁছে অনেকে ঠাণ্ডা পানি বেশি বেশি পান করেন।এটাও পরিহার করুন।
ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে গেলে-ও আপনি বেঁচে যাবেন।কিন্তু মনে রাখবেন কমায় চলে গেলে বা নীল হয়ে গেলে কিন্তু রেহাই নেই। নিজের ডায়াবেটিস আছে কি’না তা যাচাই করে নিন।
আর তাওয়াফ বা সাই করার সময় যদি ডায়াবেটিসের মাত্রা বেড়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে চকলেট, খেজুর বা কাচা চিনি সঙ্গে রাখুন।
শারীরিক ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ থেকে বিরত থাকুন। বাড়তি ঝুঁকি নেবেন না। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা হাজী সাহেবরা অনেকেই ঢাকায় হোটেলের খাবার খেয়ে এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আবার হোটেল বা উড়োজাহাজ দেয়া খাবারের সাথে অভ্যস্ত না হওয়ায় অনেকে না খেয়ে কাটিয়ে দেন। এতে তাদের শরীরে এসিডিটি বেড়ে যায়। অনেকে এখানে এসে বেশি বেশি জুস খান। এতেও অনেকেই পেট খারাপে আক্রান্ত হন। পাতলা পায়খানার মতো অসুখে পড়তে হয়। এসব হলে দ্রুত খাবার স্যালাইন খান।
যদি আল্লাহ না করুন অসুস্থ হয়ে গেলেও চিন্তা নেই। আমরা খবর পেলে প্রয়োজনে আপনার হোটেলে ডাক্তার পাঠিয়ে দেবো। আমাদের ৫টি এ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। ১০০শ’য়ের বেশি অভিজ্ঞ সিনিয়র ডাক্তার ছাড়াও আপনাদের সেবায় রয়েছে আড়াই‘শ দলের বিশাল মেডিকেল টিম। কোন বিশেষায়িত হাসপাতালে যাবেন- অবস্থা বুঝে আপনাকে তারা পরামর্শ দেবে। সেখানেও আপনাদের সেবায় প্রস্তুত রয়েছে আমাদের দোভাষী টিম।
সৌদি সরকার এখানে সম্মানিত আল্লাহর মেহমানদের জন্যে উদার নীতি নিয়েছেন। হজে এসে কেউ যদি কোন জটিল রোগে আক্রান্ত হন বা শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় তাহলে বিনামূল্যে তার জন্যে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা সেবা নেবার সুযোগ রয়েছে এখানে। বর্তমানে বেশ কয়েকজন হাজী ওপেন হার্ট সার্জারি, কেমো থেরাপী, আইসিইউ বা সিসিইউ সেবা গ্রহণ করেছেন। এ জন্যে তাদের একটি পয়সাও খরচ করতে হয়নি।
হারামাইন শরিফ আইনের আওতায় সম্মানিত হাজীরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা এখানে পাবেন বিনামূল্যে।
তবে সবার আগে খেয়াল রাখতে হবে নিজের সুস্থতার ওপর। মনে রাখতে হবে আপনার উদ্দেশ্য পবিত্র হজ সঠিক নিয়মে পালন করা। যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই আপনার এতদূরে নিয়ে এসেছে। তাই নিজের সুস্থতার জন্যে আপনার একটু সচেতনতাই যথেষ্ট।