মক্কা-মদিনার পথে পথে প্রতারিত হাজীদের নীরব আর্তনাদ

হজ, ইসলাম

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 07:28:12

মক্কা মোকাররমা (সৌদি আরব) থেকে: পবিত্র হজপালন করতে এসে এজেন্সির প্রতারণায় বাংলাদেশি হাজীদের নীরব আর্তনাদ এখন মক্কা আর মদিনার পথে পথে।

অভিযুক্ত হজ এজেন্সিগুলো এ ব্যাপারে স্থানীয় মোয়াল্লেমদের চরম অব্যবস্থাপনার ওপর দায় চাপালেও তা মানতে নারাজ স্থানীয় হজ মিশন।

হাজীদের অভিযোগ, আবাসস্থান ও পরিবহন সুবিধাসহ যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ছিলো- তা দেওয়া হয়নি বরং অপরিচিত জায়গায় নিয়ে তাদের ওপর এক ধরণের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব দেখাচ্ছে বেশ কয়েকটি এজেন্সি।

পাঁচ তারকা মানের হোটেলে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সৌদি আরবে রাখা হয়েছে নিম্নমানের ঘরে। ছোট্ট একটি ঘরে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে ৬ জনকে। পবিত্র কাবা শরিফের কাছাকাছি বাড়ি ভাড়ার কথা বলে রাখা হয়েছে ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে। পরিবহন সুবিধার কথা বলে সেখানে নেবার পর বলা হয়েছে, যে যার দায়িত্বে মক্কায় কাবা ঘরে যেতে হবে।

এভাবে এজেন্সিদের লাঞ্ছনা আর প্রতারণা শিকার হাজিরা কাঁদছেন মক্কার অলিতে-গলিতে।

আলাদা হজ গাইড রাখার কথা থাকলেও পুরনো হাজিদের ‘গাইড’ বানিয়ে ব্যবসা করেছে বিভিন্ন এজেন্সি। গাইডের অভাবে অপরিচিত জায়গায় হাজিদের পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

৫ ওয়াক্ত নামাজ পবিত্র মসজিদে হারামে জামাতে নিয়মিত নামাজ আদায়ের সুব্যবস্থাসহ নানা সুবিধার কথা বলে, মোটা অংকের অর্থ নিয়ে এজেন্সিদের অনেকেই পাল্টে ফেলেছেন নিজেদের অঙ্গীকার।

কথা হয়, ঢাকার সেলিম আহমেদের সঙ্গে। দু:খ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি জানান, ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ইফাজ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস সার্ভিসের মাধ্যমে মক্কায় আসেন।

এই এজেন্সির মকতব নম্বর ১৩৭। মোনাজ্জেম নম্বর ৯২১৬। কথা ছিলো- তাদের রাখা হবে মক্কার হিলটন হোটেলে। সেখানে না নিয়ে পবিত্র কাবাঘর থেকে বেশ দূরে বাতা কোরাইশ নামের একটি বাড়িতে রাখা হয়।

সেলিম বলেন, ঢাকাতেই পরিচয় পত্র পেয়ে তিনি দেখেন, প্রতি ৩০ জন হাজীর বিপরীতে ‘গাইড’ হিসেবে তাকে আনা হয়েছে।

মদিনার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে একই অভিযোগ করে সেলিম জানান, সেখানেও মসজিদ নববী থেকে বেশ দূরে বাঙালীপাড়ায় তাদের রাখা হয়েছে। এসব অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ করলে সঙ্গে নিয়ে আসা মিরপুর ৬ এলাকার ওয়ার্ড কমিশনার রজবকে দিয়ে হাজীদের ভয়ভীতি দেখানো হয়।

সেলিম জানান, এ অব্যবস্থাপনা সহ্য করতে না পেরে আমি জেদ্দায় এক বন্ধুর কাছে চলে যাই। নির্ধারিত সময়ের আগেই টিকিট কেটে দেশে ফেরার চেষ্টা করছি।

এ ব্যাপারে একাধিক হজ এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের প্রতিনিধিরা হিসেব কষে জানান, ইফাজ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস সার্ভিস ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে যে সেবা দিয়েছেন তাতে বড়জোড় ৩ লাখ টাকা নেওয়া হলেও হাজী প্রতি লাভ থাকবে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা।

সেলিম আহমেদ জানান, তিনি হজ মিশনে অভিযোগ করবেন বলে জানালে তাকে দেশে ফিরে অবশিষ্ট টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে এজেন্সি।

দুই ভাই ও স্ত্রীকে নিয়ে হজ করতে এসে অভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু সালেহ। ঢাকার মিনার ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরসের মাধ্যমে মক্কায় এসে এমন প্রতারণার শিকার হয়ে ভেঙে পড়েছেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানটির মক্তবও ১৩৭।

এই দলে আসা ঢাকার মোস্তফা ও আফজাল নামের দুই হাজী জানান, তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও কোনো প্রতিকার তারা পাননি।

তাদের অভিযোগ, হজ মিশনে গিয়েই দেখি হাবের অফিস! সরকারের মধ্যেই হাব ঢুকে আছে। কার কাছে অভিযোগ করবো?

মোস্তফা জানান, তাদের অভিযোগ নিয়ে শুনানীর কথা বলা হয়েছে। তার আগেই তাদের বলা হয়েছে, এসব কষ্ট একটু-আধটু সহ্য করতে হয়। এখন মীমাংসার জন্যে তাদের চাপ দেওয়া হচ্ছে।

মক্বায় এভাবে হজযাত্রীদের সঙ্গে বঞ্চনা ও প্রতারণা করা হলেও যেন দেখার কেউ নেই। এখানকার একটি সূত্র বলেছে, হাজী সাহেবদের অভিযোগ নেবার কথা বলে প্রথমে হজ মিশনে নিয়ে এক ধরনের আপোস-মীমাংসার আয়োজন করা হয়।

আর এ কাজে হাব নিজেই সেখানে অফিস খুলে লোকজন রেখেছে।

তাহলে প্রতিকার কি!

হাজীদের সচেতন হতে হবে। তাদের প্রথমে স্থানীয় পুলিশের কাছে যেতে হবে। পথে পথে ঘুরছে সৌদির হজ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। তাদের কাছে অভিযোগ দিয়ে পরে যেতে হবে মিশনে।

এ ছাড়া প্রতারক এজেন্সিকে শায়েস্তা করার কোনো পথ নেই বলেও জানান সূত্রটি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর