একদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস, অপরদিকে বানের ভাসছে পানিতে প্রিয় মাতৃভূমির অনেক এলাকা। এরই মাঝে ত্যাগ ও ভালোবাসার বার্তা নিয়ে হাজির মহিমান্বিত ঈদুল আজহা। কঠিন ক্রান্তিকালে আনন্দ ও খুশির এ মহোৎসবে আমাদের পারস্পরিক সহানুভূতিশীল হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
সমাজের বিত্তবানরা বন্যাদুর্গতসহ সকল প্রকার অসহায়দের প্রতি কল্যাণের হাত প্রসারিত করা এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি সবাইকে নিজ নিজ সাধ্যের আলোকে পারস্পরিক দয়াপরবশ হতে হবে। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, নিঃস্ব, দুর্বল, অসহায়, অনাথদের প্রতি এগিয়ে আসতে হবে। তাদের কল্যাণার্থে উদ্যোগী হতে হবে এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
ইসলাম মানবতার ধর্ম। দুর্বল, দুঃখীজনের প্রতি সদয় হওয়া এবং তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ, কোমল আচরণ ইসলামের অবিচ্ছেদ্য সংস্কৃতি ও আদর্শ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর আত্মীয়-স্বজনকে দাও তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপচয় করো না।’ -সূরা ইসরা: ২৬
আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেন, ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদে রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের অধিকার।’ -সূরা জারিয়াত: ১৯
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে।’ -আদাবুল মুফরাদ
সময় এখন পারস্পরিক কল্যাণকামীতা, সহানুভূতি ও সহযোগিতার। করোনা ও বন্যাকালের ঈদে দুঃখীদের মুখে একমুঠো অন্ন তুলে দেওয়া আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। প্রয়োজন, তাদের মুখে এক টুকরো হাসি ফুটানো। পারবো তো- পারস্পরিক সুখ-দুঃখ, হাসি-খুশি ভাগাভাগি করতে?
সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, জনৈক ব্যক্তি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, ‘ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, কারও মুখে আহার তুলে দেওয়া।’ -সহিহ বোখারি
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হবে, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব কষ্ট বা বিপদ দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার কষ্ট বা বিপদ দূর করে দেবেন।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
আবার কঠিন হৃদয়ের লোকদের সতর্ক করে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
করোনা ও বন্যার এ কঠিন দুঃসময় কাটিয়ে ওঠতে আমাদের জন্য অধিক ফলপ্রসূ পন্থা হচ্ছে, নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাহায্য, সহযোগিতা, সম্প্রীতি ও দান-সদকার প্রতি আরও মনোযোগী হওয়া।
আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে তাদের প্রতিদান তাদের রব এর নিকট রয়েছে। আর তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ -সূরা বাকারা: ২৭৪
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করে আল্লাহও ততক্ষণ তার সাহায্য-সহযোগিতা করেন।’ -সহিহ মুসলিম
অন্যান্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, দান-সদকা বিপদ-বিপর্যয় দূর করে, জীবনে সমৃদ্ধি এনে দেয়, পাপমোচন করে, আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচিয়ে রাখে, অসুখ-বিসুখ থেকে সুস্থতা পাওয়া যায়।
তাই আসুন, আমরা একটু সচেষ্ট হই। প্রেম-মমতা ও মহানুভবতা দিয়ে দুঃখ-কষ্টকে জয় করি। আমাদের উদ্যোগ, প্রচেষ্টা হয়তো অসহায়-ক্লিষ্টদের দুঃখ যন্ত্রণার অবসান করতে পারবে না; তবে আমাদের এ প্রেম, এ মানবতাবোধ, একটিবারের জন্যে হলেও, তাদের বিষন্ন মুখে ফুটিয়ে তুলবে প্রাণখোলা হাসি। বিভিন্ন দাতব্য ও সামাজিক সংস্থা কর্তপক্ষের প্রতি একান্তভাবে কামনা ও প্রত্যাশা- তুলনামূলক দরিদ্র, অবহেলিত, আর্তপীড়িত ও বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে অধিকহারে পশু কোরবানি ও গোশত সরবরাহের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
মুহাম্মদ ইমদাদুল হক ফয়েজী: সহকারী শিক্ষক, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, সিলেট।