রাতের কলকাতার নাখোদা মসজিদ

, কলকাতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম | 2023-10-06 12:13:16

সেন্ট্রাল এভিনিউ (কলকাতা) থেকে: 'যাহা চীৎপুর, তাহাই বড়বাজার' বললেন বাসের সহযাত্রী মোবারক আলি মোল্লা। হাওড়াগামী বাস ডানে মোড় নিয়ে চলে গেলো। বাস থেকে নেমে ঢুকে পড়ি আদি কলকাতার ব্যবসা-বাণিজ্যের হৃৎপিণ্ড বড়বাজারে।

দমদম থেকে ভিআইপি রোড ধরে উল্টোডাঙ্গা, গৌরিবাড়ি, মানিকতলা, হাতিবাজার-শ্যামবাজারের খান্না মোড় হয়ে গিরিশ পার্ক মোড়ে সেন্ট্রাল এভিনিউয়ে এসেছি। এখানে সড়কটির অফিসিয়াল নাম চিত্তরঞ্জন এভিনিউ হলেও লোকে বলে সেন্ট্রাল, যা এসে মিশেছে মহাত্মা গান্ধি রেডে।

এখানে চীৎপুর, বড়বাজার অবস্থিত। পাশেই মেছুয়াবাজার, ফলপট্টি ইত্যাদি পাইকারি হাট-বাজার। অনতিদূরে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, মার্বেল প্যালেস, নাট্যশিল্পী গিরিশ ঘোষের স্মৃতিবিজড়িত উত্তর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী লোকালয়গুলো।

বড়বাজারে নরক গুলজার পরিস্থিতি। শুধু কলকাতা নয়, পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতের মালপত্রের সাপ্লাই চেইন তৈরি হয়েছে বড়বাজারকে কেন্দ্র করে। প্রাচীন সব দোকান, গদি। কোনোটি শতবর্ষ প্রাচীন। ঢালা বিছানা পেতে কারবার সামলাচ্ছেন ব্যস্ত লোকজন। দোকানের সামনে ট্রাক থেকে লোড-আনলোড হচ্ছে মালামাল।

বড়বাজারের প্রাণকেন্দ্রে নাখোদা মসজিদ। কলকাতার সবচেয়ে বড় এই মসজিদে ১৯০৫ সালে হিন্দু-মুসলমান ঐক্য সাধিত হয়েছিল। পাশের জোড়াসাঁকো থেকে রবীন্দ্রনাথ এসেছিলেন দাঙ্গা কবলিত কলকাতায় রাখীবন্ধনে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষকে একত্রিত করার জন্য।

কী পাওয়া যায় না কলকাতার বড়বাজারে, সেটাই এক বড় প্রশ্ন। নাখোদা মসজিদের সামনে আলো ঝলমলে পরিস্থিতি, দেখে মনে হয় রমজান বা ঈদ। বাহারি খাবারের দোকান, মানি এক্সচেঞ্জ, কাপড়, ওষুধ, প্রসাধনী, ছুরি, কাচি, দা, ব্যাগ, শুকনো ফল পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কলকাতার লোকজনও অধিক পরিমাণে বাজার করার প্রয়োজনে বড়বাজার চলে আসেন। কম দামে বেশি করে মালপত্র কিনে বাসে, ট্রামে বা মেট্রোতে বাড়ি ফেরেন। উত্তর বা দক্ষিণ কলকাতা আসা-যাওয়ার সব যোগাযোগ মাধ্যম বড়বাজারের আশেপাশে রয়েছে।

বড়বাজার নাখোদা মসজিদের পাশে শতবর্ষ প্রাচীন রয়েল ইন্ডিয়া হোটেলে মুখরোচক মুঘলাই খেয়ে কয়েক ঘণ্টা হেঁটেও খেই পাওয়া সম্ভব হলো না। পাশে আরও কয়েকটি মসজিদ ও একটি বিশাল বড় অট্টালিকায় সরাইখানা পাওয়া গেলো। হয়ত প্রাচীন আমলে উত্তর ও পশ্চিম ভারত থেকে আগত কারবারিগণ সরাইখানায় থাকতেন। তখন আজকের মতো হোটেল, রেস্তোরাঁর যুগ আসেনি।

বড়বাজারের সব ভবনই ঔপনিবেশিক আমলের। ইট, দরজায় লেগে আছে সুপ্রাচীন ছাপ। আদি কলকাতা এখানে যেন এখনো ব্রিটিশ যুগের আদলে থমকে আছে। আধুনিক গাড়ির পাশে চলছে ট্রাম, টানা রিকশা।

বড়বাজার থেকে কাঠপট্টি, কলুটোলা, জাকারিয়া স্ট্রিট হয়ে আসতে আসতে মনে হলো সর্বভারতীয় জাতি ও ভাষার মিশ্রিত ঐক্যতান বইছে মধ্য কলকাতার এই অঞ্চলগুলোতে। উর্দু, হিন্দি, মারোয়ারি, গুজরাতি ভাষার প্রাবল্যজনিত কারণে বাংলা ভাষা এখানে সংখ্যালঘু। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও বাঙালি স্বল্পতম।

কোলাহল ও ভিড়ের বড়বাজার পেছনে ফেলে বর্ধণ স্ট্রিটে এসে গঙ্গার হাওয়া পাওয়া গেলো। সামনেই স্ট্যান্ড রোড বাবুঘাট, হাইকোর্ট ঘেঁষে গঙ্গার তীর ধরে চলে গেলে হাওড়া ব্রিজের কলকাতা প্রান্তে। কলকাতার প্রাণ গঙ্গার জলভেজা বাতাসে স্পর্শে কায়িক শ্রম লাঘব হয়ে শরীরে মুগ্ধতার একটি আমেজ বয়ে গেলো। অনেকক্ষণ পর গঙ্গার ধারে পাওয়া শীতল বাতাস মনে করিয়ে দিল কলকাতায় গরম পড়ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর