প্রথমবার ভারতে ভোট দেবেন সাবেক ছিটমহলবাসী

, কলকাতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 04:14:13

পৃথিবীর ইতিহাসে এক জ্বলন্ত সমস্যা ছিল ছিটমহল। যুগযুগ ধরে চলে আসতে থাকা এই সমস্যার সমাধান হয়েছিল, ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই, মধ্যরাতে। ঐ দিনে বাংলাদেশ সীমানায় ভারতীয় ছিটমহলে থেকে এসেছিল ৯২২ জন। যদিও সে সময় ভাবা হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে বিশাল আকারে জনগণ আসতে থাকবে। তা কিন্তু হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ প্রশাসনে দেশটি ছেড়ে বাকিরা আসেননি। তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছিলেন সেখানেই থেকে যেতে।

যা দেখে তৎকালীন গোটা ভারতের মিডিয়া যথেষ্ট অবাক হয়েছিল। কারণ তারা ভেবেছিল বিশাল জমায়েতে শরণার্থীর মতো আসা দেখাতে পেরে তাদের টিআরপি বাড়বে। কিন্তু তাদের চিন্তায় পানি ঢেলে দিয়েছিল তৎকালীন বাংলাদেশের দক্ষ প্রশাসন। তবে এরকম একটা অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হওয়াটা খুবই জরুরি ছিল। আগামী দিনে আরও কিছু জ্বলন্ত সমস্যা আছে তাও অচিরে মিটে যাবে বলে, আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান।

সম্প্রতি কলকাতার এক সেমিনারে তিনি বলেছিলেন, 'ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে নদী প্রবহমান আছে। ভারত সেটা দেখে যাতে পানি বাধাপ্রাপ্ত না হয় এবং পাকিস্তানের গোটা ইরিগেশন সিস্টেম এই নদীর ওপর ভিত্তি করেই চলে। বাংলাদেশের সঙ্গে এরকম চুক্তি কিন্তু আজও হয়নি। কিন্তু তিস্তাও একই রকম বিষয়। বিশ্বে ভারত অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে উঠে আসছে। প্রতিটি শক্তিশালী দেশ অকপটে স্বীকার করে নেয় সমস্যাগুলো এবং সমাধানের পথ খোঁজে। ভারতও একদিন তা করবে। সাবেক ছিটমহলের ন্যায়, পানি বণ্টনের মতো জ্বলন্ত সমস্যাও মিটবে।'

তা তো সময় বলবে। তবে কোচবিহারে আগামীকাল (১১ এপ্রিল) নির্বাচনের আগে কেমন আছেন সাবেক ছিটবাসী তথা অধুনা পশ্চিমবঙ্গের ওই অঞ্চলের মানুষজন? কথা বলেছিলাম, অধ্যাপক দেবব্রত চাকী (সিনিয়র ফেলো মিনিস্ট্রি অফ কালচার গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া)-র সঙ্গে। যিনি দীর্ঘ সময় ধরে ইস্যুটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

দেবব্রতবাবু জানান, এমনি যারা এখানে আছে, এজ ইউজুয়াল ভালই আছেন। অনেক উন্নতি হয়েছে এখানে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা যা পাওয়ার তা তারা পাচ্ছেন। কিন্তু ৯২২ জন বাংলাদেশ সীমানার ভারতীয় ছিটমহল থেকে নতুন পরিবেশে এল তিনটে ক্যাম্পে, (মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি, দিনহাটা) তাদের পরিবার প্রতি যদি একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেত তাহলে ভালো হতো। প্রতি মাসে না হলেও অস্থায়ীভাবে যদি কিছু করা যেত।

এছাড়া বিভিন্ন সময়ে যে প্রকৃত ভারতবাসী কোচবিহার রাজার আমলের থেকে ৫০০ পরিবার বসবাস করছিল যাদের প্রত্যেকের মহারাজার আমলের দলিল দস্তাবেজ, খাজনা রশিদ সবই আছে। এই মানুষগুলো যখন উদ্বাস্তু হয়ে এল, ছিটমহল বিনিময়ের পক্ষে এই মানুষগুলোকেও যুক্ত করা দরকার ছিল এবং এই মানুষগুলোর কথা অন্তত শোনা দরকার ছিল। কিন্তু শোনা হলো না।

আর সমস্যা বলতে, ছিটমহল হস্তান্তরের সময় ৯২২ জনের মধ্যে ৪০টা পরিবারের কথা বাংলাদেশ সরকারের ভাবা দরকার। যারা এখনও ফেলে আসা জমির টাকাটা পাইনি। জমিগুলোর কোনো ফয়সালা হয়নি বা কোন কমপেনসেশন পাইনি তারা। জমিগুলো এখন সরকারের তত্ত্বাবধায়নে আছে। এটাও একটা সমস্যা হয়ে আছে। এসব বাদ দিলে এখন তারা মেইনস্ট্রিমের সাথে যুক্ত হয়েছে। ভারতীয় নাগরিক যে রকম সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা, তারাও সেটা পাচ্ছেন।

এখন তো ভারতে নির্বাচন। কংগ্রেস যে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে তাতে তো বলা হয়েছে, যে বছরে গরিব পরিবার মাথাপিছু ৭২ হাজার রুপি বছরে পাবে। অর্থাৎ মাসে ৬০০০ পেলে তো ভালোই হবে।

কংগ্রেস এবার ক্ষমতায় আসছে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দেবব্রতবাবু।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দুজনেই নির্বাচনী ভাষণ দিয়ে গেলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'এই অঞ্চলে ১১০০ কোটি রুপি ব্যয় এবং তাদের থাকার জমি দিয়েছে। অর্থাৎ উন্নতি কতটা হয়েছে?'

তিনি জানান, 'দেখুন রাজনীতির ভাষণ একরকম আর কাজ অন্যরকম। অর্থায়ন এবং পালন, এসবতো কেন্দ্রীয় সরকারের। তবে হ্যাঁ ভারতের যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে, বাস্তবায়ন করে রাজ্য সরকার। সে ক্ষেত্রে অঞ্চলগুলোর যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ডেভেলপমেন্ট বলতে ধরুন, ওই সময়ের রাস্তাঘাট, বিশুদ্ধ পানি, সোলার বিদ্যুৎ, কমিউনিটি হল, প্রাইমারি স্কুল, চিকিৎসা ব্যবস্থা, ইরিগেশনের ব্যবস্থা, চাষের পানি মত অনেক কাজ হয়েছে। আর নির্বাচন এলে এসব কথা হবেই। এখন দেখার কে আসছেন কেন্দ্রে ক্ষমতায়।'

আমার বক্তব্য হলো, 'সমস্যার মধ্যেও কমবেশি সবাই ভালো আছে। আগামীতে তাদের আরও উন্নতি হবে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সে সময় বাংলাদেশ থেকে আসা ৯২২ জন সহ ভারতীয় ছিটে থেকে গেছিলেন মোট পনের হাজার মানুষ এই বছর প্রথম নির্বাচনে অংশ নেবেন। এর আগের ভোটগুলিতে নথিপত্র জনিত সমস্যা থাকায় তারা ভোট দিতে পারেননি। প্রথম ভোটদান নিয়ে এলাকাবাসীদের মধ্যে উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর