শাড়িতেও রঙ লেগেছে ভোটের!

, কলকাতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কলকাতা, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 03:58:41

ঈদ, দুর্গাপূজা এবং বড়দিনের মতো উৎসবগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল কলকাতার ফ্যাশন। কিন্তু এবার নতুন ট্রেন্ড যুক্ত হয়েছে, ভোট উৎসব। আর উৎসব থাকলেই পরিবর্তন হয় ফ্যাশনের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাওয়া ফ্যাশনের হাত ধরেই কলকাতার বাজারে আগমন ভোটের শাড়ি! তাই ভোট নামক উৎসবে নতুন মাত্রা দিতে কলকাতার বাঙালির শপিংয়ের প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেটে চোখে পড়বে এসব শাড়ি।

সময়টা ছিল ২০১১ সাল, দীর্ঘ ৩৪ বছরের বাম শাসনের বিরুদ্ধে তৎকালীন মমতার স্লোগান ছিল ‘বদলা নয়, বদল চাই- পরিবর্তন চাই’। সে সময় তৃণমূল কংগ্রেসের নারী কর্মী-সমর্থকদের তাদের প্রতীক, জোড়াফুল ছাপানো শাড়ি দিত বিনা মূল্যে। ক্ষমতায় আসে মমতা। তারপর তৃণমূলের কোনো স্লোগান সেভাবে চোখ না টানলেও, ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ও বামদের স্লোগান কিন্তু চোখ টানছে ভোটারদের। বিজেপির ক্যপশান, ‘পরিবর্তন নয়, পরিত্রাণ চাই’। আর বামদের স্লোগান ‘ফেরাতে হাল, ফিরুক লাল’। সে যাই হোক স্লোগানের পরিবর্তন এলেও তৎকালীন মমতার ক্ষমতায় আসার সময় তৃণমূলী শাড়ির ফ্যাশন দেখা গিয়েছিল কলকাতায়। কিন্তু এর আগে দোকানে বিক্রি হতে দেখা যায়নি।

এবার যা দেখা গেল নিউমার্কেট লাগোয়, হগ মার্কেটের মনসা শাড়ি স্টলে। দোকানের শোকেস থেকে একেবারে ভেতরে থরেথরে সাজানো তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসের প্রতীকী শাড়ি। বাদ নেই বামরাও। বিক্রেতা বিক্রম বার্তা২৪.কমকে জানালেন, ‘সারা বছর তো সব ধরনের শাড়ি বিক্রি করি, এবারই প্রথম নিয়ে এলাম ভোটের শাড়ি। আর এটা যে হটকেক হবে তা জানা ছিল না।’

তিনি আরও বলেন, ‘তাই সব তুলে আমজনতার মতন ভোটেই মেতেছি। তবে অন্য শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না তা নয়, ক্রেতা চাইলে বিক্রি করছি। তবে এখনো বাংলাদেশি ঈদ শপিং জমে ওঠেনি আর কলকাতায় কোনো উৎসব নেই, তাই ভোট উৎসবেই মেতেছি। ভোটের বাজারে শাড়ির চাহিদাও ভাল।’

বিক্রম জানান, তৃণমূলের প্রতীক জোড়াফুল, তাই শাড়ির গায়ে প্রতীক ছাপা আর আঁচলে মুখ্যমন্ত্রী। এখানে এই শাড়ির চাহিদা বেশি। তবে রাজ্যে ভোটের বাজারে ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি। ফলে কম নেই মোদীর চাহিদা। কাঁধ থেকে আঁচল অবধি বিরাজ করছেন মোদিজি। পাশাপাশি কংগ্রের হাল ইন্দিরামুখী প্রিয়াঙ্কা ধরতেই কংগ্রেসী শাড়িতেও আছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। আর বাম! তাও আছে, তবে দলটি চিরকালই প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে ব্যক্তিকে গুরুত্ব দেয়নি। সে জ্যোতিবাবু হোক বা বুদ্ধবাবু। ফলে শাড়ির শরীর জুড়ে প্রতীক কাস্তে-হাতুড়ি আঁকা। রাজ্যে বামদের পতনের মতো শাড়ির সেলও একটু ডাউনে আছে।

কারা তৈরি করেন এই ভোটের শাড়ি?

পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুর থেকে আসছে শাড়ি। সেখানকার তাঁতিরাই তৈরি করেছেন। তবে তাঁতের বুননে নয়, এসব প্রতীক হচ্ছে স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ে। ভোটের বাজার একদমই ছোট মৌসুম এবং হাতে সময় বেশি নেই। তাই ঝুঁকি নিয়ে বেশি দামের তাঁতের শাড়ি বুনতে চাইছেন না শাড়ি ব্যবসায়ীরা। তাই স্কিন প্রিন্টিংয়েই তুলে ধরছে ভোট শিল্প। এবার ট্রেন্ডটা শুধু বুঝে নিতে চাইছে। তবে রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকদের কথা মাথায় রেখে অপেক্ষাকৃত দাম কম রাখা হয়েছে। সাড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে এসব ভোটের শাড়ি।

আবার তাঁতিদের কথায়, মূলত শান্তিপুরে চৈত্র-ফাল্গুন মাস থেকেই ঈদ এবং দুর্গাপূজার শাড়ি তৈরি হয়। এবার ভোট উৎসবে বাড়তি একটা বাজার পাওয়া গেছে। দোকানের পাশাপাশি নেতাদের থেকেও বরাত আসছে, বরাত আসছে কলকাতা, শিলিগুড়িসহ অন্যান্য এলাকার পাইকারদের থেকেও। বাজার পাচ্ছে কলকাতার নিউ মার্কেট থেকেও।

সোমবার (৬ এপ্রিল) চলছে পঞ্চম দফার লোকসভা ভোট। এখনো রাজ্যে আরও দু’দফা ভোট বাকি। শুধু চাহিদা নয়, বলতে পারেন বড়তি বোনাস। এমনই জানালেন মনসা শাড়ির বিক্রেতা বিক্রম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর