তৃতীয় বিয়ের ইচ্ছেই কাল হল ভারতের ধোসার স্রষ্টার

, কলকাতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কলকাতা | 2023-08-30 03:24:00

একেবারে গরিব পরিবার বলতে যা বোঝায়, সেই পরিবারের ছেলে ছিলেন ধোসার স্রষ্টা অর্থাৎ পি রাজা গোপাল। নিবাসের জন্ম তামিলনাড়ুর একটি অখ্যাত গ্রামে। বাবা ছিলেন পেঁয়াজের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এমন একটা সময় গিয়েছে রাজা গোপালের জীবনে, যেখানে অন্যের ছেঁড়া জামাকাপড়ই ছিল মহার্ঘ বস্তুর সমান। সেই রাজা গোপালই একদিন চমকে দিয়েছিলেন খাদ্য রসিকদের। বিশ্বজুড়ে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল ধোসা কিং বা ধোসা মাস্টার নামে। নিজের গ্রামেই গড়ে তুলেছিলেন সারাভানা ভবন। যে ভবনে খাদ্যের সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজাগোপাল। তাঁর ধোসা সম্রাট হয়ে ওঠার কাহিনীও অনেকটা রূপকথার মতোই।

সময়টা ১৯৮১ সাল। আজকের চেন্নাই অর্থাৎ তৎকালীন মাদ্রাসে একটি ছোট্ট মুদির দোকান খুলে বসেন রাজাগোপাল। কিছুদিন পর দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়ে মুদির দোকান পরিবর্তন করে খুলে ফেললেন একটি রেস্তরাঁ। সেখানে দক্ষিণ ভারতীয় খাবার তৈরিতে রাজা গোপালের চলতো নিত্যনতুন পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ।

এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে একে একে তাঁর ফর্মুলাতেই তৈরি হতে থাকল ধোসা, ইডলি ও বড়া। স্বাদে অতুলনীয় এবং দাম কম অর্থাৎ গরিব মানুষের নাগালের মধ্যে। অল্প কয়েকদিনের জনপ্রিয় হয়ে উঠল রাজাগোপালের সেই রেস্তরাঁ। তাঁর হাত ধরে দক্ষিণ ভারতীয় খাদ্যাভাসে ঢুকে পড়ল ইডলি, ধোসা। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি রাজা গোপালকে। এরপরই তিনি ঢুকে পড়লেন চেন রেস্তরাঁর ব্যবসায়। সমগ্র ভারত ছাড়িয়ে পড়ল তার রেস্তরাঁ সাম্রাজ্যের গল্প। সবমিলিয়ে এই মুহূর্তে ৮০টি রেস্তরাঁ ছড়িয়ে রয়েছে দেশে ও বিদেশে।

এরপরই চেন্নাইয়ে রাজাগোপাল গড়ে তুললেন ‘সারাভানা ভবন’। গরিব, মধ্যবিত্তের কাছে সারাভানা ছিল অত্যন্ত পছন্দের। তাঁদের আতিথেয়তায় কোনো কার্পণ্য করতেন না রাজা গোপাল। কর্মীদের সঙ্গেও তাঁর ছিল অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক। তাঁদের জীবন স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখার সবরকম চেষ্টা চালাতেন তিনি। কর্মীরা তাঁকে ডাকতেন আন্নাচি (বড়দাদা) বলে।

সেই রাজাগোপাল চরম বিপাকে পড়লেন তৃতীয় বিয়ে করার তীব্র বাসনায়। তাঁরই রেস্তরাঁর এক নারীকর্মীকে বিয়ে করতে চাইলেন তিনি। সেই নারী ছিলেন আবার বিবাহিত। ওই নারীকে অন্ধভাবে ভালোবাসতেন রাজা গোপাল। কিন্তু,  স্বামী-সংসার ছেড়ে রাজা গোপালকে বিয়ে করতে চাননি। সবসময় এড়িয়ে চলতেন। সেটা মানতে পারতেন না ধোসা কিং। ২০০০ সালে ওই নারীর সান্নিধ্য পেতে রাজা গোপাল উদভ্রান্ত হয়েছিলেন। ওই পরিবারকে ভীতি প্রদর্শন করা শুরু করলেন। তাতেও কাজ না হওয়ায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি নিয়ে ফেলেন। ২০০১ সালে ওই নারীকে কাছে পেতে তার স্বামীকে পি রাজাগোপালই খুন করিয়েছিলেন। খুনের মামলায় ২০০৪ সালে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। ১০ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। পরে রাজাগোপালের যাবজ্জীবনের সাজা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল নিহতের পরিবার। আবেদন গ্রাহ্য করেন শীর্ষ আদালত। তাকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন আদালত। আর চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে আদালতে রাজা গোপালকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।

গোটা জীবনে একটাই মাত্র ভুল সিদ্ধান্ত। আর তাতেই বৈভবের শিখর থেকে সোজা জেলের কুঠুরিতে। অদ্ভুত পতন ভারতের ধোসা কিং পি রাজা গোপালের। ফকির থেকে রাজা আবার রাজা থেকে ফকির। পিছনে পড়ে রইল চেন রেস্তরাঁর সাম্রাজ্যপাট। বাকি জীবনটা জেলেই কাটাতে হবে ৭১ বছরের পি রাজা গোপালকে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর