তাহলে কেন কাশ্মীর? প্রশ্ন বিরোধীদের

, কলকাতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কলকাতা | 2023-08-30 11:26:14

ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভিন্ন রাজ্যের কেউ কাশ্মীরে জমি কিনতে পারবে না। তৎকালীন এই আইন তৈরি হয়েছিল কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দাবিতে। ১৯৩৫ সালে রাজা হরি সিং, প্রজাদের অর্থাৎ কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দাবিতেই এই আইন তৈরি করেন।

পরে ভারত সরকার আইনের স্বীকৃতিও দেয়। সে সময় কাশ্মীরের রাজা হরি সিং পাকিস্তানের সঙ্গে যেতে চেয়েছিলেন স্বাধীন রাজ্য থাকতে পারবেন বলে। কিন্তু সম্ভব না হওয়ায় এবং ভারত সেই সময় বিষয়টায় মান্যতা দেয় বলেই শেষ অবধি কাশ্মীর থাকে ভারতের অধীনে। যা সেই সময় বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীরও সায় ছিল। তবে আজ সব ইতিহাস। কারণ বর্তমানে বিশেষ মর্যাদা থেকে বঞ্চিত কাশ্মীর।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ'র কথা অনুযায়ী ভিন রাজ্যের ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিরা জমি কিনে, শিল্প গড়ে তুললে তাতে কাশ্মীর সহ উন্নতি হবে ভারতের। তবে কাশ্মীরেই কি জমি কেনা যায় না? তা তো নয় নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, অরুণাচল প্রদেশ, সিকিমসহ ভারতের ১১টি রাজ্যে রাজ্যের বাসিন্দা ছাড়া বাইরের কেউ জমি কিনতে পারেন না। এমনকি পশ্চিমবঙ্গসহ সারা দেশেই আদিবাসীদের জমি কেনা যায় না।

যেমন, মহারাষ্ট্র ও গুজরাট, রাজ্য দুটিতে একটি বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। বিদর্ভ, মারাঠাওয়াড়া, কচ্চ অঞ্চলে উন্নয়ন পর্ষদ তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া আছে এই দুই রাজ্যের রাজ্যপালের হাতে, অর্থাৎ এখানে চাইলেও বাইরের কেউ জমি কিনতে পারবে না।

নাগাল্যান্ডে, নাগাদের ধর্মীয় এবং সামাজিক বিষয়ের ওপর সংসদে তৈরি করা কোনো আইন প্রযোজ্য হবে না। একইভাবে আসামেও স্বায়ত্তশাসন এবং তফসিলি উপজাতিদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি চাইলে প্রদত্ত সাংবিধানিক ক্ষমতা এবং উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার বিধায়কদের নিয়ে আসাম বিধানসভায় তৈরি হওয়া কোনো কমিটির কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারেন। এছাড়া বাইরের কেউ নয়।

মনিপুর ও অন্ধ্রপ্রদেশ, এই দুই রাজ্যের মানুষের সুযোগ সুবিধা এবং রক্ষাকবচ তৈরির ক্ষেত্রে একই ধারা প্রযুক্ত হয়। কর্মসংস্থান এবং শিক্ষার দিক থেকে যাতে রাজ্যের বাসিন্দারা বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতেই এই ধারা।

সিকিম, ১৯৭৫ সালে এই ধারা সংযুক্ত হয়। একইভাবে এ ধারার মতোই মিজোরামে ধর্মীয় এবং সামাজিক বিষয়ের ওপর সংসদে তৈরি করা কোনো আইন মিজোরামে প্রযোজ্য হবে না। একই ভাবে অরুণাচল প্রদেশ, রাজ্যপালের হাতে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। যে ক্ষমতাবলে রাজ্যপাল আইন শৃঙ্খলা ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে খারিজ করে নতুন নির্দেশনামা জারি করতে পারেন।

এর সঙ্গে হায়দ্রাবাদ ও কর্ণাটক রাজ্যের পিছিয়ে পড়া জেলাকে সংবিধান স্বীকৃত এই বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে ভারতের বেশকিছু উপজাতি এবং নিচু জাতিদের অঞ্চল। সেখানেও সংবিধান স্বীকৃতভাবে বেশকিছু বিশেষ অধিকার বা ক্ষমতা দেওয়া আছে। অন্ধ্র প্রদেশ, ছত্তিসগঢ়, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, রাজস্থান এবং তেলেঙ্গানায় রয়েছে পঞ্চম তফসিলভুক্ত এলাকা।

আসলে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে থেকে অঙ্গ রাজ্যগুলোকে অংশত স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বা বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার অর্থ হল- প্রশাসনিক কাজকর্মে সুবিধার পাশাপাশি জাতিসত্তার আশা ও আকাঙ্ক্ষার দিকে যেন প্রয়োজনীয় নজর দেওয়া যায়, তা নিশ্চিত করা।

তাহলে কেন কাশ্মীর? শুধুই কি সাম্প্রদায়িক বিষয়? নাকি প্রতিবেশী দেশটার নাম পাকিস্তান? নাকি ভবিষ্যতে অন্য কোনো ইঙ্গিত আছে মোদি সরকারের? তাতো সময় বলবে। কিন্তু এই নিয়ে মঙ্গলবারও সংসদ ভবন সহ উত্তাল ভারত। শাসক শ্রেণির যেমন চলছে বিজয় উৎসব, বিরোধীদের বিক্ষোভ!

এ সম্পর্কিত আরও খবর