কলকাতা থেকে কাশ্মীর

, কলকাতা

মাজেদুল নয়ন; স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-09-01 21:09:41

ঢাল লেক, কাশ্মীর থেকে: খুব ভোরে কলকাতা সুন্দর, শান্ত, আজ মেঘলা দিন। বুধবার ঈদুল আজহা। ছুটির দিন হওয়াতে আরো ঢিলেঢালা ভাব। তবে আমার উবার চালক কলকাতায় নতুন। ভাল করে চিনতে পারছিল না এয়ারপোর্টের রোড। একে ওকে জিজ্ঞাসা করেও বাইপাস সড়ক খুঁজে পেতে বেশ সময় লাগলো৷ আর বাইপাস পেলেও তার গাড়ি চালানোর স্লথ গতিতে মনে হচ্ছিল ফ্লাইট ধরতে পারি কিনা!

বকরির ঈদে কলকাতায় কিছু নির্দিষ্ট স্থানে কোরবানির পশু উৎসর্গ করা হয়। তাই ঢাকার মতো পথে ঘাটে পশু জবাইয়ের চিত্র চোখে পড়ে না। কলকাতার সড়কগুলো খুব পরিষ্কার বলা যাবে না, তবে এখানে চালকরা লেন না মানলেও ট্রাফিক আইনটা মেনে চলেন। আর সড়কগুলো কাঠামোগতভাবেও ভাল। কংক্রিটের সড়কও চোখে পড়ে।

ফ্লাইট ৭ টা ৫০ মিনিটে, আর আমি এয়ারপোর্ট পৌছালাম ৭ টায়৷ তবে সেল্ফ চেক-ইন করাতে বেশি ভয় থাকলো না। তিন বছর পর কলকাতায়, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু এয়ারপোর্টে। সত্যি প্রতি বছরে উন্নতি করছে এয়ারপোর্ট। দমদমের চেহারা বদলে গিয়েছে বেশ। বিশ্বের যে কোন উন্নত এয়ারপোর্টের সঙ্গে তুলনা করা যায়।

স্পাইস জেটের এসজি ১৩০ ফ্লাইট ২৫ মিনিট দেরিতে ছাড়ল৷ তবে যেহেতু এই ফ্লাইটই সরাসরি দিল্লী হয়ে শ্রীনগর যাবে কানেক্টিভিটির চিন্তা নেই। ২ ঘন্টা ৩০ মিনিটের ভ্রমণ কম নয়। দমদমে বিমান আকাশে উঠলে মেঘ। তবে মেঘের উপরে সূর্য হাসছিল। যত দিল্লীর কাছে যাচ্ছে বিমান, বাইরে সূর্যের আলো কেবিনকে আলোকিত করছিল। শরতের মেঘেরা যেন গোলাচ্ছুট খেলছে। মেঘের ওপরে মেঘের স্তর। নিচে তাকালে মনটা ভাল হয়ে যায়।

এটা বাজেট এয়ারলাইন্স। যারা আগে খাবারের অর্ডার দিয়েছেন, তাদেরকে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। আর যারা বুকিং দেয়নি তাদের কিনে খেতে হচ্ছে। আগের রাতের মাথা ব্যাথাটা একটু ছিল। একশ রুপি দিয়ে একটা কফি নিলাম। হেডফোনে জেমসের গান বাজছে। দেশে ঈদ পালন করছে সবাই। তবে এখানে ঈদের কোন ভাব নেই। ব্যস্ত অনেকেই ছুটি শেষে দিল্লী ফিরছেন।

দিল্লীতে যখন বিমান নামছে, কানে চাপ বাড়তে থাকে। জানালে দিকে তাকালে উচুঁ সব ভবন চোখে পড়ে। দিল্লীর আশপাশে খুব সবুজ নেই।

আগরতলা থেকে যখন ফ্লাইটে কলকাতা নামলাম, যাত্রীদের মধ্যে ব্যস্ততা ছিল না। যেটা এখানে আছে। রানওয়েতে না থামতেই যাত্রীরা দাঁড়িয়ে গেলো। ফ্লাইট অ্যাটেনডস জানালেন, শ্রীনগরের যাত্রীরা যেন না নামেন।

১৮৬ সিটের ৯০ ভাগ যাত্রীই নামলেন দিল্লী। আমার নয় সিরিয়ালের সামনে আট সিরিয়ালের ৬ টি সীট জুড়েই বাংলাদেশি পরিবার শ্রীনগরের যাত্রী। বোর্ডিং কার্ড চেক করার সময় পরিবারের ছেলেটি তার কার্ড পাচ্ছিল না। বাবার বকা শুরু হয়ে গেলো। হাবভাবে পোশাক আশাকে বোঝা যাচ্ছে পয়সাওয়ালা পরিবার। ফ্লাইটের ভেতর দামী খাবারের সবচেয়ে বেশি অর্ডার দিচ্ছিল তারা। অনেক খোঁজাখুঁজি চলছে, তবে কার্ড যেন কোথাও নেই। একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এদিকে কর্তৃপক্ষ বলছেন, বোর্ডিং কার্ড না থাকলে এখানে নেমে যেতে হবে। পেছনের দিকে সীটের নিচে কাগজটি উল্টে দেখি বোর্ডিং কার্ড। তাদের হাতে দিতেই নিশ্চিন্ত হলো। কিন্তু এত ঘন্টা পরেও যেটি বারবার মনে আসছে, একটি ধন্যবাদ পর্যন্ত দিলো না পরিবারের কেউ!

শ্রীনগর, জম্মু কাশ্মীরের বিমানবন্দর। আবারো ফ্লাইট বোঝাই হয়ে বিমান আকাশে ডানা মেললো। ১ ঘন্টা ১০ মিনিটের ভ্রমণ। তবে আমার বেশ ক্ষিদে পেয়ে গেলো৷ সামনের মেন্যু ঘেটে সাব স্যান্ডউইচ চোখে পড়লো কম দামের মধ্যে, ২০০ রুপিতে। গোগ্রাসে গিলে খেলাম।

মেঘের ওপর জানালা দিয়ে রোদ আসছে কেবিনে। ৪০ মিনিট পরেই নিচে তাকাতে সবুজ পাহাড়ে ঘেরা ভূমি চোখে পড়লো। পৃথিবীর স্বর্গ, কাশ্মীর। রহস্যময় কাশ্মীর। কেমন যেন শিহরণ কাজ করছে। বইয়ে পড়া, খবরের পাতায় চোখ বুলানো, সিনেমায় দেখা কাশ্মীর, ভালবাসা আর সুন্দরের কাশ্মীর।

শ্রীনগর এয়ারপোর্টে নামতেই প্রতি মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু হায়! মোবাইলের নেটওয়ার্ক শূন্য। আমার স্কুল আর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা দিল্লী থেকে জেট এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে হিসেব মতে এক ঘন্টা লাগেই নেমেছে। অনলাইনেও দেখা যাচ্ছে না। কাশ্মীরে প্রবেশের এন্ট্রি ফরম পূরণ করে এয়াপোর্ট থেকে বের হতেই দেখি জিটু, তাপস আর তুষার দূরে হাঁটছে। এয়ারপোর্টের আশপাশে খুব বেশি স্থাপনা নেই। তাই দূরে পর্যন্ত চোখ যায়। ওদের দেখে দৌঁড়ে গেলাম। এখানে পর্যটকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিও রয়েছে।

একটা ট্যাক্সি খুঁজতে থাকলাম। উদ্দেশ্য ঢাল লেক, স্থানীয়রা বলেন ঢাল ছিল। পাহাড়ের পাড় ঘেঁষে শান্ত লেক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর